প্রতিবেশী দেশ ভারত রাজনৈতিকভাবে একটি নির্দিষ্ট দলকে সমর্থন করার কারণে সম্পূর্ণ বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। রোববার (১ সেপ্টেম্বর) ফেনীর বন্যাদুর্গত এলাকা ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়াতে জামায়াতের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শেষে জেলা শহরের গ্র্যান্ড সুলতান কনভেনশন হলে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি।
তাহের বলেন, এটি অপ্রত্যাশিত বন্যা। এটা মানবসৃষ্ট বন্যা। ভারত ভালোবেসে পানি দিয়েছে কিন্তু আমরা তা হজম করতে পারিনি। ভারতের পানি ব্যবস্থাপনা পাকিস্তান আমলেও সুরাহা হয়নি, কোন সরকারের আমলে হয়নি। এখন জনগণের সরকার রয়েছে। পানি প্রবাহের বিষয়টি সামাধান করার জন্য বর্তমান সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। ভারতের পলিসি এমন হওয়া উচিত যাতে আশেপাশের দেশ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তাদের পাশ্ববর্তী পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান কোন দেশই খুশি না। বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে ভারত একটি দলকে সমর্থন করার কারণে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যান্য দেশও এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন না হওয়াতে দেশ ফ্যাসিবাদের দিকে ধাবিত হয়েছিল। একনায়কতন্ত্র মনোভাব গঠিত হয়েছি। আমরা দেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ চাই। জামায়াত ২০০৮ সাল অব্দি নির্বাচন করেছিল। পরবর্তীতে জামায়াত নির্বাচন বয়কট করেছে কারণ দলীয় সরকারের অধীনে জামায়াত নির্বাচন করতে চায়নি। কোন স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদ আজীবনের জন্য টিকে না। এবারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। দেশ আগস্ট মাসে পুনরায় স্বাধীন হয়েছে।
দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিবর্তন প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা প্রয়োজন। সমস্ত সংস্কার করে নির্বাচন সম্ভব নয়, মৌলিক বিষয়গুলো সংস্কার করে একটি নির্বাচন করতে হবে। যেটি ইতিহাসের পাতায় অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জামায়াত ইসলামী সবচাইতে বেশি নির্যাতিত হয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, আমাদের অনেক ত্যাগী নেতাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে অন্যায়ভাবে। রাজনৈতিকভাবে আমরা সকল দলকে ক্ষমা করে দিয়েছি। কিন্তু যারা দেশ লুটপাট করেছে, হত্যা করেছে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিডিআর বিদ্রোহ, হেফাজতের উপর হামলা ও ছাত্র আন্দোলনে যেভাবে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে এগুলা গণহত্যা। জাতিসংঘকে এসবের বিষয়ে তদন্ত করতে বলেছি যাতে জনগণ সঠিক বিচার পায়। দুর্নীতি না করে আইন মেনে দেশ পরিচালনা করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান তিনি। আন্তর্জাতিকভাবে এ বন্যার কারণ খতিয়ে বিচার করার আহবান জানান তিনি৷ পাশাপাশি বাংলাদেশ বিরোধী কোন শক্তি যাতে এ দেশে না আসতে পারে জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন থাকার আহবান জানান তিনি।
জামাতের নিবন্ধন ফিরে পাবার বিষয়ে তিনি বলেন, মামলা চলমান আছে। রায় হলে আমরা ন্যায় বিচার পাব আশা করি। তিনি বলেন, দেশের স্বার্থে সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা হতে পারে। আমরা সকল দলের সাথে আলোচনা করছি। বাকিটা সময় বলে দেবে।
জেলা জামায়াতের আমির এ.কে.এম সামসুদ্দিন জানান, ত্রান বিতরণ কার্যক্রমের পাশাপাশি জামায়াত ইসলামী পুর্নবাসনের জন্য কাজ করছে। ইতোমধ্যে জরিপ করা শুরু হয়েছে৷ আগামী ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত হয়ে যাবে। পরবর্তীতে তাদের পুর্নবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
মতবিনিময়কালে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা মহানগরের জামায়াতের আমির দীন মোহাম্মদ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ সভাপতি এস এম কামাল উদ্দিন, ফেনী জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল হান্নান, সাবেক জেলা আমির অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভুঞা, জেলা প্রচার সম্পাদক আ.ন.ম আব্দুর রহিমসহ জেলা জামায়াত ও শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।