আগামীকাল ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে বাঙালির মহানায়ককে।

তবে এবার বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর কারণে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতপূর্বক স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করা হবে। ইতোমধ্যে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে ফেনীতেও জেলা প্রশাসন, জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে গত ৪ আগস্ট প্রস্তুতি সভা করেছে ফেনী জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় নানা কর্মসূচিতে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি অনুযায়ী ১৫ আগস্ট শনিবার সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। সকালে শহরের কলেজ রোডস্থ স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে আলোচনা সভা ও ৪৫জন ক্রীড়াবিদকে সম্মাননা দেয়া হবে। দিনটি উপলক্ষ্যে রচনা ও চিত্রাঙ্কন, হামদ-নাত, ক্বেরাত প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। বাদ আসর ফেনী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট নিহত সকল শহীদের রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনায় ফাতেহা পাঠ, বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া জেলা ও উপজেলার সকল মসজিদ, মন্দির ও গির্জাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনার.আয়োজন হবে।

দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে ফেনীর ৬টি উপজেলায় প্রশাসনের পক্ষ হতে নানা কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে। এছাড়া ফেনীর বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচিতে স্মরণ করবে স্বাধীনতার মহান স্থপতিকে।

অন্যদিকে স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে গত ৮ আগস্ট এক প্রস্তুতি সভা করেছে দলটি। সংগঠনের সকল স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসটির কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। সকালে শহরের কলেজ রোডে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবে নেতাকর্মীরা। এরপর স্টেশন রোডের আওয়ামীলীগের নির্মাণাধীন নিজস্ব ভবনে আলোচনা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। দুপুরে ট্রাংক রোডের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ, মহিপাল ও ফেনী জেনারেল হাসপাতাল মোড়ে গরীব ও দুস্থদের মাঝে কাঙ্গালী ভোজ বিতরণ করার কথা রয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলায় দিবসটি যথাযথভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ছাড়া যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সকল সহযোগি সংগঠনের উদ্যোগে দিবসটি পালনে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

১৯৭৫ সালের শোকাবহ এই কালো দিবসে ভোররাতে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ঘাতকেরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।

পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি ও সুকান্তবাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগনে যুবনেতা ও সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু, কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন।