ফুলগাজীর মুন্সীরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ তারালিয়া গ্রামের মৃত শফিউল্লাহর একমাত্র ছেলে আবু বক্কর। পেশায় রাজমিস্ত্রী। গত আগস্ট মাসের শেষে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অবিরাম বৃষ্টিতে সৃষ্ট শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় ভেঙে পড়ে গৃহ মালিক ৩৭ বছরের আবু বক্করের পুরনো চৌচালা টিনের ঘর। গভীর রাতে ৫ বছরের শিশু সন্তান রাফায়েতসহ আবু বক্কর ঘুমের ঘোরে আচ্ছন্ন তখনই পানির শোঁ শোঁ শব্দে স্ত্রী বিবি কুলছুমের (৩০) ঘুম ভেঙে যায়।

পশেই শুয়ে ছিলেন মুন্সীরহাট আলী আজম স্কুলের ৯ম শ্রেণীতে পড়ুয়া আবু বক্করের পঞ্চদশী মেয়ে রাত্রি। গভীর রাত্রির অন্ধকারে বাড়ির পাশে প্রবাহিত গথিয়া খালের অদূরে অসংখ্য প্রতিবেশীর শোরগোলের মধ্যে কিংকর্তব্যবিমূঢ় আবু বক্কর অনেকের মতোই এক কাপড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পাশের একটি দালান ঘরে আশ্রয় নেন। ততক্ষণে আবু বক্করের উপরে টিনের চালার গুদাম ঘরটি ন্যুঁয়ে পড়ে পানিতে। হতচকিত স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ভোরের আলো ফুটিতেই যেন আবু বক্করের স্বপ্ন পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছিল এ সর্বনাশা বন্যা। চোখেমুখে শুধু হতাশা স্ত্রী কুলছুমের নিতান্তই আপনজনটির দু'হাতের শক্তি স্বামী বক্করের দৈনিক শ্রমের আয় ছাড়া নেই কোন অবলম্বন।

আবু বক্করের বড় মেয়ে অষ্টাদশী রিয়াকে বিয়ে দিয়েছেন দু-মাস আগে। এখনো মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে ঋণের ভারে জর্জরিত সাদাসিধে আবু বক্কর ফ্যালফ্যাল করে অজানা গন্তব্যের দিকে তাকিয়ে থাকে।

বন্যা পরবর্তী সময়ে কতো ত্রাণ, অর্থ সহযোগিতা আসে কিন্তু কর্মহীন আবু বক্করের গ্রামের এক কোণের এই ভাঙা গৃহে এসব পৌঁছায় না। চারপাশে শুধুই একাকিত্ব বোধ আবু বক্করের এই ভেবে যে, ৭৫ বয়সের বৃদ্ধা মা মরিয়ম নেছা, স্ত্রী কুলছুম ও ২ সন্তানের অন্নের সংস্থান ও গৃহের ব্যবস্থা আদৌও সম্ভব হবে কী। আবু বক্কর এজন্য সমাজের বিত্তশালীদের সহযোগিতা প্রত্যাশী।