সাম্প্রতিক বন্যা ও ত্রাণ কার্যক্রমের ফলে ফেনীতে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বেড়েছে। এসব প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণে সঠিক কোন ব্যবস্থা না থাকায় ফেনীতে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দিনব্যাপী প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ফেনীর যুব স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় বাংলাদেশ সাসটেইনেবিলিটি অ্যালায়েন্স (বিএসএ), ব্র্যাক ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে কর্মশালা, প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ এবং দিনব্যাপী মেডিক্যাল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। “প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় যুবসমাজের করণীয়” শীর্ষক কর্মশালায় পরিবেশ সংরক্ষণে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা এবং যুবসমাজের করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করেন বক্তারা।

এতে অংশ নেন বাংলাদেশ সাসটেইনেবিলিটি অ্যালায়েন্স (বিএসএ) এর প্রধান সমন্বয়ক সংকলিতা সোম, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ আনোয়ার ইকবাল, ব্র্যাক লারনিং এন্ড লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট, ব্র্যাক ইয়ুথ প্লাটফর্ম, এবং ব্র্যাক হেলথ প্রোগ্রামের এর প্রতিনিধি দল, দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিনিধিরা এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের সদস্যরা।

বিএসএ’র প্রধান সমন্বয়ক সংকলিতা সোম বক্তব্যে বলেন, ফেনীতে এই কর্মসূচি সাম্প্রতিক বন্যার পর শুধুমাত্র পরিবেশ পুনরুদ্ধার ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে করতে সাহায্য করবে না বরং পরিবেশগত পরিবর্তনের জন্য তরুণদের সম্মিলিত শক্তির প্রতীক হিসেবে কাজ করবে।

এ বিষয়ে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ আনোয়ার ইকবাল বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য আমাদের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি। এগুলো মাটির ও পানির গুণগত মান নষ্ট করে, জলাবদ্ধতা তৈরি করে এবং প্রাণী ও মানুষের স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই সংকট সমাধানে আমাদের সক্রিয় উদ্যোগ নিতে হবে। প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতনতা ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। সবুজ ও টেকসই বাংলাদেশ গঠনে আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

স্বেচ্ছাসেবক এস জেড অপু বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায় ফেনী মানুষ উপলব্ধি করতে পেরেছে প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণের এ ধরনের উদ্যোগ ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ফেনীসহ পুরো বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

ন্যাশনাল চিলড্রেন’স টাস্ক ফোর্স এনসিটিএফ ফেনীর স্বেচ্ছাসেবক মোস্তাফিজুর রহমান মুরাদ বলেন, টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতি সরকারিভাবেই প্রণয়ন করা প্রয়োজন। প্লাস্টিকজাত পণ্য ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি যেখানে সেখানে বর্জ্য না ফেলার সচেতনতা তৈরী করা প্রয়োজন। তরুণরা সবসময় অগ্রগামী হয়ে সবকিছুতে ভূমিকা রাখে, প্লাস্টিক নিষিদ্ধকরণে তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগাতে পারলে তবেই পরিবেশ দূষণ থেকে দেশ রক্ষা পাবে।

এছাড়া কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফেনীতে বন্যার্তদের জন্য দিনব্যাপী ফ্রী মেডিক্যাল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। ক্যাম্পে সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা, চিকিৎসকদের পরামর্শ এবং প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া একই কর্মসূচিতে ফেনীর দেওয়ানগঞ্জ থেকে লালপোল পর্যন্ত সড়কে পড়ে থাকা প্লাস্ট্রিক দ্রব্য পরিষ্কার করে স্বেচ্ছাসেবকরা।

দিনব্যাপী এই কর্মসূচি জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ফেনীর পরিবেশ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে এবং টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণকে আরও সহজ করবে বলছেন আয়োজকরা।


প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ করল স্বেচ্ছাসেবকরা
বাংলাদেশ সাসটেইনেবিলিটি অ্যালায়েন্স (বিএসএ), ব্র্যাক ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে ফেনী শহরের উত্তরের দেওয়ানগঞ্জ থেকে লালপোল পর্যন্ত রাস্তায় পড়ে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ করেছে স্বেচ্ছাসেবকরা।

আয়োজকরা জানান, গতকাল সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে চারটি দলে ভাগ হয়ে ফেনীর ২৫টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করে। এসময় তারা প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য অপসারণ ও এসব পণ্যের ব্যবহার কমাতে প্রচারণা চালায়। উপস্থিত স্বেচ্ছাসেবকরা ও জনসাধারণ এ কাজের প্রশংসা করে নিয়মিত পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দাবি জানান।

নূর করিম মুন্না নামে আরেকজন বলেন, শুধুমাত্র উদ্ভিদ বা জলজ প্রাণী নয়, মানুষ প্লাস্টিক দূষণের কারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুতরাং আমাদের উচিত এই প্লাস্টিক দূষণের হাত থেকে পরিবেশকে রক্ষা করা ও এ নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করা।