ফেনীর মহিপালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে নিহত জাকির হোসেন শাকিল এবং মো. সবুজের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সোনাগাজী ও লক্ষ্মীপুর থেকে আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য দাফনের ৩৬ দিন পর তাদের মরদেহ উত্তোলন করা হয়।

বিকেল ৫টার দিকে সোনাগাজী উপজেলার মান্দারী গ্রাম থেকে শাকিলের মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এসময় সোনাগাজী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানা পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) এম ইরফান উপস্থিত ছিলেন।

এদিন দুপুর ১টার দিকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার টুমচর গ্রামের এলাকা থেকে মহিপালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত অটোরিকশা চালক মো. সবুজের মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এ সময় রামগতি উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম আবদুল্লাহ-বিন-শফিক মামলার এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানা পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) কমল কুমার সাহা উপস্থিত ছিলেন। রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) আদালত ময়নাতদন্তের জন্য সবুজের মরদেহ উত্তোলনের আদেশে দেন।


এর আগে গত ১৩ আগস্ট মহিপালে নিহত শিক্ষার্থী জাকির হোসেন শাকিলের মা কোহিনূর আক্তার বাদী হয়ে ৭১ জনের নাম উল্লেখ ও আরও ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ফেনী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহত শাকিল সোনাগাজী উপজেলার কুঠিরহাট মান্দারী গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে।

একই ঘটনায় গত ১২ আগস্ট নিহত অটোরিকশা চালক মো. সবুজের ভাই মো. ইউসুফ বাদী হয়ে ৬৫ জনের নাম উল্লেখ ও আরও ৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ফেনী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এ ব্যাপারে ফেনী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে ময়নাতদন্তের জন্য তাদের মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে ফের দাফন করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন আন্দোলনকারীরা। একইসময়ে শহরের ট্রাংক রোডে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দুপুর দুইটার দিকে মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মহিপাল ফ্লাইওভারের দিকে এগোতে থাকলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এ সময় মুহুর্মুহু গুলি, ককটেল বিস্ফোরণে চারপাশ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত থেমে থেমে সেখানে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে মহিপালের পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেদিন সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হওয়া ছাড়াও ইটপাটকেলের আঘাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, পথচারী ও সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।