আগস্টের শেষ দিকে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় ফুলগাজী উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জনপদে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম জগতপুর। সর্বনাশা মুহুরি নদী সর্পিল আকারে যেন পুরো গ্রামটিতে প্রবাহিত হয়েছে। ভারত হতে সৃষ্ট মুহুরি নদী উত্তরে ফুলগাজী বাজার ঘেঁষে দক্ষিণে দৌলতপুর ও বরইয়া হয়ে জগতপুরে প্রবেশ করেছে। আগস্টের বন্যায় জগতপুরেই মুহুরি নদীর বাঁধ ১৩ স্থানে ভেঙে পড়ে। পাড় বা বেড়িবাঁধটি গ্রামের সহস্রাধিক মানুষের চলাচলের একমাত্র সড়ক হিসেবে ব্যবহার হতো। শত বছর ধরে বাঁধটি শুধু নদী রক্ষাই নয় জগতপুরের বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

সরেজমিনে বরইয়া ও জগতপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় বন্যায় সর্বহারা বসতভিটে ছেড়ে যাওয়া মানুষের দুর্দশার চিত্র। নতুন মুন্সীরহাট হতে আমজাদহাট সড়ক ধরে জগতপুরের নদীর পাড় দিয়ে ভাঙা স্থানের একটু পর পর সামনে এগুলেই দেখা মেলে আরেকটি ভাঙনের চিহ্ন। মুহুরি নদীর প্রবল স্রোতের পানিতে জগতপুর পরিণত হয় বিধ্বস্ত জনপদে।

দৈনিক ফেনীর এ প্রতিবেদকের সাথে দেখা হলো ৭১ বছর বয়সী কবির আহমেদের ছেলে চল্লিশোর্ধ্ব মোবারকের। ১০ বছরের মেয়ে ও ৩ বছরের এক ছেলে নিয়ে কৃষি শ্রমিক মোবারক তার স্ত্রী ও বয়োবৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে বলেন আর্থিক সমস্যায় ঘর নির্মাণ অসম্ভব হয়ে গেছে।

কৃষক মোকছেদুর রহমানের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৩৬) পিতা, স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন। বিভিন্ন সংস্থা ত্রাণ বিতরণ করলেও বসতভিটে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় কিছু পরিবার আর্থিক সহযোগিতা পেলেও তা সামান্য বলে জানান জগতপুরের প্রবাসী মোহাম্মদ হোসেনের পরিবার।

বন্যায় নিজের ঘর হারিয়ে এখন অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছেন জগতপুরের সর্বস্ব হারানো মোবারক ও আনোয়ারের মতো অনেক পরিবার। সহায়-সম্বল সব হারিয়ে শুধুই কেঁদে চলেছেন দক্ষিণ বরইয়ার হিমুর মতো এসব পরিবারগুলো। সরেজমিনে দেখা যায়, শুধু জগতপুরেই ৫ শতাধিক পরিবার বন্যায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।