ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রলয়ের পর বন্যার পানি মুহুরী ও কহুয়া নদীতে ফিরে চলেছে। কিন্তু রেখে যাচ্ছে তান্ডবের চিত্র আর ক্ষত চিহ্ন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর উপ-পরিচালক তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী জানান, দুই উপজেলায় ২৫ শতাংশ আউশ ধানের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তবে প্লাবিত এলাকায় মাছের ঘের, ধানের বীজতলা, রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-উঠোন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হঠাৎ বন্যায়। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফুলগাজী-বক্সমাহমুদ সড়ক।
উপ-পরিচালক জানান, ফুলগাজীতে ২৯ হেক্টর এবং পরশুরামে ৪৪ হেক্টর জমির বীজতলা এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। তবে ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তথ্য নিরূপণে আরও একদিন সময় লাগবে। এরপর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
তিনি জানান, চলতি বছর জেলায় ৩ হাজার ৪৩৪ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা করা হয়েছে। এরমধ্যে ফুলগাজীতে ৩২০ হেক্টর এবং পরশুরামে ২৫৬ হেক্টর জমিতে বীজতলা করা হয়েছে। এছাড়া সংকট নিরসনে সরকারিভাবে এক একর জমিতে আমন বীজতলা করা হবে। কৃষকের ধানের বীজ সংকট দেখা দিলে সরকারি বীজ হতে ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করা হবে।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। মাছ চাষ হচ্ছে আনুমানিক ১২০টি পুকুর বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। ১০ হেক্টর জমি সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমনের বীজতলা পানিতে এখনো ডুবে আছে। বাড়ি ঘরের ক্ষতিসহ সব ধরণের ক্ষতির তালিকা করা হচ্ছে।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াছমিন আকতার জানান, উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নে ২টি ও বক্সমাহমুদ ইউনিয়নে ৯টি গ্রামের ৭শ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও ৭৪টি মৎস্য পুকুর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
এর আগে রবিবার সন্ধ্যার দিকে টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী নদীর ৯ স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পরশুরামের চিথলিয়া ইউনিয়নে ৭টিসহ ৯টি এবং ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের ৭টিসহ মোট ১৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়। বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, পুকুর প্লাবিত হয়ে যায়। এছাড়া বন্যার পানিতে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কও ডুবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরদিন সোমবার ফুলগাজীর বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান। এসময় বন্যার্তদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেন তিনি।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত দুই উপজেলায় ৫শ পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমিন জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দেড়শ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ টাকা সরকারি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।