নিত্যপণ্যের ক্রম উচ্চমূল্য ভোক্তার দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। আয় এবং ব্যয়ে অসামঞ্জস্য পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ক্রেতা। অভিযোগ রয়েছে, বাজার তদারকিতে সরকারি বিভাগগুলোর নিয়মিত অভিযান নেই। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের অতিরিক্ত দাম বাড়িয়ে ভোক্তার ওপর চেপে বসেছে।
৫ আগস্টের পর দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং স্মরণকালের ভয়াবহ ফেনীর বন্যায় বাজার তদারকি কার্যক্রমে প্রভাব পড়েছে। ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যানুযায়ী আগস্ট মাস থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ১০ দিন অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এরমধ্যে আগস্ট মাসে শুধুমাত্র একদিন অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেদিন ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে সেপ্টেম্বর মাসে ভোক্তা অধিকার আইনে ৯টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
আগস্টে অভিযানের সংখ্যা কম হলেও সেপ্টেম্বরে অভিযান বেড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে বর্তমানে অস্থিতিশীল কাঁচামালের বাজার। বাজার ঘুরে দেখা গেছে বিগত এক সপ্তাহে প্রতিটি সবজি দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দাবি উত্তরবঙ্গে বন্যার কারণে সরবরাহ কমে গেছে। তাই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে, শুরু হচ্ছে বিশেষ টাস্ক ফোর্সের অভিযান।
ফেনী পৌর হকার্স মার্কেট ও বড় বাজার ঘুরে দেখা গেছে শসা কেজিপ্রতি দাম বর্তমানে ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে যা আগে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা। করলা বর্তমানে ১০০ টাকা বিক্রি হলেও আগে ছিল ৭০ টাকা। যথাক্রমে বেগুন ১২০ টাকা আগে ছিল ৫০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা, আগে ছিল ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ বর্তমানে ৩২০ টাকা আগে ১৯০ টাকা, বরবটি বর্তমানে ১২০ টাকা আগে ছিল ৬০ টাকা, ঢেড়স বর্তমানে ১০০ টাকা আগে ছিল ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৮০ টাকা আগে ছিল ৪০ টাকা, চাল কুমড়া কেজি ৬০ টাকা আগে ছিল ৪০ টাকা, পটল কেজি ৮০ টাকা আগে ৫০ টাকা, কাঁকরোল প্রতি কেজি ১২০ টাকা বিক্রি হলেও আগে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
পৌর হর্কাস মার্কেটের ওসমান গণি নামের এক তরকারি ব্যবসায়ী বলেন, ফেনীতে তেমন কোনো কাঁচামাল উৎপাদন করা হয় না। সব আসে উত্তরবঙ্গ থেকে। সেখানে বর্তমানে বন্যা হওয়ায় পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। মাল পেতেও অনেক কষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া পরিবহন খরচও বেড়েছে দ্বিগুণ তাই দামটা এখন বাড়তি।
জাহাঙ্গীর আলম নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ফেনীতে এখন তরকারির সরবরাহ কম।
মুশফিক আহমেদ নামে এক ক্রেতা জানান, সকল সবজির দাম বেশি। বিগত ১ সপ্তাহ আগেও যেটা ৩০ টাকা ছিল এখন সেটি ৮০ টাকা। যে সবজিতে হাত দিবেন সেটিই ৮০ টাকার উপরে। ভরা মৌসুমে এমন দাম মানা যায় না। তারা বন্যার কথা বলে তবে বন্যার প্রভাব না পড়লেও তারা সুযোগ পেলেই দাম বাড়িয়ে দেয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ফেনীর সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোঃ কাওছার মিয়া জানান, এখনকার প্রেক্ষাপটের পাশাপাশি যোগ হয়েছে বন্যা। একমাস আগে ফেনীসহ ১১ টি জেলায় বন্যা হলো, এরপর এখন আবার উত্তরবঙ্গে বন্যা। যেখানে সবজির আবাদ সবচাইতে বেশি। বন্যার কারণে উৎপাদন কমে গেছে তবে চাহিদা আগের মতোই আছে ফলে দাম কিছুটা বাড়তি। এক্ষেত্রে অভিযানের কোন প্রভাব পড়েনি বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, আগস্টে কিছুটা কম হলেও সেপ্টেম্বরে অনেকগুলো অভিযান পরিচালিত হয়েছে। কখনো কখনো ভোক্তা অধিকার অভিযান না করলে জেলা প্রশাসন করেছে। তবে মাঠ পর্যায় নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারিত হওয়া জরুরি।
তিনি বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর মাঠ পর্যায়ে একজন কৃষকের সবজির কেজি প্রতি কত খরচ হয় এবং সে অনুয়ায়ী একটা ধারণা দিয়ে দিলে মধ্যস্ততাকারী বেশি সুযোগ নিতে পারবে না। ভোক্তা অধিকার ও জেলা প্রশাসন বাজার পর্যবেক্ষণ করে কিন্তু কৃষক পর্যায় থেকে দামটি নির্ধারিত থাকলে বাজার মনিটরিং এবং অভিযানের ভালো সুফল পাওয়া যাবে।
ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার জানান, বাজার তদারকির জন্য জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাজার কর্মকর্তারা নিয়মিত কাজ করছে। তবে মন্ত্রণালয় থেকে বাজার মনিটরিং করার জন্য বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করে দেয়া হয়েছে। তারা আজ থেকে মাঠে কাজ করবে। তাদের কিছু কর্মপরিধি ঠিক করে দেওয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী বাজার পরিস্থিতি তদারকি করবে।