ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনে খাদ্য নিরাপত্তা, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন, চিকিৎসা, নগদ অর্থসহ অন্যান্য সহযোগিতা, মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া টেকসই বাঁধ নির্মাণ, উপকূলীয় অঞ্চলে ভাঙন রোধে মুছাপুর ক্লোজার পুনঃনির্মাণ, নদী শাসন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া পুনর্বাসন কার্যক্রমে কৃষকদের প্রাধান্য দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা অনুসরণ করে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয়, সুষম বন্টন নিশ্চিতকরণ, কৃষি প্রণোদনার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য পদক্ষেপ, সহজ শর্তে কৃষি ঋণ নিশ্চিত করা, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের সহায়তায় কার্যক্রম গ্রহণ, দুর্গত মানুষের সহায়তায় স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণ এবং ভষিষ্যতে বন্যার প্রকোপ থেকে এ জনপদের জানমাল রক্ষায় বিভিন্ন প্রস্তাবনা ও পরামর্শ দিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
গতকাল শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে সদর উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে ‘ফেনীর বন্যা: পুনর্বাসন ও করণীয়’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপের আয়েজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিজিডি)। সিজিডির নির্বাহী পরিচালক সাইদুল ইসলামের পরিচালনায় আয়োজিত নাগরিক সংলাপ ও মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সিজিডির চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ জি এম নিয়াজ উদ্দিন।
বক্তব্যে ফেনীর পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সাজাতে হবে। এসব কাজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে। ত্রাণ কার্যক্রমে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবক, ছাত্র প্রতিনিধিসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ সবসময় সজাগ থাকবে।
সভায় ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, এবারের বন্যায় প্রায় সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়ারও কোন সুযোগ ছিলো না। এ ক্ষতির ধরন একস্থানে একেকরকম। সরকারের সঙ্গে বেসরকারিভাবেও সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। সকলের সহযোগিতা নিয়ে ফেনীবাসী খুব তাড়াতাড়ি ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশাবাদী।
জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আ.ন.ম আবদুর রহীম বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের পুনর্বাসন ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন। প্রয়োজনে পুনর্বাসনের অর্থ থেকে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা যেতে পারে। এ কাজে নদী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এসে পরিকল্পনা করতে হবে। বসতবাড়ি, অবকাঠামো, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও ফসল-ফলাদিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পুনর্বাসনে কাজ করতে হবে। বন্যায় যে অব্যবস্থাপনা ছিল পুনর্বাসন কার্যক্রমে যেন এমনটি না হয়। সরকারি বরাদ্দের যেন কোনোভাবে অপব্যবহার না হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে।
বক্তব্যে প্রবীণ সাংবাদিক আবু তাহের ভূঞা বলেন, এ বন্যা পরিস্থিতির জন্য অবৈধভাবে বালুু উত্তোলন দায়ী। এখন টেকসই বাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি মুছাপুর ক্লোজার পুনঃনির্মাণে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি নদী শাসনে নজর দিতে হবে।
দৈনিক ফেনীর সময়ের সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, এমন বন্যা ফেনীর মানুষ আগে কখনো দেখেনি। ক্ষতির পরিমাণ দিনদিন বেড়ে চলেছে। বন্যা সবাইকে এক কাতারে নিয়ে এসেছেন। প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন। আজকের এ আয়োজনও তারই অংশ।
সংলাপে দৈনিক ফেনীর সম্পাদক আরিফুল আমিন রিজভী বলেন, এ ক্ষতি একদিনে পূরণ করা সম্ভব না। ধীরে ধীরে এজন্য কাজ করতে হবে। এছাড়া সমাজের বিত্তবানদের এসব কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। সরকারি সহায়তাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যারা একদম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের দিতে হবে।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বেসরকারি সংগঠন ইসলামিক এইড বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আবু তাহের নাসির, ফেনী সরকারি কলেজ দর্শন বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ মীর হোসেন মজুমদার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল আজিজ, প্রবীণ সাংবাদিক আবদুর রহিম, স্বেচ্ছাসেবক ওসমান গনি রাসেল, আমিরুল ইসলাম এবং মো. ফয়সাল প্রমুখ। এ সময় এ সময় শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, ছাত্র প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।