আজ বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) চাঞ্চল্যকর নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার ঘোষণা করবে ফেনী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। নৃংশসতম এ হত্যাকান্ডের বিচারের অপেক্ষার প্রহর গুনছে সারাদেশ। সকাল ১১ টায় আদালতের এজলাসে বসবেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ মামুনুর রশিদ। ঘোষণা করবেন আলোড়ন সৃষ্টিকারী এ মামলার রায়।
রায় ঘোষণাকে ঘিরে ফেনীতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ফেনী সদর ও সোনাগাজীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশের নিরাপত্তাচৌকি বসানো হয়েছে। এ ছাড়া র্যাব সদস্যদের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। রায় ঘোষণাকে ঘিরে যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে এ রকম নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
মামলার রায়কে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তাই ফেনী শহর, আদালত চত্বর ও নুসরাতের বাড়িতে কঠোর নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানান ফেনী পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক সুদীপ্ত রায়।
সুদীপ্ত রায় জানান, ‘নুসরাতের বাড়িতে এক সার্কেল পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। অন্যদিকে আদালত চত্বরে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শতাধিক সদস্য। এ ছাড়া জেলা শহরেও র্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। সাদা পোশাকে ও বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।’
তিনি আরো বলেন, এই মামলার সব আসামিই ফেনী জেলা কারাগারে আটক আছেন। বিচারকের অনুমতি নিয়ে সকাল ১০টার দিকে সব আসামিকে আদালতে নিয়ে আসা হবে।
এদিকে আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আদালত চত্বরে দেখা যায়, চত্বরজুড়েই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। সাধারণ মানুষকে খুব একটা দেখা যায়নি তখন পর্যন্ত। তবে মামলার বিচারের কাজে সংশ্লিষ্ট যাঁরা আসছেন, তাঁদের তল্লাশি করে করে পুলিশ ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন।
ফেনীর পুলিশ সুপার খোন্দকার মো. নুরুন্নবী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রায় ঘোষণার দিন আদালত চত্বরে সরকারি গাড়ি ছাড়া কোনো যানবাহন ঢুকতে পারবে না। আমরা সেখানে তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছি।’
এ ছাড়া ঢাকা থেকে প্রায় সব বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা আজ ফেনী জেলা আদালত চত্বরে অবস্থান নিয়েছেন, রয়েছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের স্থানীয় প্রতিনিধিরাও।
উল্লেখ্য, ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তাঁর মা শিরিনা আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করলে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলা তুলে না নেওয়ায় ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বোরকা পরা পাঁচ দুর্বৃত্ত। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান (নোমান) সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। গত ২৮ মে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত শেষে মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে ৮৬৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে। মাত্র ৬১ কার্যদিবসে মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। আর মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ করতে পিবিআইয়ের লাগে ৩৩ কার্যদিবস।