পরপর দুইবার স্থগিত করা হয়েছে ফেনী সদর উপজেলা যুবদলের আহবায়ক কমিটি। শেষবার ১৬ মার্চ কমিটি ঘোষণার ১২ ঘন্টার মধ্যেই স্থগিত করে কেন্দ্রীয় যুবদল। প্রতিবারই সদস্য-সচিবের বিরুদ্ধে উঠেছে সরকার দলীয় নেতাদের সাথে সখ্যতা ও অতি সম্পর্কের অভিযোগ। তবে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন খোন্দকার বলছেন, এটি কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত। কেন্দ্র যেকোনো প্রয়োজনে বা কারণে কমিটি স্থগিত, পরিবর্তনের এখতিয়ার রাখে।
তিনি জানান, দ্বিতীয়বার ঘোষিত আহবায়ক কমিটি স্থগিত করে গতকাল বুধবার কেন্দ্রীয় যুবদলের অফিসিয়াল ফেইসবুক গ্রুপে স্থগিতের নির্দেশ দেন দপ্তর সম্পাদক।
দ্বিতীয়বার ঘোষিত আহবায়ক কমিটিতে সভাপতি ঠিক থাকলেও কয়েক ঘন্টার জন্য সদস্য সচিবের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ফখরুল ইসলাম মাসুক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবদলের একজন পদধারী নেতা অভিযোগ করেন, মাসুকের সাথে তার বাড়ি মোটবী ইউনিয়নের সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে বিশেষ সখ্যতা রয়েছে। সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে জেলার সকল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মামলায় জর্জরিত কিন্তু তার বিরুদ্ধে একটি মামলা নেই। ২০১৮ সালে তার ইউনিয়নে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সেসময়ের থানার এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ একটি অনুষ্ঠান আয়োজনে গেছে। অথচ সেই পুলিশ কর্মকর্তার সময়ে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে।
মোটবী ইউনিয়ন ছাত্রদলের একটি সূত্র জানায়, মাসুক স্থানীয় ছাত্রদল নেতা করিমুল হক সুমন ও ইঞ্জিনিয়ার বেলালের বিরুদ্ধে মামলা করে। এতে সাক্ষী রয়েছে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা।
তবে এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন মাসুক। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন, স্থগিতের কোন চিঠি দেয়া হয়নি। কিছু কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুৎসা রটাচ্ছে, আমি তাদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করবো।
সরকার দলীয়দের সাথে সখ্যতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই, সহাবস্থান থাকতেই পারে।
নিজেকে ত্যাগী ও দলের একনিষ্ঠ কর্মী দাবি করে মাসুক বলেন, ইতোপূর্বে আমার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা ছিল যা বর্তমানে অব্যাহতি পেয়েছি।
কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দল যাকে ইচ্ছা পদ দেবে। ত্যাগীরা পদ পাবে এমন প্রত্যাশা করি।
গত দুইমাস পূর্বে ফেনী জেলা যুবদলের ১১ ইউনিটের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। এতে সদর উপজেলায় আহবায়ক হন মাস্টার নিজাম উদ্দিন এবং সদস্য সচিব হন ফরিদুল ইসলাম রাহাত। এর কিছুদিন পর কমিটি স্থগিত করা হয়।
একই রকম অভিযোগ উঠেছিল রাহাতের বিরুদ্ধে। তার নিজ ইউনিয়ন পরিষদ ধর্মপুরের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন শাকার সাথে অতি সম্পর্কের কারণে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে বলে যুবদলের এক শীর্ষ নেতা জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবদলের একটি ইউনিট নেতা জানান, ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলা শাকার সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। শাকার সাথে রাহাতের অতি সম্পর্কের কথা একটি গ্রুপ লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকে জানায়।
তবে রাহাত এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, দশটি মামলার আসামী হয়েছি। দলের জন্য কারাবরণ করেছি। দলের প্রতি আমার আনুগত্য প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই একটি মহল এসব বলছে। রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসা করি, প্রতিষ্ঠানে অনেকেই আসতে পারে। সখ্যতার বিষয়টি বানোয়াট।
কমিটি স্থগিত প্রসঙ্গে রাহাত বলেন, স্থগিতের কোন চিঠি আমি পাইনি, জেলা থেকেও জানানো হয়নি। সবকিছু ফেইসবুকেই দেখছি।