জেলায় শুন্যের ঘরে আসেনি কন্যা শিশুর বিয়ের সংখ্যা। কন্যা শিশু বিয়ে দিয়েছেন কিংবা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এমন পরিবারের সংখ্যাও একদম কম নয়। এ প্রসঙ্গে প্রচলিত আইনভীতির চেয়ে শিশু হলেও কন্যাকে ‘উপযুক্ত পাত্রস্থ’ করা এসব পরিবারের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

কন্যা শিশু অথবা বাল্যবিবাহ রোধে দেশে সামাজিক সচেতনতা তৈরি ছাড়াও আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। সন্তান জন্মকালীন মাতৃমৃত্যু রোধ, মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ বেশ কিছু সমস্যা সমাধানে এসব পদক্ষেপ জাতীয়ভাবে নেওয়া হয়েছে। রয়েছে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ প্রকল্প ও জেলা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটি। তবে এসব কার্যক্রম কন্যা শিশুর বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা বন্ধ হয়নি। ফেনীতে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কন্যা শিশুর গড় বিয়ের হার ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। অর্থাৎ, জেলায় ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৮৩ হাজার ৬৯৯ জন কন্যা শিশুর মধ্যে ১ হাজার ৫৩১ জন কন্যা শিশু বিবাহিত। তথ্যগুলো ২০২২ সালের জনশুমারি হতে প্রাপ্ত।

ফেনীতে বাল্যবিবাহ প্রসঙ্গে মহিলা ও শিশু অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাছরীন আক্তার জানান, ২০২৪ সালে প্রথম আট মাসে ২১টি বাল্যবিবাহের চেষ্টা প্রতিহত করা হয়েছে। এসব ঘটনার ৬টিতে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এই তথ্যে দেখা যায়, মাসে গড়ে ২ দশমিক ৬৩টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়েছে।

চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি পরশুরামে ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের বিয়ের আয়োজন করার দায়ে মায়ের ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদ-াদেশ দিয়েছেন পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা।

বাল্যবিবাহ দ-নীয় অপরাধ জেনেও ১৩ বছর বয়সী কন্যার বিয়েছে ফুলগাজীর আমজাদ হাট ইউনিয়নের একটি পরিবার। কন্যা শিশুটির মা জানান, পরিবারে অভাব অনটনে তাঁর বিয়ে হয়েছিল ১২ বছর বয়সে। স্বামীর বাড়িতে এলেও অভাব যায়নি, যে কারণে নিজের কন্যা শিশুকে প্রবাসী পাত্র পাওয়ায় বিয়ে দিয়েছেন, কাবিনে বয়স উল্লেখ করেছেন ১৮ বছর।

একইভাবে, ২০১৯ সালে ফেনী সদরের ফরহাদনগর ইউনিয়নের একটি পরিবার ১১ বছর বয়সে কন্যা শিশুর বিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এই পরিবারও আর্থিক স্বচ্ছলতার কথা ভেবে প্রবাসীর সাথে মেয়ের বিয়ে দেন।

কন্যা শিশুর বিয়ে প্রসঙ্গে নাছরীন আক্তার বলেন, উপযুক্ত পাত্র খোঁজার বিষয়টি সাধারণত নি¤œবিত্ত পরিবারে বেশি দেখা যায়। পরিবারগুলোতে সচেতনতা গড়ে তুলতে নিয়মিত কাজ হয়ে থাকে। তবে বাল্যবিবাহের ক্ষতি জেনেও কিছু পরিবার এমন ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করে। আমরা খোঁজ পেলেই বাল্যবিবাহ বন্ধের ব্যবস্থা করি।

জনশুমারি ২০২২ এ আরও দেখা যায়, জেলায় মেয়েদের গড় বিয়ের বয়স ১৯ দশমিক ৫৮ বছর। তবে ১৫ হতে ১৯ বছর বয়সী মেয়েদের মধ্যে ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ বিবাহিত।