পাঁচ উপজেলায় ব্যবসায়ীদের ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা
সর্বশেষ প্রলয়ংকরী বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফুলগাজীতে। এবারের বন্যা উপজেলায় প্রায় ১৭ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে।
ফুলগাজীর মুন্সীরহাট বাজার। নবগঠিত বাজার কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আবদুল ওয়াব বাবুল বলেন, মুন্সীরহাট বাজারের ছোট-বড় ৭ শতাধিক দোকানে আনুমানিক প্রায় ৪ কোটি টাকা ক্ষতি হতে পারে।
নতুন মুন্সীরহাট বাজারের নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফখরুদ্দিন কচি বলেন, নতুন মুন্সীরহাটে ১৭০টি দোকানের আনুমানিক প্রায় ১ কোটি টাকা ক্ষতি হতে পারে।
জিএমহাট ইউনিয়নের জিএমহাট বাজারের লামিম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুল জলিল জানান, দুই শতাধিক দোকানের এই বাজারের আনুমানিক ক্ষতি হতে পারে ১ কোটি টাকা।
আনন্দপুর ইউনিয়নের আনন্দপুর প্রকাশ কালিরহাট বাজারে ৭০টি দোকানের ৫০ লক্ষ টাকা আনুমানিক ক্ষতি হতে পারে বলে জানান ইউপি সদস্য এমদাদ হোসেন চৌধুরী রতন।
বন্দুয়া দৌলতপুর এলাকায় ২৫-৩০টি দোকানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১৫ লক্ষ টাকা বলে জানান স্থানীয়রা।
এবারের বন্যায় ফুলগাজী সদরের ফুলগাজী বাজারে পানি উঠে নি। তবে আগস্টের শুরুতে সৃষ্ট বন্যায় ফুলগাজী বাজারের প্রায় হাজার দোকানের ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১০ কোটি টাকা বলে জানান সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হোসেন।
এছাড়া আমজাদহাট বাজারে বন্যার পানি উঠেনি বলে জানান স্থানীয় লোকজন।
বন্যায় ছাগলনাইয়ার পাঠাননগর, রাধানগর, শুভপুর ও ঘোপাল ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকার ৩২টি বাজার পানিতে তলিয়ে যায়। এতে অন্তত ২ হাজারেরও অধিক ছোট বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্থাপনাসহ মালামালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। ছাগলনাইয়া জমদ্দার বাজারের ব্যবসায়ী নুর হোসেন মজুমদার জানান, ভয়াবহ এ বন্যায় ছাগলনাইয়া উপজেলাব্যাপী দুই হাজারেরও অধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অন্তত ১৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বন্যায় ছাগলনাইয়া পৌর এলাকার জমদ্দার বাজারের আংশিক, তুলাতলী বাজার, নিমতলী বাজার, রাধানগর ইউনিয়নের জঙ্গলমিয়া বাজার, পানুয়াঘাট বাজার, শান্তির হাট, নতুন করৈয়া বাজার, কালভার্ট বাজার, লক্ষ্মীপুর বাজার, পাঠাননগর ইউনিয়নের বাংলা বাজার, পাঠাননগর বাজার, কাচারী বাজার, দাইবিবি বাজার, রেজু মিয়া বাজার, নুরানী বাজার, চৌধুরী বাজার, ছেরুমিয়ার বাজার, কন্ট্রাক্টর মসজিদ বাজার, শুভপুর ইউনিয়নের শুভপুর বাজার, করৈয়া বাজার, চম্পকনগর বাজার, দারোগারহাট, জমিদারহাট, জয়চাঁদপুর বাজার, হাজারী পুকুর, জয়পুর বাজার ও ঘোপাল ইউনিয়নের মুহুরীগঞ্জ বাজার, তালতলা, দুর্গাপুর বাজার, পাতলা পুকুর, সমিতি বাজার, মুহুরী পুকুর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
পরশুরামে বন্যায় বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ১৩ কোটি ১০ লাখ বলে দাবি করেছেন তারা। বন্যায় উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সুবার বাজার, বটতলী বাজার ও তুলাতলী মোড়ে প্রায় ৪শ দোকান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ কোটি টাকা। সুবার বাজারের সার ডিলার জামাল উদ্দিন চৌধুরী জানান, বন্যার পানিতে তার প্রতিষ্ঠানের ৩০ লক্ষ টাকার সার গলে গেছে।
এছাড়া চিথলিয়া ইউনিয়নের ধনীকুন্ডা বাজারে ২০০ টি, শালধর বাজারে ১৫০টি, অলকা কালি বাজারে ৫০ দোকান বন্যায় ক্ষতির শিকার হয়েছে। ইউনিয়নের প্রায় ৪শ দোকানে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের বক্সমাহমুদ বাজারে ৫০টি দোকান, সাহেবের বাজারে ৫০টি দোকান ও খন্ডলহাই বাজারের প্রায় ১০০টি দোকানের মালামাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খন্ডল হাই বাজারের ব্যবসায়ী ঠাকুর চাঁদ জানান, তারমুদি দোকানের প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের বাজারগুলোতে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দেড় কোটি কোটি টাকা হতে পারে। এছাড়া বন্যায় পরশুরামের বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
বন্যায় সোনাগাজীতে প্রায় এক কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন। বন্যায় উপজেলার আমির উদ্দিন মুন্সিরহাটের দক্ষিণ পাশে বেশি পানি ওঠায় ১০টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরমধ্যে মুদি দোকানী বিপ্লবের দোকানে ৭০ হাজার টাকা, হার্ডওয়্যার এবং সার দোকানী সজিবের ৪০০ ব্যাগ সার নষ্ট হয়ে ৬ লাখ টাকা, মোবাইল দোকানী সাইফুলের ১০ হাজার, ফারুক হার্ডওয়্যারের ২০ হাজার, অন্যদের ১৭ হাজার টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়া একই উপজেলার বাদামতলীর বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় পূর্বপাশে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এরমধ্যে মুদি দোকানী দেলোয়ার হোসেনের ২ লাখ টাকা, দক্ষিণ পাশের মুদি দোকানী আবুল হাসেম এবং উত্তর পাশের মুদি দোকানী রহিম উল্লাহর উভয়ের দুটি দোকান পুরোপুরি ভেঙে ১০-১২ লাখ টাকা, চা দোকানী দিদার এবং মাহবুবুল হকের ৩০ হাজার টাকা, মুদি দোকানী বাহাদুরের ৪ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে।
কাশ্মীর বাজারের ৪টি দোকনের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। এরমধ্যে রিফাত মেডিসিন শপের ৫০ হাজার, মাঈন উদ্দিনের গোচারি শপে ১৫ হাজার, নুর রাইস মিলের ৩০ হাজার, চা দোকানী আবুল কাশেমের ১০ হাজার।
রিয়াজ উদ্দিন মুন্সিহাটের ৩টি দোকানে তথ্য পাওয়া গেছে৷ এরমধ্যে আবু তাহের ভূঞার সারের দুটি গুদাম ডুবে ১২ লাখ টাকা, আলম ট্রেডার্সের ৫০০ ব্যাগ সিমেন্টের পানিতে ডুবে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মিয়াজি ট্রেডার্সের ১০০ ব্যাগ সিমেন্ট ডুবে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।
সোনাগাজীর ডাক বাংলা এলাকায় ২০০ দোকান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে মুদি দোকানী মানিক স্টোরের ২০ লাখ, লাবিব এগ্র এন্ড ফিডের ৭টন খাদ্য নষ্ট হয়ে সাড়ে ৫ লাখ, রাজু পোল্ট্রির ৪ টন খাদ্য নষ্ট হয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ভোরবাজার পোল্ট্রির ৭ টন খাদ্য নষ্ট হয়ে সাড়ে ৫ লাখ টাকা, আপন পোল্ট্রির ২টন খাদ্য নষ্ট হয়ে ১ লাখ ১২ হাজার টাকা, তোহা মেডিসিন শপে দেড় লাখ টাকার ওষুধ নষ্ট হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ব্যবসায়ীদের ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
এছাড়া সোনাগাজীর নবাবপুর বাজারে ৪ জন দোকানীর ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ফারুক হার্ডওয়্যারের ৫০ হাজার, বেলায়েত সাদাগরের সার দোকানের গোডাউনের অর্ধেক ডুবে ৬ লাখ টাকা, সুমন মেডিসিন শপের ২ লাখ টাকা, মুদি দোকান আজমির ষ্টোরের দেড় লাখ টাকা ক্ষতি হয়। এছাড়া আরও ৭ দোকানীর ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
বন্যায় দাগনভূঞা প্রায় ৫০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন। তাদের মধ্যে উপজেলার পূর্ব চন্দ্রপুর মডেল ইউনিয়নের বৈরাগীর বাজার সুনিল ভৌমিকের নয়ন স্টোরের প্রায় ৭০ হাজার টাকা, একই ইউনিয়নের বৈরাগীর বাজার জাকের হোসেনের ইউনুস খান ট্রেডার্সের প্রায় ৪০ হাজার টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়া দাগনভূঞা উপজেলার সিন্দুরপুর ইউনিয়নের শরীফপুর গ্রামের শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মোঃ সাকের সাকের স্টোরের প্রায় ২৫ হাজার ও একই এলাকার আইয়ুব স্টোরের প্রায় ২০ হাজার টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের রাজাপুর বাজারের সাকিব আলীর দুবাই স্টোরের প্রায় ১ লাখ টাকা, খোকনের খোকন ট্রেডার্সের ৮০ হাজার, ফয়েজ মাস্টারের ক্রোকারিজ দোকানের প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার, মফিজুর রহমানের মফিজ সু স্টোরের ১ লাখ ও কফিল উদ্দিনের আরবি সু স্টোরের ১ লাখ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন।
মুদ্রণে-কাগজে ক্ষতি ৪ কোটি টাকা
বন্যায় ফেনী শহরের মুদ্রণ ও কাগজ ব্যবসায়ীদের প্রায় ৪ কোটি টাকা মালামাল ও যন্ত্রপাতির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছেন তারা। জেলা মুদ্রণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রাজীব নাথ জানান, বন্যায় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবুজ আর্ট প্রেসের ক্ষয়ক্ষতি ৩০ লাখ টাকা জানিয়ে তিনি বলেন, ট্রাঙ্ক রোডের পূর্বদিকে এবং ভেতরের বাজারের প্রেসগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বন্যায় কাগজ ব্যবসায়ীদের প্রায় ২ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকার কাগজ নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। কুটুমিয়া এন্ড সন্সের মালিক মিনহাজ উদ্দিন জানান, বন্যায় তার গুদামে রাখা ৬০ লাখ টাকার কাগজ নষ্ট হয়েছে। একই পরিমাণ টাকার কাগজ নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটি প্রেসের মালিক গোলাম হায়দার মজুমদার ঝন্টু। তিনি জানান, পোস্ট অফিস রোডে তার গুদাম ঘরে পানি প্রবেশ করে এ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বড় মসজিদের রোডের হেলাল এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. ইয়াছিন রাসেল জানান, পানিতে ৫০ লাখ টাকার কাগজ নষ্ট হয়েছে।