ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট মনোনয়ন বিতর্কের পর এবার ফেনী বিএনপির রাজনীতিতে ঐক্যের সুর শোনা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে দলের ভেতরে মতপার্থক্য ও নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ও নির্বাচনী বাস্তবতা বিবেচনায় এনে নেতাকর্মীরা এক প্ল্যাটফর্মে আসার বার্তা দিচ্ছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের শীর্ষ নেতাদের ইতিবাচক এ মনোভাব নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও।
গতকাল রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে শহরের ইসলামপুর রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক যৌথ সভায় জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে এমন বার্তার কথা উঠে আসে। আগামী ২৫ ডিসেম্বর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে আগমন উপলক্ষ্যে এ সভার আয়োজন করা হয়েছে।
জেলা বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে এতোদিন মতবিরোধ থাকলেও নির্বাচন ঘিরে এবার সকলকে সংযত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে ‘দল আগে, ব্যক্তি পরে’—এই নীতিকে সামনে রেখে নির্বাচনী প্রস্তুতির কথাও বলা হয়েছে।
জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলেন, মনোনয়ন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা স্বাভাবিক। তবে নির্বাচনের মুখে বিভাজন নয়, ঐক্যই আমাদের শক্তি। কেন্দ্র যাদের মনোনয়ন দিয়েছে, তাদের পক্ষে সকলে কাজ করবে-এটিই সিদ্ধান্ত।
সভায় জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহার বলেন, আজ থেকে আমি নিজেই তিনজনের (মিন্টু, জয়নাল, মজনু) সঙ্গে সমন্বয় করব, অন্যরাও করবে। এ নিয়ে আপনারা কোন দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়বেন না। সকলে সুন্দরভাবে মিলে যাবেন। একযোগে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধানের শীষের প্রার্থীকে জয়ী করতে মাঠে কাজ করবেন। এ সময় আগামী ২৩ ডিসেম্বর জেলার সকল উপজেলায় তারেক রহমানের আগমনকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল করার সিদ্ধান্ত হয়।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, আমাদের দল রিভিউ প্রত্যাখ্যান করে অধ্যাপক জয়নাল আবেদিনকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। আমরাও মনোনয়ন চেয়েছিলাম, যারা এতে মনে কষ্ট পেয়েছেন তাদের প্রতি আমার সমবেদনা। বিশেষ একটি ব্যাপার থাকায় ফেনী-২ আসনে আমরা রিভিউ চেয়েছিলাম। বাংলাদেশের একমাত্র জেলা ফেনী, যেখানে রিভিউ চাওয়ার পরে কোথাও কোন মিছিল-মিটিং, অবরোধ বা ভাংচুর হয়নি। এছাড়া দলের ইজ্জত যায় এই ধরনের কোন আন্দোলন করবেন না। অফিসে বেঁধে কাউকে পেটাবেন না। যা যা করেছেন আজ থেকে স্টপ হয়ে যাবেন সবাই।
অন্যদিকে, দলের শীর্ষ নেতাদের এমন বক্তব্যে স্বস্তি প্রকাশ করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাইদুর রহমান জুয়েল বলেন, দলের প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কোনো সাংঘর্ষিক কিছু না করে দলীয় শৃঙ্খলার মধ্যে ব্যতিক্রমী রিভিউ আবেদন করেছিল। মনোনয়ন নিয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা আগে থেকেই বলেছিল ধানের শীষের চূড়ান্ত প্রার্থীর পক্ষে সকলে কাজ করবে। সর্বশেষ গত শনিবার রাতে দলের পক্ষ থেকে অধ্যাপক জয়নাল আবেদিন ভিপিকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তারপর জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের এমন বক্তব্যে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে যে মানসিক দ্বিধাবিভক্তি ছিল সেটি এখন কেটে গেছে।
জেলা যুবদলের আহবায়ক নাসির উদ্দিন খন্দকার দৈনিক ফেনীকে বলেন, মনোনয়ন নিয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসায় সাধুবাদ জানাই। দায়িত্বশীল জায়গা থেকে জেলার শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করেছেন। যেহেতু বিরোধপূর্ণভাবে কাজ করা কিছুটা জটিল, সেখান থেকে আগামী নির্বাচনে বিষয়টি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
