ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্বের জেরে শ্যালক নজরুল ইসলামকে অপহরণ করে কোটি টাকার সম্পত্তি কেড়ে নেবার অভিযোগে ভগ্নিপতি আরেফিন আজাদ বাদলের বিরুদ্ধে ফেনীতে অভিযোগ আনা হয়েছে। তারা দুজনেই সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী। ঢাকার কেরানীগঞ্জে পাশাপাশি দুজনেরই ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এ ঘটনায় আজ রবিবার (২৩ আগস্ট) ভগ্নিপতি আরেফিন আজাদ চৌধুরী ওরফে বাদলকে প্রধান আসামী করে আরও তিনজনসহ অজ্ঞাতনামা ৬/৭ জনের বিরুদ্ধে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলী আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন ফুলগাজী উপজেলার আমজাদ ইউনিয়নের বাসন্তীপুরের নজরুল ইসলাম। অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক ধ্রুব জ্যোতি পাল।
দায়েরকৃত মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বাদী নজরুল ইসলাম একসময় তার ভগ্নিপতি অপর সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী ছাগলনাইর দক্ষিণ সতর এলাকার আরিফিন আজাদ বাদলের ফিল্ম ফেয়ার লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। সেখানে থেকে বের হয়ে নজরুল সিএন্ডএফ লাইসেন্স করে নিজের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তার পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠানটি উত্তরোত্তর সাফল্য লাভ করায় ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন বাদল। নজরুলকে থামাতে গত এক বছর ধরে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে তার উপর চাপ প্রয়োগ করছিলেন তিনি। এতে নজরুল রাজি না হওয়ায় গত ১৭ জুন আরিফিন আজাদ বাদল ও তার ভাগ্নে গিয়াস উদ্দিন সুমন, তার স্ত্রী জাহান ও জনপ্রতিনিধি জমিরউদ্দিনসহ অজ্ঞাত ৮ থেকে ১০ দশ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল ফুলগাজীতে নজরুলের গ্রামের বাড়ি গিয়ে পরিবারের সকল সদস্যকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ও লুটপাট চালায়। এসময় তারা বসুন্ধরায় একটি ফ্ল্যাটের কিস্তির কাগজপত্র, ব্যবসায়িক লাইসেন্স এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ, স্বর্ণালংকার, টিভি, ফ্রিজসহ মূল্যবান জিনিসপত্র জোরপূর্বক ট্রাকে তুলে নিয়ে যায়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, অপর একটি অংশ ব্যবসায়ী নজরুলকে সেদিনই একটি মাইক্রোবাসে করে অপহরণ করে ঢাকা কেরানীগঞ্জ নিয়ে যায়। সেখানে তাকে কেরানিগঞ্জ সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের আশেপাশের একটি ভবনে চোখ বেঁধে আটকে রেখে অত্যাচার চালিয়ে ও পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। এতে নজরুল ইসলাম ভীত হয়ে তার বসুন্ধরার রিভারভিউ প্রকল্পের ৬.৭৬ কাঠার একটি প্লট লিখে তাদের নামে লিখে দিতে বাধ্য হন তিনি। পরদিন ১৮জুন দুপুরে তাকে কেরানীগঞ্জ সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে নিয়ে সেটি রেজিস্ট্রি করে নেয় তারা।
এ ব্যাপারে নজরুল ইসলাম জানান, এ ঘটনা কাউকে জানালে তারা আমাকে মেরে ফেলবে ও আমার পরিবারকে ধ্বংস করবে বলে হুমকি দেয় ।
মামলা দায়েরের বিলম্ব হবার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিবাদীরা প্রভাবশালী হওয়ার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত তাদের হুমকি ধামকি দেয়ার কারণে মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে। এছাড়া করোনার কারণে কোর্ট বন্ধ ছিল অনেক দিন।
নজরুল ইসলাম বলেন, তারা আমার কাছ থেকে বসুন্ধরার রিভারভিউ প্রকল্পের ৬.৭৬ কাঠার একটি প্লটসহ বসুন্ধরায় একটি ফ্ল্যাটের কিস্তির কাগজপত্র, টাকা প্রদানের রশিদ, ব্যবসায়িক লাইসেন্স এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে গেছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচার চাই এবং আমার সকল সম্পত্তি ফেরত চাই। নিজের জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে শংকায় রয়েছেন বলে সাংবাদিককের জানান ওই ব্যবসায়ী।
এ ব্যাপারে বিবাদী আরেফিন আজাদ বাদল ও তার স্ত্রী নজরুলের বড় বোন দিল জাহান আক্তার পাল্টা অভিযোগ করছেন। মুঠোফোনে তারা জানান, ব্যাপারটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সালিশে নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। দিল জাহান আক্তার বলেন, ব্যাপারটি পারিবারিক বিষয় হওয়ায় লিখিত কোন নিষ্পত্তির কাগজপত্র করা হয় নি।
অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণ করার ব্যাপারে জানতে চাইলে বাদলের স্ত্রী (নজরুলের বোন) বলেন, সালিশে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের সাথে কথা বললে এ ব্যাপারে জানতে পারবেন তাকে অপহরণ করা হয়েছে কিনা, এরকম কোন ঘটনা ঘটেনি।