২০২৪ সালে নানা ঘটনায় আলোচনায় ছিল ফেনীর জনপদ। শিক্ষার্থীদের বই উৎসবের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নতুন বছর। এরপর বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে চলে হামলা, মামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা। জুলাইয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রাণহানি, হামলা, মামলার পরে দেশজুড়ে আলোচনায় ছিল স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যাকবলিত ফেনী। বছরের শুরুতে আলোচনায় ছিল ফেনীর পরশুরামে হাত-পা ও মুখ বেঁধে উম্মে সালমা লামিয়া (৭) নামে এক শিশুকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা। ২০২৪ সালের আলোচিত ঘটনাগুলো নিয়ে দৈনিক ফেনীর ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ পড়ুন দ্বিতীয় পর্ব...
পরশুরামে নৃশংস হত্যাকান্ড
৭ বছরের শিশু লামিয়ার খুনি কারা?
নিজেদের পল্লী বিদ্যুতের লোক পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বলেন হেলমেট পরা দুই যুবক। ভেতর থেকে শিশুরা দরজা খুলে দিলে তারা (দুই যুবক) ঘরের ভেতরে ঢুকে লামিয়াকে (৭) স্কচটেপ দিয়ে হাত-পা ও মুখ বেঁধে হত্যা করে। এ সময় বড় বোন ফাতেমা আক্তার নিহা (১২) পালিয়ে গিয়ে পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এ ঘটনার বছর হতে চললেও এখন পর্যন্ত সেই দুই যুবককে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর দেড়টার দিকে জেলার পরশুরাম পৌরসভার পশ্চিম বাঁশপদুয়া এলাকার এয়ার আহাম্মদের ভাড়া বাসায় শিশু লামিয়াকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। এ হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগে নিহতের মা আয়েশা আক্তারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কয়েকমাস কারাভোগের পর বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।
গত ১৫ মার্চ এ ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী লামিয়ার বড় বোন ফাতেমা আক্তার নিহার বর্ণনা অনুযায়ী হত্যাকারীদের ছবি (স্কেচ) এঁকে নিয়েছিল পুলিশ। তবুও পুলিশ ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে না পারায় নিহত শিশুটির পরিবারের হতাশা ও ক্ষোভ বেড়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন রাতে নিহত শিশু লামিয়ার বাবা মো. নূর নবী বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে পরশুরাম থানায় একটি মামলা করেন। ওইদিন রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের মা আয়েশা আক্তার ও সৎ মা রেহানা আক্তারকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৮ ফেব্রুয়ারি সকালে আয়েশাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সৎ মা রেহানাকে বাদীর জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে গ্রেপ্তার আয়েশাকে দুই দফা পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। লামিয়াকে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগে অভিযুক্ত মা আয়েশা কয়েকমাস কারাভোগের পর বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
নিহতের বাবা নূর নবী বলেন, বিচ্ছেদের পরেও আমার আগের স্ত্রী আয়েশার সঙ্গে বিরোধ চলে আসছিল। আমাকে ও আমার বর্তমান স্ত্রীকে ফাঁসাতেই আয়েশা এ হত্যাকা-ের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ঘটনার এতোদিন পার হয়ে গেলেও হত্যাকা-ে সরাসরি সম্পৃক্ত দুই যুবককে শনাক্ত করতে না পারা অত্যন্ত হতাশার।
পরশুরাম মডেল থানার তৎকালীন ওসি শাহাদাত হোসেন ইতোপূর্বে জানিয়েছিলেন, শিশু লামিয়া হত্যাকা-ে জড়িত সন্দেহে লামিয়ার মা ও সৎ মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে নূর নবীর প্রথম স্ত্রী নিহত লামিয়ার মা আয়েশা আক্তার হত্যাকা-ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে সৎ মা রেহানার জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, এ ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী নিহার কাছ থেকে বিবরণ শুনে হত্যাকারীদের ছবি স্কেচ করানো হয়েছে। আঁকা স্কেচ ইতোমধ্যে দেশের সব থানায় পাঠানো হয়েছে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি ফেনী জেনারেল হাসপাতালে লামিয়ার ময়নাতদন্ত শেষে ওইদিন বিকেলে পরশুরামের বাঁশপদুয়া গ্রামে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরশুরাম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল হাকিম বলেন, সম্প্রতি পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় এ মামলার অগ্রগতির বিষয়ে একটি দল করা হয়েছে। শিগগিরই এ মামলার চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।