মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহতদের মধ্যে ৪ জনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকালে ফুলগাজীর আনন্দপুরে পারিবারিক কবরস্থান হতে শহিদ ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ এবং সকালে ফাজিলপুরে শহিদ সাইদুল ইসলাম শাহীর মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। এর আগে গতকাল সোনাগাজীর কুটিরহাটে পারিবারিক কবরস্থান হতে শহিদ জাকির হোসেন শাকিল এবং লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতিতে মো. সবুজের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। তথ্যগুলো ফেনী মডেল থানা পুলিশ সূত্র নিশ্চিত করেছে।
একই সূত্র জানায়, মামলার তদন্তের প্রয়োজনে আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য দাফনের ৩৬ দিন পর তাদের মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে।
গতকাল বিকালে ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নে দক্ষিণ আনন্দপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থান হতে শহিদ শ্রাবণের মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুর রহমান এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানায় দায়িত্বরত উপপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন। এর আগে একইদিন সকালে সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের লকিয়ত উল্যাহ সওদাগর বাড়ির পারিবারিক কবরস্থান হতে শহিদ শাহীর মরদেহ উত্তোলন করা হয়। এরপর ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয়। ফেনী মডেল থানা সূত্র জানায়, শাহী হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. আল-আমীন এসময় উপস্থিত ছিলেন।
ফেনী মডেল থানা সূত্র আরও জানায়, গতকাল বিকেল ৫টার দিকে সোনাগাজী উপজেলার মান্দারী গ্রাম থেকে শহিদ শাকিলের মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এসময় সোনাগাজী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানা পুলিশের উপপরিদর্শক এম ইরফান উপস্থিত ছিলেন। এদিন দুপুর ১টার দিকে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার টুমচর গ্রামের এলাকা থেকে মহিপালে নিহত অটোরিকশা চালক শহিদ মো. সবুজের মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এসময় সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম আবদুল্লাহ-বিন-শফিক এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানা পুলিশের উপপরিদর্শক কমল কুমার সাহা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত রোববার আদালত ময়নাতদন্তের জন্য সবুজের মরদেহ উত্তোলনের আদেশে দেন।
এ ব্যাপারে ফেনী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে ময়নাতদন্তের জন্য তাদের মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে পুনরায় দাফন করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপালে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ অবস্থানে নির্বিচারে গুলে করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯ জন নিহত এবং শতাধিক আহতের খবর পাওয়া গেছে। ফেনী মডেল থানায় সেদিনের হত্যাকাণ্ডে এপর্যন্ত ৮টি পৃথক হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে, আহতদের মধ্যে একাধিক ছাত্র জানিয়েছে মহিপালে নিহতের সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে।