২৫ বছর আগে ফেনী পৌরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে শান্তি শৃঙ্খলারক্ষা সহ এলাকার উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনায় গঠন করা হয়েছিল পঞ্চায়েত কমিটি। অভিযোগ রয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয়দের কাছ থেকে বিভিন্ন নামে বেনামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে পঞ্চায়েত কমিটি। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে সাবেক পৌর কাউন্সিলর আমির হোসেন বাহারের বিরুদ্ধে। গত ৫ আগস্ট পতনের পর থেকে এসব দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ডের ব্যাপারে মুখ খুলতে শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ওই ওয়ার্ডের পঞ্চায়েত কমিটির আওতায় ৩০০টির বেশির বাসাবাড়ি ও দোকানপাট রয়েছে। মাসিক চাঁদা হিসেবে প্রত্যেক বাড়িওয়ালা থেকে ২০০ টাকা, ভাড়াটিয়া থেকে ৮০ টাকা ও দোকান থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা জমা আদায় করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের পর বাহারের নেতৃত্বাধীন কমিটির সদস্যরা দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করলে স্থানীয়দের নিয়ে একটি সমন্বয়ক কমিটি করা হয়েছে। শুধুমাত্র গত সেপ্টেম্বর মাসেই দেড় লাখ টাকা চাঁদা জমা হয়েছে। নাইট গার্ড, সুইপারের বিল, বিদ্যুৎ বিল, অফিস খরচসহ মাসে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা ব্যয় হয়ে থাকে। সে হিসেবে প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকা উদ্ধৃত থাকে। কিন্তু বিগত ৭ বছরে পঞ্চায়েত কমিটির কোন টাকার হিসেব নেই। আগের কমিটি দায়িত্ব ছাড়ার পরে ব্যাংক এশিয়ার ফেনী শাখায় ২ লাখ টাকা জমা দেওয়া হয়। কিন্তু এর আগের কোন হিসেব দিতে পারেনি কমিটির সদস্যরা।

স্থানীয়রা আরও জানান, এছাড়া সহযোগিদের নিয়ে পঞ্চায়েত কমিটির নাম করে ট্রান্সমিটার বাবদ, শোক দিবসে কাঙ্গালিভোজে গরু জবাই ও ভবন করার সময় বিভিন্নভাবে চাঁদা দাবি করতেন কাউন্সিলর বাহার। ২০১৬ সাল থেকে বাহারের নেতৃত্বাধীন কমিটির ৭ বছরে মাসে ৫০ হাজার টাকা উদ্বৃত হিসেবে ৪২ লাখ টাকা জমা থাকার কথা৷ কিন্তু ব্যাংক হিসাব অনুযায়ী পঞ্চায়েত কমিটির একাউন্টে ২ লাখ ১৪ হাজার টাকা জমা আছে।

বর্তমান সমন্বয়ক কমিটিতে থাকা সাহাব উদ্দিন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি দৈনিক ফেনীকে জানান, ইফতার সামগ্রী দেওয়ার কথা বলে রমজানে মাসে টাকা তোলা হত। কিন্তু পৌরসভা থেকে ইফতার সামগ্রী এনে সেগুলো কমিটির নামে বন্টন করা হত। এর জন্য ভবন মালিক থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত তোলা হত।

তিনি আরও বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসেই দেড় লাখ টাকা জমা হয়েছে। তার মধ্যে ৯০ হাজার টাকা খরচ হবে। প্রতি মাসে এত টাকা উদ্ধৃত থাকলে বিগত ৭ বছরের এত টাকার কোন হিসেব নেই। এগুলো এলাকার মানুষের টাকা, যা আত্মসাৎ করা হয়েছে। কারণ সমন্বয়ক কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পরে গত ১১ আগস্ট ব্যাংকে ২ লাখ টাকা জমা হয়েছে। এর আগে ১৪ হাজার টাকা ছিল।

অভিযোগ রয়েছে, পঞ্চায়েত কমিটির কোষাধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন এ অর্থ ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যবসা করতেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নিজাম উদ্দিন বলেন, আমি কেবল টাকা উত্তোলন করে বেতন দিতাম। তেমন বেশি টাকা কখনও উদ্ধৃত থাকেনি। ব্যবসায় ব্যবহারের তো প্রশ্নই আসে না। মাসে ১ লাখ টাকার বেশি চাঁদা তোলা হত। সে টাকা বেতনসহ আনুষাঙ্গিক বিভিন্ন কাজে খরচ হয়ে যেত।

আরও অভিযোগ রয়েছে, পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মাঈন উদ্দিন বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটারের কথা বলে এলাকাবাসী থেকে চাঁদা তুলতেন। কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোমিন, কোষাধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন একত্রিত হয়ে বাহার কাউন্সিলরের নির্দেশে বাড়িওয়ালা, ব্যবসায়ীদের থেকে টাকা দাবি করত এবং টাকা না দিলে ময়লা নেওয়া বন্ধ করে দিত, বাসার সামনে ময়লা ফেলে রেখে হেনস্তা করত। এমনকি তার ছত্রছায়ায় থাকা কিশোর গ্যাং সদস্যদের দিয়ে হামলা করত।

স্থানীয়রা জানান, আমির হোসেন বাহার ক্ষমতার অপব্যবহার করে পঞ্চায়েত কমিটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলেন। পরে এলাকাবাসী তা পরিবর্তন করে সমবায় সমিতির রেজিষ্ট্রেশনকৃত ভবন মালিক সমবায় কল্যাণ সমিতি চালু করে। কিন্তু ২০১১ সালে আমির হোসেন বাহার ফের কাউন্সিলর হওয়ার পর পুনরায় কমিটি করে নিজ দলীয় লোকদের ভিড়িয়ে এলাকাবাসীকে জিম্মি করে কমিটির নামে অনিয়ম, চাঁদাবাজী ও দুর্নীতির মহোৎসব শুরু করেন।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, কমিটির সাথে যাদের সাথে সুসম্পর্ক ছিল তারা বিশেষ সুবিধা পেত। প্রত্যেক বাড়িওয়ালা থেকে মাসে ২০০ টাকা ও ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে ৮০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হত। সে হিসেবে পঞ্চায়েত কমিটির ফান্ডে অনেক টাকা থাকার কথা, তবে তারা কোনদিন হিসাব দেয়নি। বরং সে টাকা তারা ব্যক্তিগত ও দলীয় কাজে লাগাতো।

এলাকাবাসীরা বলছেন, হিসেব অনুযায়ী পঞ্চায়েত কমিটির ফান্ডে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা থাকার কথা। কমিটির কোষাধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন ওই টাকা দিয়ে সুদের ব্যবসা করতেন বলে অভিযোগ করেন তারা।

এসব বিষয়ে কথা হয় পঞ্চায়েত কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম ভুঞা বাবুলের সাথে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তাকে কমিটি থেকে বিতাড়িত করেন কাউন্সিলর বাহার। এসব দুর্নীতি শতভাগ সত্য দাবি করে তিনি বলেন, বাহার কমিশনার কমিটির তহবিল থেকে টাকা নিয়ে বিভিন্ন সময় ত্রাণের ব্যবস্থা করত এবং তা নিজের ব্যানারে চালিয়ে দিত। আমি প্রতিবাদ করাতে তিনি আমাকে কমিটি থেকে সরিয়ে দেন।

তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালে তহবিলে ২ লাখ টাকার কিছু বেশি টাকা রেখে এসেছি। পরবর্তীতে টাকা নেওয়ার জন্য তারা বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। তখন কি হয়েছে তা জানা নেই।

কমিটির সদ্য সাবেক সভাপতি মাঈন উদ্দিন বলেন, পঞ্চায়েত কমিটি থেকে বাহার কমিশনার গরীব দুস্থদের সহযোগিতা করার জন্য সহযোগিতা চাইতেন এটা সত্য। তবে ময়লা ফেলে রাখার বিষয়ে ভুঞা বাড়ির সাথে কি হয়েছে তা আমার জানা নেই। কারন সে বাড়ি আমাদের পঞ্চায়েত কমিটির আওতাভুক্ত না।

পঞ্চায়েত কমিটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, টাকা না দিল ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়গুলো সত্য না। পঞ্চায়েত কমিটির অফিসকে দলীয়করণ করার বিষয়ে তিনি বলেন, বাহার কমিশনারের দোকানপাট ছিল, তিনি রাতে এসে এখানে বসতেন অথবা মাঝেমধ্যে এলাকায় মেয়র আসতেন তখন তিনি বসতেন। এছাড়া দলীয় কোন কাজে এটি ব্যবহার হয়নি। কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করেছি। ইভটিজিং প্রতিরোধে কাজ করেছি। টাকা লুটপাট করার ইচ্ছা থাকলে এগুলো করতাম না।

তিনি জানান আরও, আমি ২০২৩ সালে হজ্বে যাওয়ার সময় বাহার কমিশনার আমার পরিবর্তে আব্দুল মোমিন, নিজাম উদ্দিন ও জসিম উদ্দিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আমি দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার সময় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা বর্তমান কমিটিকে বুঝিয়ে দিয়েছি।

এছাড়াও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপের তথ্য দেন স্থানীয়রা। যার মধ্য লিটনের বাসায় কাউন্সিলর বাহারের সহযোগিতায় অসামাজিক কার্যকলাপ চলতো। পুলিশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে আটকও করেছে। এসব বিষয়ে জানতে কাউন্সিলর আমির হোসেন বাহারকে একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। গত ৫ আগস্টের পর থেকে অন্যদের মত বাহারও আত্মগোপন করেছেন।



‘বাহার ভাইয়ের কথায় টাকা তোলা হত’
পঞ্চায়েত কমিটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিনের বিষয়ে নানা অভিযোগ থাকলেও সবকিছু অস্বীকার করেন তিনি। কমিটির টাকার হিসাব জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কিছুই জানি না, আমি বাহার ভাই বললে টাকা তুলতাম ত্রাণের জন্য। কমিটির টাকা তুলে বেতন দিতাম শুধু, বাকি সবকিছু সভাপতি জানেন।

নিজাম উদ্দিন বলেন, বহার কমিশনার রোজার সময় ও করোনার সময় কিছু টাকা উঠাতে বলেছে যাতে গরীব দুস্থদের সহযোগিতা করা যায়। কাউকে জোর দেওয়া হয়নি। উত্তোলিত টাকা দিয়ে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। তবে আমার কাছে সে টাকার হিসাব নেই। বাহার ভাইয়ের নির্দেশে তখন কাজ করেছি। আমার কোন ইখতেয়ার নেই।

মাসিক উদ্ধৃত টাকার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিমাসে বেতন দেয়ার পরেও গাড়ির খরচ, ভ্যান গাড়ি রিং নিতে হয়ে, মোটর নিতে হয়। বাকি টাকার খরচ আমার কাছে নেই। আমি শুধু টাকা কালেলশন করতাম। সবকিছু সভাপতি সেক্রেটারি করতেন। মাসিক যেগুলো কালেকশন হতো আমি বেতন দিয়ে আনুসাঙ্গিক খরচের জন্য রাখতাম এবং কিছু জমানো থাকত। ত্রানের জন্য টাকা উঠানো হলে সেগুলো দিয়ে দেয়া হতো। সেগুলো আমি সভাপতিকে দিয়ে দিতাম। তারা খরচ করত।

নিজের বিষয়ে আনীত অভিযোগ মিথ্যাচার করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি কখনও কারও ক্ষতি করিনি। গরীবের টাকা খাওয়ার ইচ্ছা নাই। আমি কমিটির টাকা দিয়ে ব্যবসা করেছি এমন কেউ প্রমান দিতে পারলে আমি শাস্তি মেনে নিব। আমি নিজে পকেট থেকে টাকা দিয়ে কমিটি চালিয়েছি। অন্যর টাকা আত্মসাৎ এর কোন ইচ্ছা নেই আমার।

তিনি বলেন, বাহার ভাই ঈদের সময় ত্রানের জন্য টাকা তুলতে বলত তখনি টাকা নেওয়া হতো৷ এর বাইরে কোনদিন টাকা নেয়নি। জোর করে কারও থেকে কোনদিন টাকা নেয়া হয়নি।

কমিটির টাকার হিসাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিবছরের হিসাব কমিশনারকে দিয়েছি। বাহার কমিশনারকে প্রত্যেক হিসাব বুঝিয়ে দিয়েছি। কমিশনার কোনদিন টাকা চাইতো না তবে ত্রাণ দেয়ার সময় শর্ট পড়ে গেলে টাকা চাইত। যারা টাকা দিতে চাইতো না তখন বাহার ভাই কড়া কথা বলতো এসব বিষয়ে আমরা জানি না। টাকার পরিমাণ কম থাকাতে ব্যাংকে রাখা হতো না বলে জানান তিনি।

 
নতুন বাড়ি পাহারার জন্যও লাগত টাকা
পঞ্চায়েত কমিটির সাবেক সদস্য আব্দুল মোমিন। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাড়িওয়ালাদের থেকে টাকা উত্তোলন থেকে শুরু করে কাউন্সিলর বাহারের সকল অনৈতিক কাজের সহযোগি ছিলেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে মোমিন বলেন, ট্রান্সমিটার এর জন্য ১ হাজার টাকা উঠানো হতো কারণ নষ্ট হয়ে গেলে সেটি ঠিক করার জন্য লাগত। কমিশনার সভা করে সবাইকে বলত টাকা দেওয়ার জন্য বলতো। যাকাত ফান্ড থেকে বাড়িওয়ালারা টাকা দিত ত্রাণের জন্য। কত টাকা উঠত এটা আমি জানিনা তবে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত উঠত। উদ্ধৃত টাকার হিসাবের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটির টাকা দিয়ে গাড়ি কেনা হয়েছে, সেখানে খরচ হয়েছে। মোটর কেনা হয়েছে বাকি টাকা বাবুল ভাই, নিজাম উদ্দিনের একাউন্টে জমা হতো।

বাড়িওয়ালাদের থেকে টাকা চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, টাকা চাওয়ার বিষয়ে আমি জানিনা। আমি কখনও কারও থেকে চাঁদাবাজি করিনি। তারা ভুল বলতেছে। কমিশনার সবাইকে টাকা অফিসে দিয়ে যাওয়ার জন্য বলতো কিন্তু অনেকে দিত না। আমি কারও থেকে টাকা চাইনাই অফিসে না আসলে সে টাকা আমাদের কাছে দিত। নতুন বাড়ি করলে বাড়ি পাহারা দেয়ার জন্য ২০০ টাকা করে নেয়া হতো। তবে কোন টাকা দাবি করিনাই কারও থেকে।

তিনি বলেন, যা টাকা দেয়া হয়েছে ত্রানের জন্য দেওয়া হয়েছে। বাহার কমিশনার এর সাথে আমার সম্পর্ক ভাল ছিল না। এলাকায় বসবাস করতে হবে সেজন্য তাদের সাথে ভালোভাবে চলেছি। আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানোয় তার সাথে চলেছি। তবে কারও থেকে টাকা নেইনি।


ভবন নির্মাণে দিতে হত চাঁদা
ওয়ার্ডের কোন ভবনের কাজ শুরু হলেই কাউন্সিলর বাহারকে আর্থিক সুবিধা দিতে হতো ভবন মালিকদের। এতে করে পৌরসভার প্ল্যান অমান্যকরাসহ ইচ্ছামত সুযোগ সুবিধা ভোগ করার সুবিধা পেতেন বাড়িওয়ালারা। থাকতেন পঞ্চায়েত কমিটির ভালো নজরে। তবে টাকা না দিতে চাইলে বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হত তাদের।

সরেজমিনে ১৬নং ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় শাহীন একাডেমি রোড ব্যাতীত এসি মার্কেট, জহির উদ্দিন চৌধুরী সড়কে এলাকাতে এখনও বেশ কয়েকটি ভবন নির্মাণের কাজ চলমান আছে। ওয়ার্ডের এ অংশের পঞ্চায়েত কমিটির দেয়া তথ্যমতে, ২০১৬ সালের পর থেকে ওই এলাকায় ৬০ থেকে ৭০টি ভবন নির্মিত হয়েছে। প্রত্যেক ভবন থেকেই আর্থিক সুবিধা নিতেন বাহার কমিশনার।

স্থানীয়রা জানান, ১ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নিতেন বাহার। এতে বিগত সাত বছরে ৭০ টি বাড়ি থেকে ২ লাখ টাকা হিসাব ধরলে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন তিনি।

এসব বিষয়ে সরাসরি কোন বাড়িওয়ালা কথা বলতে রাজি হন নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাড়িওয়ালা জানান, ভবন করার আগেই তাদের কিছু লোক এসে টাকা দেওয়ার কথা বলে। কারও থেকে ২ লাখ কারও থেকে ৩ লাখ এ অনুযায়ী টাকা নিত। অন্যথায় কাজ করতে দিত না, পৌরসভা থেকে দেওয়া প্ল্যান বাতিল করে দিত।

এসব বিষয়ে ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যেসব বাড়িওয়ালা থেকে টাকা নেওয়া হতো তাদের সব ধরনের সুযোগ দেয়া হতো। কখনও তাদের সাথে ঝামেলা হয়নি। বাড়তি নিরাপত্তা ও সুযোগ সুবিধা দিত কাউন্সিলর ও পঞ্চায়েত কমিটি। এতে করে বাড়ি মালিকরা অন্যদের সাথে অন্যায় করলেও তার বিচার হতো না। অন্যের বাড়ির দেওয়াল ভেঙে ফেলার নজিরও এলাকায় রয়েছে। বিচার চাইতে গেলে উলটো ভুক্তভোগীকে শাসানো হতো। তারা বলেন, এক প্রকার এলাকার মানুষকে জিম্মি করে রাখা হয়েছিল।



বাহারকে ‘খুশি’ রাখতে হত!
অভিযোগ আছে স্থানীয় পঞ্চায়েত কমিটির পক্ষ থেকে সাবেক কাউন্সিলর আমির হোসেন বাহারকে খুশি করতে তার গাড়ি কেনার জন্য ৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করছেন কমিটির সভাপতি মাঈন উদ্দিন।

তিনি বলেন, বাহার কমিশনারকে এলাকার মানুষকে সহযোগিতা করার সময় আমরা সহযোগিতা করেছি। তবে ওনাকে ব্যাক্তিগত ভাবে খুশি করার কোন বিষয়ে আমি অবগত নই।

একই কথা বলেন কোষাধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা ওনার নির্দেশে মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য কাজ করতাম। উনি বললে টাকা তুলে ত্রাণ দিতাম। ফান্ডের টাকা ত্রাণের জন্য দেওয়া হতো। ব্যাক্তিগতভাবে দেওয়ার বিষয়ে জানি না।

তবে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, মাঈন উদ্দিন, নিজাম উদ্দিন ও মোমিন বাহার কমিশনারের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতেন। তাকে খুশি করে কমিটির টাকাগুলো নয়ছয় করতেন। যার কারনে গাড়ি ক্রয়ের সময় ৪ লাখ টাকা উপহার দেওয়া হয় পঞ্চায়েত কমিটির ফান্ড থেকে।