শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় ফেনী জেলাজুড়ে আর্থিক বিপর্যয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। ফেনী শহরসহ ৬ উপজেলায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং শিল্পকারখানায় বন্যার ক্ষতি প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা। দৈনিক ফেনীর অনুসন্ধানে সর্বাধিক ক্ষতি হয়েছে সদরে, ক্ষতি তুলনামূলক কম হয়েছে দাগনভূঞাতে। দোকান মালিক, উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী নেতাদের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে দৈনিক ফেনীর ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ‘ব্যবসায় ক্ষতি’ নিয়ে পড়ুন ‘ষষ্ঠ পর্ব’
জেলায় সবকয়টি অঞ্চলের হাটবাজারসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই বন্যায় প্রবল আঘাতে জর্জরিত। বন্যার পর যুক্ত হয়েছে ক্ষতি এবং ঋণের চাপ। বড় বাজারে সর্বাধিক ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। শহরে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি ৩শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া বন্যায় ফেনীর শিল্পোদ্যক্তাদের ১৫০ কোটি টাকা, জেলার ৫ উপজেলায় বন্যায় ব্যবসায়ীদের ৫০ কোটি টাকা ও মুদ্রণ-কাগজ ব্যবসায়ীদের ৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির চিত্র উঠে এসেছে। ব্যবসায়ীদের ক্ষতি প্রসঙ্গে ফেনী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মুশফিকুর রহমান পিপুল বলেন, বন্যার আঘাত দীর্ঘদিন ভোগাবে বড় বাজারের ব্যবসায়ীদের।
শহরে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি ৩শ কোটি টাকা
ফেনী পৌর এলাকায় আনুমানিক ২০ হাজার দোকানপাট, গুদামঘর এবং অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্তের তথ্য পাওয়া গেছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৩শ কোটি টাকা।
ব্যবসাকেন্দ্র বিবেচনায় বড়বাজার ফেনীর প্রাণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে এবারের বন্যায় এখানে চাউল, ডাল, চিনি, মসলা এবং নিত্যপণ্যের সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ফেনী বাজারের তাকিয়া রোড এবং ইসলামপুর রোডে সর্বাধিক চাউলের আড়ৎ রয়েছে। বন্যায় দুইটি সড়ক এবং আশপাশের এলাকায় পাঁচ থেকে ৭ ফুট পানি কয়েকদিন জমে থাকে। চাউল আড়তদারদের দাবি, এতে প্রায় ২৫ হাজার টন চাউল নষ্ট এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার আনুমানিক মূল্য ১৫০ কোটি টাকা।
বেঙ্গল রাইস এজেন্সির মালিক একে আজাদ জানান, তাকিয়া রোড এবং সুলতান মাহমুদ পৌর হকার্স মার্কেটে তাঁর আড়তে সাড়ে ৩ কোটি টাকা মূল্যের চাউল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাকিয়া রোডের আঞ্জুমান রাইস এজেন্সির পরিচালক রিপন সাহা জানান, বন্যার পানিতে ৩০০ টন চাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চাউল আড়তদাররা জানান, এসব বাজারে ৬৪ জন চাউলের আড়তদার রয়েছেন। কমবেশি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হাজী কবির আহম্মদ, হাজী সালেহ আহম্মদ এবং হাজী জালাল আহম্মদ চাউল আড়তে যথাক্রমে ১৫০ টন, ১০০ টন এবং ২০০ টন চাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এবারের বন্যায় চিনির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিনি ব্যবসায়ীরা। এসব ব্যবসায়ীরা একইসাথে আটা, ময়দা, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ নানাবিধ পণ্য বিক্রি করে থাকেন। বড় বাজারের এসব আড়তদার এবং খুচরা বিক্রেতাদের আনুমানিক ক্ষতি ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে দাবি করছেন তারা। ফেনীর চিনির ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) ক্রয় করেন ১০টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান সাপ্তাহে গড়ে ৭৮০ টন চিনি ফেনীতে সরবরাহ করেন। প্রতি টন চিনির পাইকারী দর ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। সাধারণত গড়ে ৬০ টন চিনি বাজারে বিক্রির জন্য মজুদ রাখা হয়।
তাকিয়া রোডের আরিফ ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক জানান, দোকানে রাখা সাড়ে ৫০০ বস্তা চিনি, ১৫০ বস্তা আটা ও ময়দা এবং ৭০ বস্তা খইল পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে। সব মিলিয়ে টাকা অঙ্কে ৬০ লাখ টাকা এবারের বন্যায় ক্ষতি গুনতে হয়েছে। একই সড়কের চৌধুরী ট্রেডার্সে ৫০০ বস্তা চিনি, ৪০০ বস্তা ভূষি, ১০০০ বস্তা আটা ও ময়দা পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে। জাফর এন্টারপ্রাইজে ৯০০ বস্তা আটা ময়দা এবং ৩০০ বস্তা চিনি পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে। হাজী নূর আহম্মদ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একই রকম পণ্য নষ্ট হয়ে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়ে বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানের মালিক হাজী শরীফ উদ্দিন। উল্লেখ্য, পাইকারী বাজারে চিনি বস্তাপ্রতি ৬ হাজার ২০০ টাকা, আটা-ময়দা গড়ে ২০০০ হাজার টাকা, ভূষি ২ হাজার ৪০০ টাকায় পাইকারী দরে বিক্রি হচ্ছে। এ হিসেবে ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে।
বাজারে ১৩ জন আড়তদার আলু, পেঁয়াজ, আদার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন বলে ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে। বন্যায় প্রায় ১৫০ টন আলু, ১২০ টন পেঁয়াজ, ৭০ টন রসুন, ২৫ টন আদা বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে বলে একই সূত্র দাবি করেছে। এসব পণ্যের আড়তগুলোর মধ্যে হাজী ইদ্রিস এন্ড সন্স, আল্লাহর দান, রাজু এন্টারপ্রাইজ, হাজী জালাল, আয়েশা ট্রেডার্স, ভক্তি রঞ্জন সাহা, হরিপদ সাহা, ফৌজিয়া ট্রেডার্স ও মদিনা ট্রেডার্স অন্যতম।
এছাড়াও ফেনী শহরে নিত্যপণ্যসহ, প্রসাধনীসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকানে আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। গত ২০ আগস্ট বড় বাজারে শাহ আলমের চুনের দোকানে বন্যার পানি প্রবেশ করলে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে বাজারের ১১টি দোকান পুড়ে যায়। দোকানগুলোর মধ্যে হরেক পণ্যের দোকান ৩টি, মসলার দোকান ৬টি পুড়ে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ক্ষতির দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। ক্ষতিগ্রস্ত হুমায়ুন স্টোরের মালিক মো. হুমায়ুন জানান, দোকানে নগদ ৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা ছিল, সে টাকাগুলোও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
একইভাবে চাউলের আড়ত, মুড়ির আড়ত, জামান রোড, দর্জিপট্টি, খাজা আহম্মদ সড়ক, বড় মসজিদ গলিসহ বাজারের নিচতলার প্রায় সবগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফেনী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মুশফিকুর রহমান পিপুল বলেন, কেবল বাজারকে কেন্দ্র করেই বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে।
ফেনী শহরের উত্তর অংশে ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ইকবাল আলম দৈনিক ফেনীকে জানান, বন্যায় এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের ১০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানান, ডিসি অফিস, সালাহউদ্দিন মোড়ে ব্যবসায়ীদের ৫০ লাখ টাকা, পৌর হকার্স মার্কেটে ৫০ লাখ টাকা, ফেনী সেন্টারের ব্যবসায়ীদের ৩০ লাখ টাকা, ফেনী গার্ডেন সিটিতে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা, স্টেশন রোডে ৫০ লাখ টাকা, মিজান রোডে ৩০ লাখ, আলিয়া মাদ্রাসা মার্কেটে ২০ লাখ, মৌলভীবাজার সহদেবপুরে ৫০ লাখ, পোস্ট অফিস রোডে ৫০ লাখ, গুদাম কোয়ার্টারসহ তেলের মিলে ২ কোটি, একাডেমী ও হাসপাতাল মোড় এলাকায় ১ কোটি, কদলগাজী রোডে ৫০ লাখ, কলেজ রোড ও আপ্যায়ণ টাওয়ারে ৭০ লাখ, মজিদ মিয়ার বাজারে ২০ লাখ এবং এসব এলাকার পাড়া-মহল্লায় ব্যবসায়ীদের অন্তত ১ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের পূর্বাংশের ব্যবসায়ী নেতা হেলাল ব্রেডের মালিক হেলাল উদ্দিন জানান, এ অংশে ব্যবসায়ীদের কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
শিল্প-কারখানায় ক্ষতি ২০০ কোটি টাকা
ফেনীতে শতাব্দীর এ ভয়াবহ বন্যায় শিল্প-কলকারখানায় ১৫০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছেন শিল্পোদ্যক্তারা। বন্যায় এককভাবে সর্বাধিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে স্টারলাইন গ্রুপের। এ প্রসঙ্গে গ্রুপের পরিচালক মাঈন উদ্দিন জানান, স্টার লাইন ফুড প্রোডাক্টস, পরিবহন, আটা-ময়দা ও মসলার মিল, মৎস্য খামার পোল্ট্রি, প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং, লাইভস্টক এবং সুইটস প্রোডাক্টসে ১১৪ কোটি ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বন্যায় ফেনী বিসিক এবং ছাগলনাইয়ার নিজকুঞ্জরার বিসিকে অবস্থিত শিল্প কারাখানাগুলোতে প্রায় ২৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন হীরা বিস্কুট প্রাইভেট লিমিটেডের আনোয়ার হোসেন ভূঞা। বন্যায় নিজ প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা বলে তিনি জানিয়েছেন। বন্যার পানিতে ২টি জেনারেটর, ৩৫টি মোটরসহ যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে।
বন্যায় ইটভাটার ক্ষতি ৫০ কোটি টাকার বেশি বলে জানিয়েছেন জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি জাফর উদ্দিন। তিনি জানান, বন্যায় পোড়ানো ইট এবং ইট তৈরির মাটি ধুয়ে এমন ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ইট তৈরির মেশিন ও সরঞ্জামও নষ্ট হয়েছে।
পাঁচ উপজেলায় ব্যবসায়ীদের ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা
সর্বশেষ প্রলয়ংকরী বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফুলগাজীতে। এবারের বন্যা উপজেলায় প্রায় ১৭ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে।
ফুলগাজীর মুন্সীরহাট বাজার। নবগঠিত বাজার কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আবদুল ওয়াব বাবুল বলেন, মুন্সীরহাট বাজারের ছোট-বড় ৭ শতাধিক দোকানে আনুমানিক প্রায় ৪ কোটি টাকা ক্ষতি হতে পারে।
নতুন মুন্সীরহাট বাজারের নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফখরুদ্দিন কচি বলেন, নতুন মুন্সীরহাটে ১৭০টি দোকানের আনুমানিক প্রায় ১ কোটি টাকা ক্ষতি হতে পারে।
জিএমহাট ইউনিয়নের জিএমহাট বাজারের লামিম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুল জলিল জানান, দুই শতাধিক দোকানের এই বাজারের আনুমানিক ক্ষতি হতে পারে ১ কোটি টাকা।
আনন্দপুর ইউনিয়নের আনন্দপুর প্রকাশ কালিরহাট বাজারে ৭০টি দোকানের ৫০ লক্ষ টাকা আনুমানিক ক্ষতি হতে পারে বলে জানান ইউপি সদস্য এমদাদ হোসেন চৌধুরী রতন।
বন্দুয়া দৌলতপুর এলাকায় ২৫-৩০টি দোকানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১৫ লক্ষ টাকা বলে জানান স্থানীয়রা।
এবারের বন্যায় ফুলগাজী সদরের ফুলগাজী বাজারে পানি উঠে নি। তবে আগস্টের শুরুতে সৃষ্ট বন্যায় ফুলগাজী বাজারের প্রায় হাজার দোকানের ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১০ কোটি টাকা বলে জানান সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হোসেন।
এছাড়া আমজাদহাট বাজারে বন্যার পানি উঠেনি বলে জানান স্থানীয় লোকজন।
বন্যায় ছাগলনাইয়ার পাঠাননগর, রাধানগর, শুভপুর ও ঘোপাল ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকার ৩২টি বাজার পানিতে তলিয়ে যায়। এতে অন্তত ২ হাজারেরও অধিক ছোট বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্থাপনাসহ মালামালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। ছাগলনাইয়া জমদ্দার বাজারের ব্যবসায়ী নুর হোসেন মজুমদার জানান, ভয়াবহ এ বন্যায় ছাগলনাইয়া উপজেলাব্যাপী দুই হাজারেরও অধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অন্তত ১৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বন্যায় ছাগলনাইয়া পৌর এলাকার জমদ্দার বাজারের আংশিক, তুলাতলী বাজার, নিমতলী বাজার, রাধানগর ইউনিয়নের জঙ্গলমিয়া বাজার, পানুয়াঘাট বাজার, শান্তির হাট, নতুন করৈয়া বাজার, কালভার্ট বাজার, লক্ষ্মীপুর বাজার, পাঠাননগর ইউনিয়নের বাংলা বাজার, পাঠাননগর বাজার, কাচারী বাজার, দাইবিবি বাজার, রেজু মিয়া বাজার, নুরানী বাজার, চৌধুরী বাজার, ছেরুমিয়ার বাজার, কন্ট্রাক্টর মসজিদ বাজার, শুভপুর ইউনিয়নের শুভপুর বাজার, করৈয়া বাজার, চম্পকনগর বাজার, দারোগারহাট, জমিদারহাট, জয়চাঁদপুর বাজার, হাজারী পুকুর, জয়পুর বাজার ও ঘোপাল ইউনিয়নের মুহুরীগঞ্জ বাজার, তালতলা, দুর্গাপুর বাজার, পাতলা পুকুর, সমিতি বাজার, মুহুরী পুকুর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
পরশুরামে বন্যায় বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ১৩ কোটি ১০ লাখ বলে দাবি করেছেন তারা। বন্যায় উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সুবার বাজার, বটতলী বাজার ও তুলাতলী মোড়ে প্রায় ৪শ দোকান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ কোটি টাকা। সুবার বাজারের সার ডিলার জামাল উদ্দিন চৌধুরী জানান, বন্যার পানিতে তার প্রতিষ্ঠানের ৩০ লক্ষ টাকার সার গলে গেছে।
এছাড়া চিথলিয়া ইউনিয়নের ধনীকুন্ডা বাজারে ২০০ টি, শালধর বাজারে ১৫০টি, অলকা কালি বাজারে ৫০ দোকান বন্যায় ক্ষতির শিকার হয়েছে। ইউনিয়নের প্রায় ৪শ দোকানে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের বক্সমাহমুদ বাজারে ৫০টি দোকান, সাহেবের বাজারে ৫০টি দোকান ও খন্ডলহাই বাজারের প্রায় ১০০টি দোকানের মালামাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খন্ডল হাই বাজারের ব্যবসায়ী ঠাকুর চাঁদ জানান, তারমুদি দোকানের প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের বাজারগুলোতে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দেড় কোটি কোটি টাকা হতে পারে। এছাড়া বন্যায় পরশুরামের বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
বন্যায় সোনাগাজীতে প্রায় এক কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন। বন্যায় উপজেলার আমির উদ্দিন মুন্সিরহাটের দক্ষিণ পাশে বেশি পানি ওঠায় ১০টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরমধ্যে মুদি দোকানী বিপ্লবের দোকানে ৭০ হাজার টাকা, হার্ডওয়্যার এবং সার দোকানী সজিবের ৪০০ ব্যাগ সার নষ্ট হয়ে ৬ লাখ টাকা, মোবাইল দোকানী সাইফুলের ১০ হাজার, ফারুক হার্ডওয়্যারের ২০ হাজার, অন্যদের ১৭ হাজার টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়া একই উপজেলার বাদামতলীর বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় পূর্বপাশে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এরমধ্যে মুদি দোকানী দেলোয়ার হোসেনের ২ লাখ টাকা, দক্ষিণ পাশের মুদি দোকানী আবুল হাসেম এবং উত্তর পাশের মুদি দোকানী রহিম উল্লাহর উভয়ের দুটি দোকান পুরোপুরি ভেঙে ১০-১২ লাখ টাকা, চা দোকানী দিদার এবং মাহবুবুল হকের ৩০ হাজার টাকা, মুদি দোকানী বাহাদুরের ৪ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে।
কাশ্মীর বাজারের ৪টি দোকনের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। এরমধ্যে রিফাত মেডিসিন শপের ৫০ হাজার, মাঈন উদ্দিনের গোচারি শপে ১৫ হাজার, নুর রাইস মিলের ৩০ হাজার, চা দোকানী আবুল কাশেমের ১০ হাজার।
রিয়াজ উদ্দিন মুন্সিহাটের ৩টি দোকানে তথ্য পাওয়া গেছে৷ এরমধ্যে আবু তাহের ভূঞার সারের দুটি গুদাম ডুবে ১২ লাখ টাকা, আলম ট্রেডার্সের ৫০০ ব্যাগ সিমেন্টের পানিতে ডুবে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মিয়াজি ট্রেডার্সের ১০০ ব্যাগ সিমেন্ট ডুবে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।
সোনাগাজীর ডাক বাংলা এলাকায় ২০০ দোকান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে মুদি দোকানী মানিক স্টোরের ২০ লাখ, লাবিব এগ্র এন্ড ফিডের ৭টন খাদ্য নষ্ট হয়ে সাড়ে ৫ লাখ, রাজু পোল্ট্রির ৪ টন খাদ্য নষ্ট হয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ভোরবাজার পোল্ট্রির ৭ টন খাদ্য নষ্ট হয়ে সাড়ে ৫ লাখ টাকা, আপন পোল্ট্রির ২টন খাদ্য নষ্ট হয়ে ১ লাখ ১২ হাজার টাকা, তোহা মেডিসিন শপে দেড় লাখ টাকার ওষুধ নষ্ট হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ব্যবসায়ীদের ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
এছাড়া সোনাগাজীর নবাবপুর বাজারে ৪ জন দোকানীর ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ফারুক হার্ডওয়্যারের ৫০ হাজার, বেলায়েত সাদাগরের সার দোকানের গোডাউনের অর্ধেক ডুবে ৬ লাখ টাকা, সুমন মেডিসিন শপের ২ লাখ টাকা, মুদি দোকান আজমির ষ্টোরের দেড় লাখ টাকা ক্ষতি হয়। এছাড়া আরও ৭ দোকানীর ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
নিউজের বাকী অংশ পড়ুন https://www.doinikfeni.com/details.php?newsid=4043&cid=2