ফেনী পৌর এলাকায় ব্যাটারি চালিত টমটম চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ফেনী পৌরসভা। ফেনী শহরে আনুমানিক প্রায় ২০০-৩০০ টমটম চলাচল করে। এর সাথে জড়িয়ে আছে প্রায় ৫ শতাধিক চালকের জীবন জীবিকা। টমটম চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করায় পরিবার পরিজন অনিশ্চিত জীবনের মুখোমুখি হচ্ছেন পৌর এলাকার ৫ শতাধিক টমটম চালক।
টমটম মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি আবুল মনসুর নয়ন বলেন, শহরের সালাউদ্দিন মোড, হাসপাতাল মোড় এবং মহিপাল পাঁচাগাছিয়া রোডে আনুমানিক ২০০ থেকে ২৩০টি টমটম চলাচল করে। এর সাথে প্রায় ৫ শতাধিক চালকের পরিবারের জীবন জীবিকা জড়িত। টমটম চলাচল বন্ধ করে দেয়াতে সবাই এখন দিশেহারা হয়ে আছে। তিনি বলেন, আপাতত পৌরসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মালিক শ্রমিকরা গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘোষণা অনুযায়ী বিআরটিসি টমটম অনুমোদন দেবে বলেছে। সে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি আমরা। তিনি চালকদের জীবন ও জীবিকার কথা বিবেচনা করে সহানুভূতিশীল হয়ে শহরের মিজান রোড পর্যন্ত হলেও সীমিত পরিসরে চলাচলের অনুমতির জন্য পৌরসভাকে অনুরোধ জানান।
শহরের আলীমুদ্দিন এলাকার একজন টমটম চালক ওমর ফারুক বলেন, কিস্তির টাকা দিয়ে গাড়ি নিয়েছি। গাড়ি চালিয়ে পরিবার চালাই। সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালাই। আগে দৈনিক যত টাকা আয় হতো তা দিয়ে সংসার চালাতাম এবং কিস্তির টাকা দিতে পারতাম।
আলী আহমেদ নামে আরেকজন চালক বলেন, আমার মূল উপার্জন এই গাড়ি। গাড়ি চালিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখাসহ পরিবারের খরচ চালাই। গাড়ি চালিয়ে যা পাই তার থেকে মালিককে প্রতিদিন ৩০০ টাকা দিতে হয়। যখন শহরে চলাচলের অনুমতি ছিল প্রতিদিন এক হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারতাম। এখন টমটম বন্ধ করে দেয়াতে ২০০ টাকাও আয় করতে পারছিনা।
কান্না জড়িত কন্ঠে আলী আহমেদ বলেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে দুবেলা দুমুঠো খাবার ও জুটবেনা। তিনি বলেন, নিজে না হয় না খেয়ে থাকলাম ছেলেমেয়েদের কিভাবে না খাইয়ে রাখব। তিনি পৌরসভাকে টমটম চলাচলে অনুমতি দিয়ে লাইসেন্স প্রদান করার অনুরোধ জানান।
টমটম বন্ধ করে দেয়াতে চালকদের পাশাপাশি লোকসানের শিকার হচ্ছেন টমটম মালিক ও টমটম শো-রুমের ব্যবসায়ীরা। পৌর এলাকায় টমটম বন্ধ করে দেয়াতে একদিকে যেমন মালিকপক্ষ লোকসানের শিকার হচ্ছেন অন্যদিকে শোরুমের ব্যবসায়ীরা বেচাবিক্রি ছাড়াই দিন কাটাচ্ছেন।
শহরের পুলিশ লাইনে টমটম শোরুম আকাশ মোটরস এর সত্ত্বাধিকারী কাজী মনির আহমদ বলেন, টমটম যদি অবৈধ হয় তাহলে আমদানি, উৎপাদন কেন বন্ধ করছেনা। আমদানি করার ক্ষেত্রে সরকার রাজস্ব পাচ্ছে কিন্তু আমদানি করতে দিয়ে আমদানিকৃত গাড়ি চলতে দিচ্ছে না। আগে যেখানে প্রতিমাসে ৮-১০ টি গাড়ি বিক্রি হতো এখন ৩টি গাড়িও বিক্রি হয়না।
সালাউদ্দিন মোডের নুর মোটরস এর সত্ত্বাধিকারী মোঃ শাহজাহান বলেন, টমটম অত্যন্ত পরিবেশ বান্ধব। এটি চলাচলে পরিবেশের কোন ক্ষতি হয়না। দেশ এখন বিদ্যুৎ এ স্বয়ংসম্পুর্ণ। বিদ্যুৎ দিয়ে চলা এই গাড়ী দেশের অর্থনৈতিক সম্পদ হবে বলে মনে করেন চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে গাড়ী চলাচলে অনুমতি দেয়া হোক। এতে করে সরকার লাভবান হবে।
সালাউদ্দিন মোড়ের মামুন গেরেজের সত্ত্বাধিকারী আকবর হোসেন মামুন বলেন, আমার নিজের মালিকানাধীন ২০টি টমটম রয়েছে। ২০টি টমটমের মাধ্যমে মাসে ১ লক্ষ টাকার মতো আয় হতো। যার মধ্যে প্রতিমাসে ৪৫ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতাম। সরকারকে বিল দিয়ে এই গাড়ি গুলো চলতো। কিন্তু বন্ধ করে দেয়াতে এখন আর্থিকভাবে লোকসানের শিকার হচ্ছি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন মালিক বলেন, ১২টি গাড়ি রয়েছে আমার। পৌরসভা কিছুদিন চলতে দেয় আবার বন্ধ করে দেয়। এই ১২টি গাড়ির সাথে ১২টি পরিবার এবং আমার নিজের পরিবারের আয় জড়িত। টমটম বন্ধ করে দেয়াতে কোন টাকা উপার্জন হচ্ছেনা। তিনি বলেন, টমটম গুলো আমার পরিবারের আয়ের উৎস। আয় বন্ধ হয়ে গেলে আমার নিজের পরিবারেরও খরচ চালানো কষ্টকর হয়ে যাবে। পৌরসভা অনুমতি দিয়ে যদি লাইসেন্স প্রদান করে ট্যাক্স নেয় আমরা তাও দিতে রাজি। তিনি নির্দিষ্ট কিছু রোডে টমটম চলাচলে অনুমতির দাবি জানান তিনি।