১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রেইসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর ফেনীতে চলমান আন্দোলন অস্বাভাবিক গতি পেয়েছিল। এমন তথ্য জানান ফেনী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও তৎকালীন ফেনী মহকুমা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহমান বিকম এবং একই কমিটির দপ্তর সম্পাদক মোস্তফা হোসেন।
ফেনীতে ৭ই মার্চে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ছিল না। তবে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সম্প্রচার না করায় ফেনীতে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছিল বলে জানা যায়।
সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব বলেন, ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ সেদিন প্রচারিত হয়নি। এর প্রতিবাদে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ট্রাংক রোডে মিছিল করেছিল। উল্লেখ্য, তৎকালীন মহকুমা আওয়ামী সহ সভাপতি আবদুল মালেক ছিলেন তাঁর বাবা।
এ প্রসঙ্গে আবদুর রহমান জানান, ঢাকায় থাকায় সেদিনের কথা স্পষ্ট মনে নেই। তবে পরের দিন ট্রাংক রোডে মারমুখী মিছিল হয়েছিল। দুইশ হতে আড়াইশ মানুষ তাৎক্ষণিক মিছিলে যোগ দিয়েছিল। গ্রামে গ্রামে ছোট ছোট বাচ্চারা জয় বাংলা বলে মিছিল শুরু করলো। যা দেখে মনে হচ্ছিল, এবার চুড়ান্ত সংগ্রাম অনিবার্য। কারণ ততদিনে আন্দোলন প্রায় সব মানুষের মাঝে দানা বেঁধেছিল।
মোস্তফা হোসেন বলেন, মার্চের শুরু থেকেই ফেনী উত্তাল ছিল। ৭ই মার্চের ভাষণ পরদিন ভোরে রেডিও প্রচার করেছিল। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক ফেনীতেও নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান বিকম জানান, তৎকালীন ফেনীতে আওয়ামী লীগের প্রাণ, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ ও ফেনী মহকুমা আওয়ামী লীগ সভাপতি খাজা আহম্মদের নির্দেশে ৬ মার্চ রাতে ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। সাথে ছিলেন মোস্তফা হোসেন। সকালে পৌঁছানোর পর রেইসকোর্স ময়দানে জনসমুদ্রে উপস্থিত থেকে জ্বালাময়ী ভাষণ শুনি। এরপর খাজা আহম্মদের দেয়া চিঠি নিয়ে ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যাই। সেখানেও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা হোসেন বলেন, খাজা আহম্মদের সাথে বঙ্গবন্ধুর অন্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক ছিল। তিনি মুজিব ভাই সম্বোধন করতেন। আন্দোলন বিষয়ে কখন কি করণীয় তা পূর্বাহ্নে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে কোন না কোনভাবে জেনে নিতেন তিনি। ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খাজা আহম্মদের নির্দেশ ছিল পরবর্তী করণীয় জেনে ফেনী ফিরতে হবে।