প্রায় দুই যুগ পর ফেনীর মহিপালে ফল আড়তদার সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন ঘিরে জমজমাট ভোটের আমেজ বিরাজ করছে মহিপালে। জানা গেছে, আগামী বুধবার (২৩ অক্টোবর) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হবে। এতে ৯ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২০ জন প্রার্থী। আড়তে সাড়ে তিন শতাধিক ব্যবসায়ী থাকলেও ভোটাধিকার রয়েছে ১১০ জনের। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সদস্য নবায়ন না হওয়ায় ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন না অন্য ফল ব্যবসায়ীরা।
অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জেলা সমবায় কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ছাগলনাইয়া উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে প্রধান করে তিন সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন জেলা সমবায় কার্যালয়ের পরিদর্শক রতন চন্দ্র পাল, ফেনী সদর উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক রাজন চন্দ্র পাল।
নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘ ২৫ বছর পর সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা খুবই উৎসাহ নিয়ে নির্বাচন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা বা অভিযোগের খবর পায়নি। আশা করি নির্বাচন উৎসমুখর হবে।
ফল ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন সমিতির নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসলেও সিলেকশনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলের মদদপুষ্ট ব্যক্তিরা কমিটি দখল করে চালাতেন কার্যক্রম। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সকল ব্যবসায়ীর অংশগ্রহণ প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মহিপাল ফল আড়তদার সমবায় সমিতির।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে কয়েকজন ফল ব্যবসায়ীকে নিয়ে গঠন করা হয় ফেনীর মহিপাল ফল আড়তদার সমবায় সমিতি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ ২৫ বছর পার হলেও রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে নির্বাচন ছাড়াই চলছিল সংগঠনটির কার্যক্রম।
নয় পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ২০
নির্বাচন পরিচালনা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে ৯ পদের মধ্যে সভাপতি পদে ২ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ২ জন, সহসভাপতি পদে ২ জন ও সদস্য পদে ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মো.ওমর ফারুক চৌধুরী (চেয়ার) ও মনির আহম্মদ ভূঁঞা (ছাতা)। সাধারণ সম্পাদক পদে শহিদ উল্যাহ (দোয়াত কলম), রহিম উল্ল্যাহ রিপন (আনারস) ও সহসভাপতি পদে সাইদুল ইসলাম শেখ সাহেব (হারিকেন) ও লকিয়ত উল্লাহ ভূঞা লকু (গোলাপ ফুল) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এছাড়া সদস্য পদে আবুল কাশেম (আম), উত্তম কুমার ভৌমিক (কলস), ছালেহ আহমদ ছুট্টু (দেয়াল ঘড়ি), জামাল উদ্দিন (ফুটবল), জিয়া উদ্দিন (কাপ-পিরিচ), দেলোয়ার হোসেন ভূঞা সেলিম (সাইকেল), মো.আমিনুল ইসলাম (মই), মো.ইয়াছিন (গরুর গাড়ী), মাঈন উদ্দিন খোকন (চশমা), মো.ওমর ফারুক (তালা-চাবি), মো. জসিম উদ্দিন বি.এ (মাছ), মো.তাজুল ইসলাম (মোরগ), মো. মাঈন উদ্দিন (আপেল), মোহাম্মদ শাহজাহান (টেলিভিশন) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
প্রচার-প্রচারণায় সরগরম মহিপাল
ফেনীর মহিপাল ফ্লাইওভার থেকে শুরু করে মহিপাল ফল আড়ত ও আশপাশের এলাকায় নির্বাচনী ব্যানার ফেস্টুন দেখে যে কারোরই মনে হতে পারে স্থানীয় সরকার কিংবা জাতীয় নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার অংশ এটি। পুরো ফল আড়ত সেজেছে নির্বাচনি সাজে। প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা করছেন। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। ভোটাররাও নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে করছেন প্রচার-প্রচারণা।
সভাপতি প্রার্থী মনির আহম্মদ ভূঞা বলেন, মহিপাল ফল আড়তদার সমিতি প্রতিষ্ঠার আরও আগে থেকে আমি মহিপালে ফল ব্যবসা করি। এখানে সবসময় সিলেকশনে সমিতির নেতা নির্ধারণ হতো। এবারই প্রথম ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা এ নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা খুবই আনন্দিত। একজন প্রবীণ ব্যবসায়ী হিসেবে আমি প্রার্থী হয়েছি। ব্যবসায়ীদের ভোটে যেই জয়ী হবে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো।
সভাপতি পদে আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ওমর ফারক চৌধুরী বলেন, গত ৫ বছর ধরে সমিতির নির্বাচন নিয়ে সদস্যরা বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নিলেও বাস্তবায়ন হয়নি। এখন আমরা সবাই আগ্রহী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আশা করছি খুবই উৎসবমুখর একটি নির্বাচন হবে।
সম্পাদক পদে প্রার্থী শহিদ উল্যাহ বলেন, আমি দীর্ঘ ২২ বছর ধরে মহিপাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমি সবসময় ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা ও সার্বিক উন্নয়নে কাজ করেছি। মহিপাল ফল আড়ৎদার সমিতির নির্বাচনেও আমি একজন প্রার্থী। যদি নির্বাচিত হই, আড়তদারদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
সম্পাদক পদে আরেক প্রার্থী রহিম উল্ল্যাহ রিপন বলেন, সমিতি গঠনের পর থেকে এখানে কোন নির্বাচন হয়নি। এবার নির্বাচনের আয়োজন হওয়ায় প্রার্থী ভোটার সবাই আনন্দিত। আমি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলে আড়তের সকল ব্যবসায়ীকে সমিতির সাতে সম্পৃক্ত করতে কাজ করবো।
সহসভাপতি প্রার্থী সাইদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এ নির্বাচন। এখানে আমাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো। আরেক প্রার্থী লকিয়ত উল্লাহ বলেন, ভোটে যেই পাশ করুক আমরা সবাই মিলেমিশে কাজ করব।
সদস্য পদে প্রার্থী মাঈন উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের কারণে এখানে সমিতির নির্বাচন হত না। অনেক চেষ্টার পর আমরা একটা নির্বাচনী আমেজ তৈরি করতে পেরেছি। আশা করছি এবার আমাদের সমিতির কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।
আবদুর রহমান নামে এক ভোটার বলেন, আজকে ২২ বছর এখানে ব্যবসা করি। কখনও এমন উৎসবের আমেজ দেখিনি। গত একসপ্তাহ ধরে আমরা খুব আনন্দ করছি।
জাহাঙ্গীর নামে আরেক ভোটার বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্য নেতা নির্বাচন হবে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ করবেন তারা, আমাদের চাওয়া এতটুকু।