প্রায় ১৪ বছর পর ফেনীর ট্রাঙ্ক রোডে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর জমায়েত করতে দেখা গেছে। রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে ফেনীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আয়োজিত পথসভায় নিজেদের উপস্থিতির কথা জানান দিয়েছে দলটি। দলের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে পথসভায় অংশ নিতে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে হাজির হয়েছিল নেতাকর্মীরা। শহীদ মিনারের সীমানা পেরিয়ে শহরের জিরো পয়েন্টসহ ট্রাঙ্ক রোডের চারপাশ ভরে যায় তাদের প্রাণোচ্ছ্বল উপস্থিতিতে।
এ ব্যাপারে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুফতি মাওলানা আব্দুল হান্নান দৈনিক ফেনীকে বলেন, আওয়ামী সরকারের দমন-পীড়নের মধ্যে বিগত ১৪ বছর ফেনী শহরে এতো বড় জমায়েত করে সমাবেশ করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ সময় পর শহরের প্রাণকেন্দ্রে এমন আয়োজনে নেতাকর্মীরা নতুন করে উজ্জীবিত হয়েছে।
পথসভায় বক্তব্য প্রদানকালে জামায়াত নেতারা বলেন, শেখ হাসিনার দোসররা ঘাপটি মেরে বসে যদি ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করে, তা রুখতে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজনে আরও একটি ৫ আগস্ট সূচনা করা হবে। তারা বলেন, আওয়ামী লীগ ১৬ বছর ধরে দেশকে পৈত্রিক সম্পত্তি ভেবে ১৮ কোটি মানুষকে দাসে পরিণত করেছিল। রাষ্ট্র শক্তিকে কাজে লাগিয়ে হত্যা, দুর্নীতি, লুটপাটের মহোৎসবে মেতেছিল। কিন্তু ছাত্রদের আন্দোলনে তাদের বিদায় নিতে হয়েছে। ছাত্র জনতার এ অর্জনকে ধরে রাখতে হবে।
বক্তব্যে দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের অভিভাবকদের হত্যা করেছে। ২০১৪ থেকে জুলুম নির্যাতন করে আমাদের অনেককে হত্যা করেছে। ফেনীর মত দেশের উন্নতশীল জেলাতেও দখলদাররা জুলুম করেছে। এখন তারা কোথাও নেই, তাদের রেখে নেত্রী পালিয়ে গেছে। এ থেকে আওয়ামী লীগ কর্মীদের শিক্ষা নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের উপর শত জুলুম করা হলেও নেতারা কোথাও যায়নি। মুক্তির আন্দোলন করেছে। নিজের জীবন উৎস্বর্গ করেছে। তারা আমাদের নিষিদ্ধ করেছে, নিবন্ধন বাতিল করেছে। আমরা এসবের কেয়ার করি না। বাংলাদেশ নতুন রুপে আবির্ভাব হয়েছে। এ অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেব না। ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় জীবন বাজি রেখে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
বক্তব্যে দলের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, শেখ হাসিনার দোসররা যদি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তাদেরকে প্রতিহত করতে জামায়াত ইসলামী প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজনে আরও একটি ৫ আগস্ট সৃষ্টি করা হবে। যেকোন ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ও ছাত্র জনতার হাতকে শক্তিশালী করতে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
বক্তব্যে ফেনী জেলা জামায়াতের সাবেক আমির লিকায়ত আলী ভুঞা বলেন, বন্যার্ত ফেনীবাসীর কাছে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এসে ফেনীবাসীকে কৃতজ্ঞ করেছেন। আমাদের লক্ষ্য মানুষের কল্যাণে কাজ করা। ভারত পানি দিয়ে ফেনীকে ভাসিয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করা অবৈধ। আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিচার দাবি করেন তিনি।
জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আ.ন.ম আব্দুর রহিম জানান, ফেনী জেলা জামায়াতের উদ্যোগে ৭ কোটির সমমূল্যের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের সহায়তায় ১৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এরমধ্যে পরশুরাম, ফেনী সদর ও দাগনভুঞাতে ১ হাজার ব্যক্তির প্রত্যেককে ১০০০ টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
ফেনী জেলা জামায়াতের আমির এ কে এম সামছুদ্দিনের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক আনম আব্দুর রহিমের সঞ্চালনায় পথসভায় ফেনী জেলা জামায়াতের জেলা নায়েবে আমির অধ্যাপক আবু ইউছুপ, সেক্রেটারি আব্দুল হান্নানসহ জেলার শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াতকে কেউ দমাতে পারেনি
- ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াত ইসলামীর সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, ছাত্রজনতার আন্দোলনে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে যতবার প্রয়োজন জীবন দেব, তবুও এ স্বাধীনতাকে নৎসাত করতে দেব না। আওয়ামী লীগ ভেবেছিল ৫ আগস্টের আগে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে আন্দোলনকে দমিয়ে ফেলবে। কিন্তু আন্দোলনকে তারা আরও সফলতার দিকে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, জামায়াত ইসলামী তার জায়গায়ইই আছে। শেখ হাসিনা শুধুমাত্র নিষিদ্ধ হয়নি, বাংলাদেশ থেকে পালিয়েছে। এখনও রক্তের দাগ শুকায়নি। এখনও মায়েদের কান্না থামেনি, শেখ হাসিনার দোসররা দেশে ঘাপটি মেরে থেকে যদি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তাদের প্রতিহত করতে জামায়াত ইসলামী প্রস্তুত রয়েছে। আগামী দিনের সকল ষড়যন্ত্র রুখতে যদি প্রতিদিন একবারও যদি ৫ আগস্ট আনতে হয় আমরা প্রস্তুত আছি।
সাবেক এ শিবির নেতা বলেন, এ যুদ্ধ চলছে, এ যুদ্ধ চলবেই। বৈষম্যবিরোধী সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে একমাত্র উপায় ইসলাম। বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী সবাইকে সাথে নিয়ে স্বাধীন অর্থবহ ও সুখী সমৃদ্ধ দেশ গঠনে কাজ করছে। নতুন বাংলাদেশের দায়িত্ব তরুণ সমাজকে নেওয়ার আহবান জানান তিনি।