সরকারিভাবে ২১ হাজার ৫৫০ টাকা বেতন পাওয়ার কথা থাকলেও অর্ধেকের চেয়েও কম বেতনে চাকরি করছেন ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আউটসোর্সিং (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) কর্মচারীরা। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের অভিযোগ, গত দুই বছর ধরে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতনের বড় একটা অংশ লুটেপুটে খেয়েছেন ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত শরীফ উল্যাহ। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তথ্যমতে, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ৫৩ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ দিত শর্শদী ইউপি চেয়ারম্যান জানে আলম ভুঞার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আলম ব্রাদার্স। এরপর ২০২২ সালের জুলাই থেকে দায়িত্ব নেন শরীফ উল্ল্যাহ।

গতকাল রোববার (৬ আগস্ট) সকালে তিন মাসের বকেয়া বেতন ও চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ের কর্মচারীরা। হাসপাতালের কাজ বন্ধ রেখে হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মবিরতি পালন করেন প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মচারী। দাবি না মেনে নিলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দেন তারা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন কর্মচারীর বেতন পাওয়ার কথা ২১ হাজার ৫৫০ টাকা। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা বেতন পাচ্ছেন ৮ হাজার টাকা। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বলছেন, রোস্টারভিত্তিক ১২ ঘন্টার বেশি কাজ করলেও শুধুমাত্র ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আওতায় কাজ করার কারণে বেতনের অর্ধেক টাকাও পান না তাঁরা। বেতনের বিষয়ে কথা তুললেই চাকরি হারানোর ভয় থাকে। তাই প্রতিবাদ করতেও পারেন না তারা।

গতকাল হাসাপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন তারা। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকারিভাবে ২১ হাজার ৫৫০ টাকা বেতন বরাদ্দ হলেও ঠিকাদারি তাদের বেতন দিতেন ৮ হাজার টাকা। তাও গত ৩ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালের চাহিদা পূরণের জন্য আরও ২৯ জন আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হলেও তাদের কাউকেই বেতন-ভাতা দেন না ঠিকাদার। রোগীদের স্বজন থেকে ১০/২০ টাকা চেয়ে নিয়ে কোনরকমে পেট চালাচ্ছেন তারা। তাদের অভিযোগ, অভাবের সুযোগ নিয়ে আউটসোর্সিং কর্মচারীদের অল্প-স্বল্প বেতন দিয়ে সরকারের বরাদ্দের অর্ধেকরও বেশি টাকা নিজেদের পকেটে ভরেন ঠিকাদার।

ঝর্ণা রক্ষিত নামে এক পরিচ্ছন্নতা কর্মী বলেন, ২০০২ সালে মাত্র আড়াই হাজার টাকা বেতনে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ঝাড়ুদারের কাজ শুরু করি। প্রায় ২২ বছর কাজ করে গেলেও চাকুরি স্থায়ী করা হয়নি। অথচ আমাদের দেখিয়ে সরকারের কাছ থেকে ঠিকই শরীফ উল্যাহ (ঠিকাদার) ২১ হাজার টাকা বেতন নিয়ে আমাদের দিতেন ৮ হাজার টাকা। তাও গত ৪ মাস ধরে বেতন পাই না। আজ নয় কাল করে আমাদের মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তাই বাধ্য হয়ে আমার কর্মবিরতি দিয়েছি।

পরে শরীফ উল্যাহ এসে ৮ হাজার টাকা করলেও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগ থেকে আমাদের বেতন বন্ধ রেখেছে। চাকুরী সরকারি করা হবে বলে দীর্ঘ এক যুগ পার হয়ে গেছে। আমার পরিশ্রম করি, আর টাকা খায় ঠিকাদাররা।

বিবি কুলসুম আরেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, আমার একটা ছেলে মাদরাসায় পড়ে। গত ৩ মাস বেতন পাই না। তার মাদরাসার খরচও দিতে পারছি না।

রুবি আক্তার নামের এক পরিচ্ছন্নতা কর্মী কেঁদে বলেন, যে হাতে ভাত খাই, সে হাতে মানুষের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করি। এরপরও ন্যায্য বেতন পাই না। আমাদের এত কষ্টের টাকা পকেটে ঢুকাতে ঠিকাদারের বিবেকে বাধে না।

শিল্পী আক্তার নামে আরেকজন বলেন, একবার কাজ শুরু কর পরে কাগজপত্র করে দিব বলে আমাকে আশ^াস দিয়েছিলেন ঠিকাদার শরীফ উল্লাহ। গত দুই বছর কাজ করলেও আমাকে কোন বেতন ভাতা দেওয়া হয়নি। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ঘন্টা ডিউটি করি। কোন বেতন পাইনা। মানুষজন থেকে ১০-২০ টাকা চেয়ে কোনরকম বেঁচে আছি।

হাসপাতালের মর্গে দায়িত্বরত আবদুর রহিম বলেন, গত ত্রিশ বছর ধরে চাকরি স্থায়ীকরণের গল্প শুনেছি। বাস্তবে এর কোন পদক্ষেপ দেখিনি। ৫৩ জন মানুষের অক্লান্ত শ্রমে হাসপাতাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে, অথচ তাদের পেটে ভাত নেই। তাদের সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার পথে। আমরা অতিদ্রুত এর একটা সমাধান চাই। আমরা আমাদের বকেয়া বেতন ও চাকুরি স্থায়ী করতে হবে।

এসব বিষয়ে কথা চাইলে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. আবুল খায়ের মিয়াজি বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল বলেন, হাসপাতালের আউটসোর্সিং কর্মচারীরা গত জুলাই মাস থেকে তাদের বেতন পাচ্ছেন না। আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তাদের বেতনের ব্যাপারে সকল কাগজপত্র পাঠিয়েছি। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে কর্তৃপক্ষ।

লিডের ছবি ক্যাপশান:
বেতনের দাবিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কর্মবিরতি। ইনসেটে ঠিকাদার শরীফ উল্যাহ


আমার এলাকার প্রতিপক্ষ বাদীকে ভুল বুঝিয়ে আমাকে এই মামলার আসামি করেছে। এই বিষয়ে আমি জেলা এবং উপজেলার বিএনপি নেতৃবৃন্দদের জানিয়েছি।

উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক খুরশিদ আলম ভূঞা জানান, সাইফুল বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে। ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় চলমান মামলাগুলোতে কোন নিরপরাধ ব্যক্তি যেন আসামি না হয় আমরা সেই দাবি জানাই।

সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমিন উদ্দিন দোলন জানান, সাইফুল ও তার বাবা বেলায়েত হোসেন দীর্ঘদিন থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। বিএনপি করতে গিয়ে তাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পারিবারিক ঝামেলাকে কেন্দ্র করে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে সাইফুলকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। বিএনপির দুঃসময়ে সাইফুলদের পরিবারের আশ্রয় পেয়েছি।