ভাল নেই ফেনী শহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায় নিম্নমুখী লেনদেন, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব বড় রকম ধাক্কা হিসেবে চিহ্নিত করছেন ব্যবসায়ীরা।

তবে মাত্রাতিরিক্ত ঘরভাড়া ও জামানত, অস্বাভাবিক ব্যবসা পরিবেশ, নিম্নমুখী বিক্রয় হার, ঋণ ব্যবহারে জ্ঞানের অভাবকে ব্যবসায়ীক মন্দার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী নেতা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান। এ চাপ সামলাতে নিজের পুঁজি হারানোর পাশাপাশি অস্তিত্ব নিয়ে শংকায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

করোনাকালীন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়মিত ভ্যাট দিচ্ছেন না জানান কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট অফিসের ফেনী সদর সার্কেল রাজস্ব কর্মকর্তা কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, পূর্বের তুলনায় হোটেল ব্যবসায়ী, মিষ্টি দোকান এবং স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের ভ্যাট প্রদানের হার কমেছে যথাক্রমে ৫৫, ৫৬ এবং ২১ শতাংশ।

ভ্যাটের এমন চিত্রকে স্বাভাবিক বলছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন বিক্রয় কমলে ভ্যাটও কমবে।

ট্রাংক রোডে একজন ফল ব্যবসায়ী জানান, ৪৫ হাজার টাকা ভাড়া ছাড়াও ৪০ লাখ টাকা জামানত দিয়েছেন আড়তের জন্য। নতুন করে আরও ১৫ হাজার টাকা ঘরভাড়া বাড়াতে চাইছে মালিক পক্ষ। খরচের বিশাল চাপের পাশাপাশি বিক্রির হার কমেছে অর্ধেক।

শহরের বিপনীবিতানগুলোতে ভাড়ার হার তুলনামূলক সহনীয় হলেও শহরের বড় বাজার, জামে মসজিদ মার্কেট ও শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে দোকান ঘরের ভাড়া আকাশচুম্বী।

বড় বাজারে দোকানঘরের ভাড়া বাড়ছে প্রতিযোগিতা করে। এমন পরিস্থিতির জন্য প্রবাসীরা কিছু ক্ষেত্রে দায়ী মনে করছেন ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারী। তিনি বলেন, পুরনো ব্যবসায়ীরা ঘর ধরে রাখতে প্রায় প্রতিবছর বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে। প্রবাসীরা দেশে ফিরে বুঝে না বুঝে ট্রেডিং ব্যবসায় নামছে। সর্বস্ব জামানত দিয়ে নিজেও ব্যবসায় পুঁজি দিতে পারছেন না। পাশাপাশি পুরনোদের কাঁধে বাড়তি ব্যয়ের চাপ সৃষ্টিতে ভূমিকা করছে। ফলে একই ঘর বারবার হাতবদল হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের পুঁজি নষ্ট হচ্ছে যা ফেনীর অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

পারভেজুল ইসলাম জানান, ভাড়া নিয়ে দিনদিন দোকান ঘরের মালিক ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে দুরত্ব বাড়ছে। সমিতিতে যেসব অভিযোগ আসছে তার পঞ্চাশভাগই ভাড়া বৃদ্ধি এবং জামানত বৃদ্ধি নিয়ে। এ মুহূর্তে পঞ্চাশের অধিক অভিযোগ আলোচনাধীন রয়েছে।

শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপনী বিতানে তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী লিটন বলেন, বাজার মন্দা। সাথে যোগ হয়েছে বড় বড় ব্র্যান্ডের শোরুমের প্রভাবে বেচা-বিক্রিহীনতা। ফলে প্রতিদিন একটু একটু করে পুঁজি ব্যয়ের খাতে যোগ হচ্ছে। এভাবে চললে প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে নেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।

প্রিমিয়ার ব্যাংক ফেনী শাখার ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন শিমুল বলেন, একটি ক্রান্তিকাল পার করছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। বিরাজমান করোনা পরিস্থিতি ছাড়াও অশুভ প্রতিযোগিতায় ব্যাপকহারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। নিয়মিতহারে কমছে লভ্যাংশের হার। এর সাথে যোগ হয়েছে মুদ্রাস্ফীতি বা টাকার অবমূল্যায়ন। বড়দের সাথে টিকে উঠছে না ছোটরা।

তিনি বলেন, ফেনীতে নিজ উদ্যোগের পাশাপাশি না বুঝে শেয়ার বাজার ও আর্থিক সমিতিতে লগ্নি করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে পুঁজি নষ্ট হয়েছে। এছাড়া নিত্যপণ্যের দর বারবার উঠানামাতে ভোক্তা তার চাহিদা কমিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। ফলে চাহিদার তুলনায় যোগান বেশী হয়েছে। ব্যবসায়ীদের লগ্নিকৃত টাকা সচল থাকছে না বছর জুড়ে। এভাবে ব্যবসায় লাভ কমেছে কিন্তু খরচ একই রয়ে যাওয়ায় পুঁজিতে টান পড়েছে। ফলে যাদের ঋণ রয়েছে তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

নিজ শাখায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের লেনদেন প্রসঙ্গে শাহাদাত জানান, ১০ শতাংশও গ্রাহক নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না। তিনি বলেন, ঋণ ব্যবহারে গ্রহীতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। ফলে ঋণের টাকা গ্রহীতার দায় তৈরি করছে।