আট বছর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ছাগলনাইয়ার ঘোপালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় করা মামলার ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন ছাগলনাইয়া বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তাদের দাবি, এ ইস্যুতে থানায় মামলা করার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বিএনপি কিংবা জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

বিএনপি’র স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দলীয় কোন নির্দেশনা ছাড়াই মামলার বাদি উপজেলা বিএনপির সাবেক অর্থ সম্পাদক সুলতান মোঃ সিকান্দর ভুট্টো নিজের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য এ মামলা করেছেন। তারা আরও অভিযোগ করেন, মামলায় ঘটনায় জড়িতদের আসামি না করে বরং বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকেও আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ।

এ বিষয়ে ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুর আহাম্মদ মজুমদার ও সদস্য সচিব মোঃ আলমগীর বিএ’র সাথে কথা হলে তারা জানান, দলীয় কোন নির্দেশনা ছাড়া অন্য কারও এ মামলা করার এখতিয়ার কারও নেই। প্রতিহিংসার কারণে করা এ মামলায় বিএনপি-জামায়াতের লোককে আসামি করা হয়েছে। এর পেছনে বালু মহাল দখলসহ বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিতে বললে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এ মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য মশিউর রহমান মজুমদার খোকন দৈনিক ফেনীকে বলেন, দলের সুনাম নষ্ট করতে ও একটি চক্রের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সুলতান মোঃ সিকান্দর ভুট্টো মামলাটি করেছেন। তাকে এই মামলা করতে কেন্দ্রীয় বা জেলা বিএনপি হতে কোন নির্দেশ দেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, মামলায় ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর, পরশুরাম, সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন স্থানে থাকা নিরাপরাধ ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। মামলায় নামোল্লিখিত আসামিদের অনেকেই বিএনপি-জামায়াত সমর্থক।

বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী সরকারের পতনের পর উপজেলায় চাঁদাবাজি ও দখল বাণিজ্যে বাধা দেওয়ায় বিএনপি জামায়াতের নেতা-কর্মীদের এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। গাড়ি বহরে হামলায় জড়িত স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের আসামি করা হয়নি। ভুট্টো ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে সুলতান মোঃ সিকান্দর ভুট্টোর মুঠোফোনে গত দুইদিন ধরে একাধিকবার যোগাযোগ করে বন্ধ পাওয়া গেছে। তার নিকটতম ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করেও তার কোন খোঁজ মেলেনি।

মামলার আসামির মধ্যে রয়েছেন বিএনপি সমর্থক রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আবুল হাশেম, জয়পুর সরোজিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মহিবুল ইসলাম মামুন ও তার ভাই সাবেক বিএনপি নেতা মাঈনুল ইসলাম ভূঁইয়া মিনার, নিজকুঞ্জরা ওয়ার্ড জামায়াতের সেক্রেটারী নুরুল হক ভূঁঞা, ফরহাদনগর ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন ও ফরহাদনগর জামায়াত কর্মী সহিদুল ইসলাম সুজন ও জামশেদুল হুমায়ুন নামে একজন চাকুরীজীবি। এ ব্যাপারে তারা দৈনিক ফেনীকে জানান, আমরা যারা বিএনপি-জামায়াত সমর্থন করি ও আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেওয়ায় বাকশালি আওয়ামী সরকারের আমলে কারাবরণ করেছি তারা এ মামলার আসামি হয়েছি। যারা মিথ্যা মামলা করে নিরাপরাধ ব্যক্তিদের ফাঁসিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় সাংগঠনিক নিতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর ছাগলনাইয়ার ঘোপাল ইউনিয়নের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ী বহরে হামলার ঘটনায় সুলতান মোঃ সিকান্দর ভুট্টো বাদি হয়ে গত ৯ অক্টোবর এ মামলা করেন। মামলায় ২৫১ জনের নামোল্লেখে ও ২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

মামলার আসামিদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির সদস্য ও নাসিম চৌধুরীর ছোট ভাই জালাল উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী পাপ্পু, ফেনী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার মজুমদার তপন,পশুরাম উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার, পৌরসভার সাবেক মেয়র নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সজল, ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের সাবেক দুই চেয়ারম্যান হারুন মজুমদার, আবদুল আলিম, ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, পৌরসভার সাবেক মেয়র এম মোস্তফা, ঘোপাল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সেলিম, রাধানগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মজুমদার, মহামায়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহাজাহান মিনু, সাবেক চেয়ারম্যান ও মহামায়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গরীব শাহ হোসেন বাদশা চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বুলবুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম ফারুক, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোরশেদ আলম ও সাধারণ সম্পাদক মির্জা ইমাম হোসেন নাম রয়েছে।