ফেনীতে এইচএসসিতে পাসের হার ক্রমেই কমছে। গত ২০২৩ সালের তুলনায় চলতি বছর এইচএসসিতে পাসের হার কমেছে ৩ শতাংশ। এ বছর এইচএসসিতে পাসের হার ৬১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৩৯ জন শিক্ষার্থী। গত বছর এ পরীক্ষায় পাস করেছিল ৬৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩২৭ জন শিক্ষার্থী। এ বছর পাসের হারে কুমিল্লা বোর্ডের ৬টি জেলার মধ্যে পাসের হারে সর্বনিম্নে রয়েছে ফেনী। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল বিবরণী বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে। এইচএসসিতে জেলায় বরাবরের মত শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে ফেনী গালর্স ক্যাডেট কলেজের মেয়েরা। এ বছর এই কলেজ থেকে ৫৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ জিপিএ-৫ পেয়েছে।

অন্যদিকে ফেনীতে আলিম পরীক্ষায় পাসের হার গতবারের তুলনায় প্রায় ১৪ শতাংশ বেড়েছে। এ বছর আলিমে পাস করেছে ৮৯ দশমিক ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। গতবার আলিমে পাস করেছিল ৭৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। গতকাল ঘোষিত ফলাফল বিশ্লেষণে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জেলাপ্রশাসক কার্যালয়ের শিক্ষা শাখা সূত্রে জানা গেছে, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জেলায় ৪২টি কলেজের ১০ হাজার ৯৩৫ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ৬ হাজার ৭৪১ জন, ফেল করেছে ৪ হাজার ১৯৪ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৩৯ জন শিক্ষার্থী। অন্যদিকে আলিমে ১ হাজার ৮৬৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ১ হাজার ৬৬৮ জন। ফেল করেছে ২০১ জন। জিপিএ-৫ এর সংখ্যা ১৬০ জন।

এর আগে ২০২২ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ফেনীতে ৮৩.৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৯৯৮ জন শিক্ষার্থী। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফেনীতে এইচএসসিতে পাসের হার ক্রমেই কমছে।

গতকাল ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, এ বছর জেলায় এইচএসসিতে ১টি প্রতিষ্ঠান এবং আলিমে ৮টি প্রতিষ্ঠানে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। পাসের হারে জেলায় শীর্ষে রয়েছে ফেনী সদর। এ উপজেলায় পাসের হার ৬৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এবার সদরের ১৯টি কলেজ থেকে ৫ হাজার ৭২৬ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩ হাজার ৯৭৩ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৭১ জন।

পাসের হারে জেলায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দাগনভুঞা। এ উপজেলার ৫টি কলেজ থেকে ১ হাজার ৪৩১ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৯৩৬ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৭ জন। পাসের হার ৬৫ দশমিক ৪১ শতাংশ।

পাসের হারে জেলায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ছাগলনাইয়া উপজেলা। এ উপজেলায় পাসের হার ৬৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এ উপজেলার ৬টি কলেজ থেকে ১ হাজার ১৩৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৭৩৬ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯ জন। চতুর্থ স্থানে রয়েছে পরশুরাম উপজেলা। পাসের হার ৪৫ শতাংশ। উপজেলার ৩ টি কলেজ থেকে ৬৮০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩০৬ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ জন। ৫ম স্থানে রয়েছে ফুলগাজী উপজেলা। পাসের হার ৪১ দশমিক ৭১ শতাংশ। উপজেলার ৫টি কলেজ থেকে ৮২০ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩৪২ জন। এ উপজেলার কোনো শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পায়নি।

জেলায় সর্বশেষ অবস্থানে রয়েছে সোনাগাজী উপজেলা। পাসের হার ৩৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। উপজেলার ৪টি কলেজ থেকে ১ হাজার ১৪৫ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ৪৪৮ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ জন।

ফলাফল বিবেচনায় জেলায় সর্বোচ্চ ৩১৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে ফেনী সরকারি কলেজ থেকে। এ কলেজ থেকে ১ হাজার ৪০২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছেন ১ হাজার ২৩৭ জন। পাসের হার শতকরা ৮৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

অন্যদিকে ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজ থেকে ১ হাজার ১৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছেন ৭৮৪ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫২ জন। পাসের হার শতকরা ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মহিপাল সরকারি কলেজ থেকে ৭৩৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছেন ৫২৯ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩১ জন, পাসের হার শতকরা ৭১ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

এদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষায় ফেনী আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে ২৩৬ জন পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৪ জন।



খারাপ ফলাফলের পেছনে কারণ একাধিক


এবারের এইচএসসিতে কুমিল্লা বোর্ডের সবর্নিম্ন পাসের হার ফেনীতে। জিপিএ-৫ বাড়লেও গতবারের চাইতে বেশি শিক্ষার্থী ফেল করেছে এবার। এর কারন হিসেবে ফেনীর ভয়াবহ বন্যা, সরকার পতন আন্দোলনসহ বাকি পরীক্ষাগুলো না হওয়ার কথা বলছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী।

চলতি বছর এইচএসসিতে ৭টি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। সরকার পতন, বন্যাসহ দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ থাকায় শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বাকী বিষয়ে পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে জেএসসি ও এসএসসির সমন্বয়ে এইচএসসির ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যারা জেএসসি-এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে তারা সুবিধাজনকভাবে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এক্ষেত্রে ৭টি বিষয়ের মধ্যে যারা খারাপ করেছিল তারাই অকৃতকার্য হয়েছে। এতে জিপিএ-৫ বাড়লেও পাসের হার কমে গেছে।

এ বিষয়ে ফেনী সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর এনামুল হক খোন্দকার বলেন, এ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বেসিক অনেক দুর্বল। তারা করোনাকালীন সময়ে ক্লাস থেকে বঞ্চিত হয়েছে এবং অল্প সিলেবাসে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। পড়ালেখায় দুর্বলতা থাকার কারণে এইচএসসিতে প্রভাব পড়েছে। তবে যারা এসএসসিতে ভালো করেছে তারা সুফল পেয়েছে। যার কারনে পাসের হার কমলেও জিপিএ-৫ বেড়েছে।

তিনি বলেন, বন্যা সরকার পতনসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এ ফলাফল বিপর্যয়ের পেছনে প্রভাব পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী ভালো করতে না পারার এটিও একটা কারণ হতে পারে।

শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে অনেক চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তাদের পথচলা কঠিন হতে পারে। যার জন্য তাদের নিজেদের আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করতে হবে।

আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, অনেক শিক্ষার্থী ফেল করেছে। জিপিএ-৫ বেশি দিয়ে কি হবে যদি পাস না করে। দেশের নানা পরিস্থিতি আমাদের মানসিকভাবে পিছিয়ে দিয়েছে। যার কারণে আমরা ভালো করতে পারিনি।

নয়ন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি সামান্যের জন্য জিপিএ-৫ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। ফেনীর বন্যার আগে একদফা বন্যা হয় ফুলগাজী-পরশুরামে। সেদিন জেলার সবাই পরীক্ষা দিলেও আমরা বাংলা ২য় পরীক্ষা দিতে পারিনি। এ কারণে আমাদের ফলাফল খারাপ হয়েছে। অন্য বিষয়ে পরীক্ষাগুলো হলে ভালো হত, প্রস্তুতি ভালো ছিল। কিন্তু সে সুযোগটা পেলাম না।

আরবিল নামে আরেকজন বলেন, জেএসসি-এসএসসিতে অনেকের ফলাফল খারাপ থাকতে পারে। তবে অনেকেই উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু আগে ফলাফল খারাপ হওয়াতে এখনও খারাপ আসছে৷ অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভেঙেছে। আমরা বাকি পরীক্ষাগুলো দিতে চেয়েছিলাম কিন্ত একটা পক্ষ আন্দোলন করে পরীক্ষাগুলো নিতে দেয়নি। যার ফল এখন আমরা ভোগ করছি।



বন্যায় পিছিয়ে গেল ফুলগাজী
মোর্শেদ, ফুলগাজী থেকে


ফুলগাজী উপজেলার এইচএসসিতে খারাপ ফলাফলের কারণ হিসেবে বন্যা পরিস্থিতিকে দায়ী করছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। একাধিক কলেজ শিক্ষক ও অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বন্যার কারণে লেখাপড়া বিঘ্নিত হয়েছে। শিক্ষকরাও বলছেন, বন্যাসহ সার্বিক কারণে এবারের ফলাফল আশানুরূপ হয় নি।

গতকাল মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) কুমিল্লা বোর্ডে এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফল হতে জানা যায়, ফুলগাজী উপজেলায় ৫ টি কলেজ হতে ৮২২ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উর্ত্তীর্ণ হয়েছে ২৯৯ জন। পাসের হার ৩৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, ১১০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উর্ত্তীর্ণ হয়েছে ৯৪ জন পাসের হার ৮৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ফুলগাজী উপজেলার ৫টি কলেজের মধ্যে কেউ জিপিএ-৫ না পেলেও উপজেলার ৩টি মাদ্রাসায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৮জন শিক্ষার্থী।
ফলাফলে দেখা গেছে, ফুলগাজী মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি (বিএম) পরীক্ষায় ৭০ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে শতভাগ উর্ত্তীর্ণ হয়েছে। তবে জিপিএ-৫ কেই পায়নি। ফুলগাজী মহিলা কলেজের ২৪৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১২৩ জন পাস করেছেন। পাসের হার ৫০ শতাংশ।

উপজেলার জিএমহাট হাজী মনির আহম্মদ কলেজের ১৪৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছেন ২৭ জন। পাসের হার১৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। হাসানপুর শাহ্আলম চৌধুরী স্কুল এন্ড কলেজের ৬৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছেন ২৯জন। পাসের হার৪৬ দশমিক ০৩ শতাংশ। মুন্সীরহাট আলী আজম স্কুল এন্ড কলেজের ৫৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছেন মাত্র ৮ জন। পাসের হার১৫ দশমিক ০৯ শতাংশ। ফুলগাজী সরকারি কলেজের ৩১২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছেন ১১২ জন। পাসের হার৩৫দশমিক ৯০ শতাংশ।

এদিকে মাদ্রাসা বোর্ডের আওতাধীন ফুলগাজীর মুন্সীরহাট ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসায় ৬৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৬০ জন। পাসের হারশতকরা ৮৮দশমিক ২৪ শতাংশ। তন্মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ জন। দক্ষিণ শ্রীপুর ইস্কান্দারিয়া সুন্নিয়া আলিম মাদ্রাসায় ২২ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করেছে ১৪ জন। পাসের হার৬৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে কেবল একজন।

হাসানপুর আলিম মাদ্রাসা থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে শতভাগ পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে একজন।

ফুলগাজী সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আঁখিনূর বেগম সাথী বলেন, পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অনেকে বাংলায় ফেল করেছে। ফুলগাজীতে বাংলা ২য় পত্রের পরীক্ষা হয়নি। এ বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকৈ বোর্ডকে জানানো হয়েছে।

 


এবারও জেলায় শীর্ষে ক্যাডেট কলেজের মেয়েরা
বরবারের মত এইচএসসিতে জেলায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে ফেনী গালর্স ক্যাডেট কলেজের মেয়েরা। চলতি বছর এ কলেজ থেকে ৫৫ জন পরীক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই জিপিএ-৫ পেয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) কলেজের অধ্যক্ষ গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ নাজমুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ অন্যান্য বছরের মতো এবারও সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছে। সেনা সদস্যদের দিকনির্দেশনা, প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের আন্তরিক পাঠদান, বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফল প্রদান এবং সুশৃঙ্খল পরিবেশ এ ফলাফল অর্জনে ভূমিকা রেখেছে। এজন্য পরীক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও কলেজের প্রত্যেক সদস্যকে অভিবাদন জানাই। এদিকে এমন ধারাবাহিক ফলাফলে আনন্দিত শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। তিনি জানান, গত বছরও এ কলেজ থেকে ৫৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ জিপিএ-৫ পেয়েছিল।


সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাসের হার বেশি
ফেনী জেলায় সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাদের কৃতিত্বের মধ্য দিয়ে একাধিক সাফল্য অর্জন করেছে। পাসের হারের ভিত্তিতে ফেনী জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাসের হার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনা বেশি।

ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, পাসের হারে জেলায় সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ফেনী সরকারি কলেজ। এ বছর ৮৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ পাসের হার নিয়ে শীর্ষে রয়েছে এ কলেজ। অন্যদিকে ৮৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ পাসের হার নিয়ে গ্রীনল্যান্ড কলেজ, ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ পাসের হার নিয়ে সরকারি জিয়া মহিলা কলেজ তৃতীয়, ৭৬ দশমিক ৯২ শতাংশ পাসের হারনিয়ে মহিলা কলেজ ফেনী চতুর্থ স্থানে রয়েছে।

অন্যদিকে জয়নাল হাজারী কলেজে ৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, সরকারি মহিপাল কলেজে ৭১ দশমিক ৭৮ শতাংশ, সাউথ ইস্ট কলেজ ৭১ দশমিক ৩৮ শতাংশ, ভিক্টোরিয়া কলেজে ৬০ দশমিক ২৮ শতাংশ, মডেল কলেজে ৫০ দশমিক ৭২ শতাংশ, নোবেল কলেজ ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।

এছাড়া সিটি কলেজে ৪০ দশমিক ৯৮ শতাংশ, জাতীয় কলেজ ৩৮ দশমিক শতাংশ, বীকন মডেল কলেজ ৩৫ দশমিক ০৬ শতাংশ, রামপুর নাসির মেমোরিয়াল কলেজ ৩৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, শাহীন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ফেনী ৩১ দশমিক ৩৩শতাংশ এবং পাচঁগাছিয়া এ জেড খান মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ৩০ দশমিক ৪৩ শতাংশ পাসের হার অর্জন করেছে। পাসের হারে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে এশিয়ান কলেজ ফেনী। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাসের হার মাত্র ২৫ দশমিক ২০ শতাংশ।


যে প্রতিষ্ঠানে পাস করেনি কেউ
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ফেনীর বেগম সামছুন্নাহার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের কেউই পাস করেনি। এ প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৮ সালে ফেনী সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের লস্করহাট এলাকায় বেগম সামছুন্নাহার গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তী ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে উচ্চ মাধ্যমিকের কার্যক্রম শুরু হয়।

ফলাফল বিপর্যয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেগম সামছুন্নাহার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের এমরানুল হক বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে এবার চারজন পরীক্ষার্থী ছিল। তাদের মধ্যে একজন অনিয়মিত। প্রতিষ্ঠানের ফলাফল বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ এখানে সাধারণত দুর্বল শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়। এছাড়া দীর্ঘদিন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে খারাপ করেছে।কলেজে চলতি শিক্ষাবর্ষে ২১ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফী উল্লাহ বলেন, এমন ফলাফলের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।