করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান সর্বাত্মক লকডাউনের ষষ্ঠ দিন পার হচ্ছে আজ। আজ সোমবার (১৯ এপ্রিল) সকাল থেকে ফেনী শহরের বিভিন্ন সড়কে অন্যদিনের তুলনায় অধিক মানুষ লক্ষ্য করা গিয়েছে। বাজারে ক্রেতা কমলেও দোকান খুলছেন অনেক ব্যাবসায়ীরা। যার মধ্যে যারা বাইরে আছেন, তাদের কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন, আবার কেউ উপেক্ষা করছেন।
লকডাউনে নিম্নআয়ের মানুষরা রয়েছেন বিপাকে। যারা দিনে এনে দিনে খায়, লকডাউনের কারণে তাদের নাভিশ্বাস অবস্থা। দুবেলা খাবার যোগানোর জন্য বাধ্য হয়েই লকডাউন উপেক্ষা করে কাজে বেরিয়েছেন অনেকেই। রিকশা ও সিএনজি চালকরা শহর এলাকায় গাড়ি চালিয়ে দিনের রোজগারের ব্যবস্থা করছেন আবার ছোট ব্যবসায়ীরা দোকান খুলে অথবা কেউ ভ্যানগাড়িতে সবজি, ফল-ফলাদি টুকটাক বেচা বিক্রি করছেন। এমন চিত্র পুরো শহর জুড়েই।
সিরাজ নামে এক সিএনজি চালক বলেন, আমাদের অবস্থা খুব খারাপ। এখন তো রাস্তায় লোকজনই নেই, আমাদের আয়ের উৎস নেই। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের সিএনজিও চালাতে দেয় না, পুলিশে বাধা দেয়।
তিনি বলেন, আমাদের তো আর জমানো টাকা থাকে না। বাড়ি ভাড়া দিতে হয়, খাবার জোগাড় করতে হয়, বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে বহুত কষ্টে আছি। তাই লকডাউনের মধ্যেও গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি।
একই কথা গুলো বললেন কয়েকজন রিকশাচালক। গণি মিয়া নামে একজন রিকশা চালক বলেন, যদি লকডাউন মেনে ঘরের বাইরে বের না হয়, করোনায় মরা লাগবেনা পরেরদিন আমার পরিবার না খেয়ে মরে যাবে। তিনি বলেন, ‘আঁর পেটে ভাত থাকলে আঁই বাঁচি থাকমু, আর ভাত জোগাড় করতে হলে গাড়ি চালাইতে হবে।’
মিন্টু নামে তরুণ আরেকজন রিকশা চালক বলেন, আমার দুইটা কিস্তি রয়েছে। গাড়ি না চালালে কিস্তি গুলো কিভাবে দিব। পরিবার কে কি খাওয়াবো নিজে কি খাবো। তাই লকডাউনের মধ্যেও বের হয়েছি৷ তিনি বলেন, অনেকসময় পুলিশের ভয়ে যেতে পারিনা। যাত্রীও তেমন নেই। যা আছে কিছু ইনকাম করতে পারলেই পরিবার চলবে।
লকডাউনেও দোকানের একটু অংশ খুলে টুকটাক বিক্রির চেষ্টা করছেন অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানদান বলেন, দোকান না খুললে এই রমজানে পরিবার নিয়ে ইফতার করতে কষ্ট হয়ে যাবে। এই মাস এর বাসা ভাড়া দিতে পেরেছি দোকান না খুললে আগামী মাসে কিভাবে দিব। সে জন্য জীবনের ঝুঁকি থাকলেও দোকান খুলতে বাধ্য হই।
হানিফ নামে একজন ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা বলেন, লকডাউনের কারণে তেমন বেচা বিক্রি নেই। তিনি বলেন জীবনের ঝুঁকি দিয়ে কি হবে, পরিবার নিয়ে দু- মুঠো খেয়ে ইফতার সেহরি করতে পারলেই খুশী আমি।
তবে করোনাভাইরাসের কবল থেকে রক্ষা পেতে এই কষ্টটুকু মেনে নিচ্ছেন সবজি বিক্রেতা মোঃ আলী। তিনি বলছেন, সবজি বিক্রি কমে গেছে, কারণ দূরের কোন পাইকার আসছে না। কিন্তু তারপরেও সমস্যাটা মেনে নিয়েছি।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে যে অবস্থা তাতে যদি আমরা একটু নিরাপদে থাকতে পারি, তাহলে এই অসুবিধা হলেও সেটাকে অসুবিধা মনে করছি না।
লকডাউনে শহরের যেসব রাস্তা সিএনজি, রিকশার আনাগোনা লেগে থাকতো, সেখানে এখন গুটিকয়েক গাড়ি চলাচল করছে। জীবনের তাগিদে অনেক লকডাউন অমান্য করে উপার্জনে বেরিয়েছেন। প্রথম দিনের লকডাউন শহর জনমানব শূন্যে থাকলেও লকডাউনের ষষ্ঠ দিনে এসে সেটি অনেকটাই শিথিল হতে দেখা গিয়েছে।