ফুলগাজীর আমজাদহাট ইউনিয়নে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কার্ড নিয়ে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিত্তশালী স্বজনদের দরিদ্র দেখিয়ে তাদের নামে টিসিবির কার্ড বরাদ্দ দিয়েছেন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর হোসেন মীরুসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। দৈনিক ফেনীর অনুসন্ধানে এসব অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। এতে প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সুবিধার্থে আমজাদহাটে টিসিবির ৮০৫টি কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, যার বেশির ভাগ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের স্বজনদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ কার্ডের সুবিধা বঞ্চিত স্থানীয় মানুষদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতাদের স্বজন হওয়ার সুবাধে বিত্তশালী ওইসব পরিবারের সদস্যদের দরিদ্র দেখিয়ে তাদেরকে টিসিবির কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

দৈনিক ফেনীর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, টিসিবির কার্ড পেয়েছেন আমজাদহাটের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রুবিনা আক্তার নামে এক নারী। সরেজমিনে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, পারিবারিকভাবে তিনি বেশ স্বচ্ছল। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিত্তশালী হলেও দরিদ্র ও অস্বচ্ছল দেখিয়ে তার নামে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা মফিজুর রহমান টিসিবির কার্ড বরাদ্দ দিয়েছেন।

টিসিবির কার্ড বরাদ্দ পেয়েছেন ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের করিম উল্যাহ নামে অপর এক ব্যক্তি। অভিযোগ রয়েছে, তাকেও দরিদ্র দেখিয়ে টিসিবির কার্ড বরাদ্দ দিয়েছেন বর্তমান ইউপি সদস্য ও বিএনপি নেতা রহিম উল্যাহ। সম্পর্কে রহিম উল্লাহ তার আপন ভাই।

স্বচ্ছল পরিবারের হলেও আমজাদহাট ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি হওয়ার সুবাধে টিসিবি কার্ড বরাদ্দ পেয়েছেন মো.জহির উদ্দিন রনিও। এছাড়া এক পরিবারের একাধিক সদস্যের নামেও কার্ড বরাদ্দ রয়েছে।

একই ওয়ার্ডের সরকারি চাকরিজীবী মোহাম্মদ রাসেলের নামেও টিসিবির কার্ড বরাদ্দ রয়েছে। নিজেকে কর্মহীন দেখিয়ে এ কার্ড বরাদ্দ পেয়েছেন তিনি।

শুধু স্বজনরাই টিসিবির কার্ড বরাদ্দ রয়েছে তা নয়, ওই ওয়ার্ডের আজিজুল হক জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি জানান, তার নামে টিসিবির টিসিবির স্মার্ট কার্ড রয়েছে। অথচ তা তিনি নিজেই জানেন না। তার নামে বরাদ্দকৃত এ কার্ড কে ব্যবহার করছে তাও তিনি জানেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, ক্ষমতার অপব্যবহার করে মীরু ও তার দলের নেতাকর্মীরা এসব কার্ড মানুষের কাছে বিক্রি করেছে। নিজ দলের কর্মীদের দিয়েছে। কিন্তু এলাকায় অনেক অসহায় মানুষ রয়েছে যারা এ কার্ডের সুবিধা প্রাপ্ত হতেন।

তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মীরুর কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে সংযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের আওয়ামী লীগ সরকারে পতনের পর থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সকলে গা ঢাকা দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে ইউপি সচিব আমিনুল করিম আমিন জানান, টিসিবির যেসব কার্ডে রাজনৈতিক কোটা, স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে সেগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। বর্তমানে কার্ডধারী ছাড়াও অস্বচ্ছল পরিবার পণ্য কিনতে এলে তাদেরও দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া জানান, প্রত্যেকটা কার্ড সরাসরি যাচাই-বাছাই করে নভেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা আছে। কোন পরিবার যদি একাধিক কার্ডের সুবিধা ভোগ করে তাহলে তা বাতিল করা হবে। এছাড়াও কোন স্বচ্ছল পরিবার টিসিবির কার্ড পেলে তা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড ছাড়াই নির্ধারিত স্থান থেকে চাল, ডাল ও তেল ন্যায্য মূল্যে কিনতে পারছেন ক্রেতারা।