অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন, জলবায়ু ও পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নদী ভাঙনের বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নদী ভাঙন রোধে করণীয় বিষয়ে স্থানীয়দের মতামত প্রাধান্য দিয়ে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি। রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) ফেনীতে সাম্প্রতিক বন্যায় ভাঙন ও করণীয় বিষয়ে গণশুনানী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তিনি।

ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত গণশুনানীতে জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল হাসান। উপস্থিত ছিলেন পানি সম্পদ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা।

গণশুনানিতে সাংবাদিক, রাজনীতি, এনজিও ও ছাত্র প্রতিনিধিরা বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ভাঙন রোধে নদী খনন, মুছাপুর রেগুলেটর নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ সংস্কার, অবৈধ বালু উত্তোলন, নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, খাল দখলমুক্ত করণে নানা সুপারিশ তুলে ধরেন।

সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমি জানি আপনারা অনিরাপত্তায় ভুগছেন, আপনার মনে করছেন এ এলাকার নদী ব্যবস্থাপনা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ আগের অবস্থায় হয়তো যাওয়া যাচ্ছে না। এই এলাকা নিয়ে বড় ধরনের পরিকল্পনা করতে হবে। যেহেতু এখানে দেশীয় সমস্যা আছে আন্তর্জাতিক সমস্যাও আছে। এ গণশুনানিতে যত সুপারিশ পেলাম সেগুলো নিয়ে খুব শীঘ্রই জুম মিটিং করা হবে, সেখানে স্থানীয় জনগণের প্রতিনিধিরাও থাকবেন।

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে তিনি বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা করার আগে উজানের দেশ (ভারত) থেকে আমাদের তিনটি বিষয় নিশ্চিতভাবে জানতে হবে- একটি বৃষ্টিপাত, অভিন্ন নদীতে কত রকম স্থাপনা বা অবকাঠামো করেছে এবং সেখান থেকে পানি ছাড়ার বিষয়টি। দুইটা দেশের মধ্যে মানবিক সম্পর্ক প্রদর্শন জরুরী। বিশেষ করে ভারত পানি ছাড়ার আগে আমাদের জানালে আমরা আগাম প্রস্তুতি নিতে পারি। এ বিষয়গুলো আমাদের পক্ষ থেকে তাদের কাছে জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে। আপনাদের পক্ষে সকল প্রশ্নের জবাব তাদের কাছে চাওয়া হবে এবং আমরা একটি সমঝোতা চাইবো।

নদী ভাঙন রোধের বিষয়ে তিনি বলেন, দুটো মৌসুমের পানির প্রবাহ দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে। মুছাপুর রেগুলটর যেহেতু ভেঙে গেছে সেখানে আর রেগুলেটর করা যাবে না। আমরা অন্যত্র রেগুলেটর করার বিষয়ে ভাবছি। স্থানীয় পানি সম্পদ কর্মকর্তাদের ভাঙন রোধে কি করা যায় সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেন তিনি। এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের সহযোগিতা চান তিনি।

ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলার বিষয়ে পানিসম্পদক উপদেষ্টা বলেন, ভারতের সাথে যেহেতু এটি একটি আন্ত: সীমান্ত নদী, সেইখানে উজানের দেশের সাথে আমরা কিভাবে কথা বলব সেই বিষয়টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। আমাদের রাগের এবং ক্ষোভের যথেষ্ট পরিমাণ কারণ আছে। সেজন্যই নিজের কাজগুলো আগে শেষ করতে হবে। আমরা ভারতকে চিঠি লিখব আমাদের ক্ষতি সম্পর্কে এবং ক্ষতি এড়ানোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে। এ জন্যই আমরা আমাদের ক্ষতিগুলো চুড়ান্তভাবে জানছি।

আমাদের মাথায় রাখতে হবে নদীর পানি কেবলমাত্র রাজনীতি না, এটি কূটনীতি, অর্থনীতিও। এজন্য আমাদের মানুষের কথা, দুর্ভোগ ও প্রত্যাশা বুঝতে, সেই অনুযায়ী উজানের দেশের সঙ্গে কথা বলতে হবে।