গৃহপালিত প্রাণীদের মধ্যে আনুগত্য ও প্রভু ভক্তিতে কুকুর ও বিড়াল অন্যতম, কারণ গৃহপালিত অন্যান্য প্রাণীদের বেধে রাখতে হয়। একমাত্র কুকুর ও বিড়ালকে বাধার প্রয়োজন হয় না। বন্দি না থেকে, ছাড়া থেকেও এরা মনিবকে ছেড়ে কোথাও পালায় না। ঘুরে ফিরে ঠিকই মনিব গৃহে ফিরে আসে। এখানে আলোচ্য বিষয় - ‘কুকুর’। শব্দ স্রষ্টা এই প্রাণীটি বুঝাতে ‘কুকুর’ শব্দটি কেন ব্যবহার করেছিলেন, এখানে তার যৌক্তিকতার ভিত খোঁজা হবে।


একটি কুকুর, তাকে (কুকুরটিকে) আশ্রয়, প্রশ্রয় ও খাদ্যের যোগান দাতা হিসেবে একজন মানুষকে মনিব; মনিবের পরিবার পরিজনদের- মনিব পরিবার। মনিবের বাড়িকে মনিব বাড়ি হিসাবে বিবেচনায় এনে গৃহপালিতরূপে জীবন ধারণে অভ্যস্থ হয়ে ওঠে। অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণীদের ন্যায় চার দেয়ালে, খাঁচায় বা রশিতে বেধে রাখতে হয় না এদের। আশ্রয়, প্রশ্রয়, খাদ্য ও ভালোবাসার ডোরে বাঁধা থাকে আজীবন একান্ত অনুগত প্রভুভক্ত হয়ে।


কুকুরের এমন কিছু শারীরবৃত্তীয় কারণ রয়েছে যার কারণে- কুকুর কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রাণী এমন কি মানুষের চেয়েও উল্লেখযোগ্য স্বাতন্ত্রতার অধিকারী। যেমন, খাদ্য গ্রহণের বেলায় - একনাগাড়ে তিন মাস কিছু না খেয়েও কুকুর বেঁচে থেকে জীবন ধারণ করতে পারে। শ্রবণ শক্তির বেলায়ও কুকুর অন্যদের তুলনায় স্বতন্ত্র। এদের শ্রবণেন্দ্রিয় সদা সজাগ থাকে, এমন কি ঘুম গেলেও তাদের শ্রবণেন্দ্রিয় তখনও থাকে উৎকর্ণ। মনে করুন মনিব গৃহে চোর বা শিয়াল অথবা নিজেকে আড়ালে তথা গোপন রেখে স্বীয় সার্থ হাসিলের অভিসন্ধি নিয়ে যখন আসে, তখন তো তারা খুব সর্তকতার সাথে পা টিপে টিপে ফেলে নিঃশব্দেই আসে, কোন শব্দ যেন না হয় সেটাই তাদের লক্ষ্য। নিঃশব্দে পা ফেলে পা টিপে চলতে গেলেও তার পরও সেই নিঃশব্দ পদচারণায় যে ইনফ্রাসনিক শব্দ সৃষ্টি হয় তার পরিমাণ ২০ হার্জেও কম। কুকুরের শ্রবণ সীমা ১৫০০০ হার্জ থেকে ২৫০০০ হার্জ পর্যন্ত। তাই কুকুর ২০ হার্জের কম কিন্তু ১৫ হার্জের বেশি শব্দ কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পায়। এ কারণেই ঘুমে থাকলেও কুকুর তার সদা উৎকর্ণ কানে সে শব্দ শুনতে পেয়ে জেগে ওঠে এবং সাবধান করার জন্য ঘেউ ঘেউ শব্দে ডেকে উঠে। ততক্ষণে চোর বা শিয়াল গোপন অভিসন্ধি যুক্ত জন গা ঢাকা দেয়ায় মনিব উঠে হয়তো কিছুই না দেখে কুকুরের প্রতি বিরক্ত বোধ করে। পুনরায় শুয়ে পড়ে। কুকুরের ডাককে আর পাত্তা দেয় না। পরের দিন দেখা গেল মনিব গৃহে চোর বা শিয়াল হানা দিয়েছে ঠিকই। চোরাই গেছে মনিবের সম্পদ। কুকুরের ঘ্রাণ শক্তি এত প্রখর যে তা একটি উদাহরণের মাধ্যমে ধারণা দিতে চেয়েছেন - জেমস ওয়াকার, তিনি ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির সেন্সর রির্চাজ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক। তিনি তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে একটি গবেষণায় কুকুরের ঘ্রাণ শক্তির যে তথ্য পেয়েছেন সেইটি বুঝানোর জন্য- কুকুরের ঘ্রাণ ক্ষমতাকে যদি দৃষ্টি শক্তির সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাহলে মানুষের দৃষ্টি শক্তি যেখানে এক মাইলের তিন ভাগের এক ভাগ দূরত্বের বেশি প্রশারিত হয় না, সেখানে কুকুরের দৃষ্টি শক্তি তিন হাজার মাইলের বেশি দূরত্ব দেখতে সক্ষম। পাড়ায় আমরা যে নেড়িকুকুর দেখি তাদের ঘ্রাণশক্তিই এমন প্রখর অর্থাৎ মানুষের ঘ্রাণশক্তির তুলনায় কুকুরের ঘ্রাণশক্তি দশ হাজার গুন বেশি। বিদেশী প্রজাতি কুকুরদের বিশেষ করে প্রশিক্ষিত পুলিশ কুকুরদের এই ঘ্রাণ ক্ষমতা এক লক্ষ গুন পর্যন্ত বেশি হয় মানুষের থেকে। কুকুরের এই অসাধারণ ঘ্রাণশক্তির রহস্যটা কি? রহস্যটা এই যে- আমাদের মস্তিষ্কের তুলনায় প্রায় চল্লিশ গুন বেশি অংশ কুকুরের মস্তিষ্কের ঘ্রাণ সংক্্রান্ত কার্যাবলী নিয়ন্ত্রনের জন্য বরাদ্দ। মানুষের নাকে যেখানে ষাট লক্ষ ঘ্রাণ রিসেপ্টর রয়েছে, কুকুরের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা ত্রিশ কোটি। এখানে আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে কুকুরের যা তাকে অন্য সব প্রাণীর থেকে স¦তন্ত্র করে তুলেছে ঘ্রাণ ক্ষমতার বিষয়ে - সেটা তার ঘ্রাণ নেওয়ার পদ্ধতি। আমাদের শ^াস গ্রহণ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হলো আমাদের নাকে শ^াসবায়ু আর ঘ্রাণ গ্রহণের পথ একটাই। ফলে আমরা যখন শ^াস ছাড়ি, তার সাথে সাথে গ্রহণ করা ঘ্রাণ অনুগুলো বেরিয়ে যায় এবং আমরাও কোনো ঘ্রাণ অনু সঞ্চয় করে রাখতে পারি না। কুকুরের শ্বাস গ্রহণ আর ঘ্রাণ নেওয়ার এই পরিকাঠামোটাই আলাদা আলাদা ভাবে গঠিত। কুকুর যখন শ্বাস গ্রহণ করে সেই গৃহীত শ^াস বায়ুর বারো শতাংশ চলে যায় নাকের পেছনে অবস্থিত ঘ্রাণ প্রকোষ্ঠে, আর অবশিষ্ট বায়ু প্রবেশ করে ফুসফুসে। এবার কুকুর যখন শ^াস ত্যাগ করে, ত্যাগ করা বায়ু আমাদের মত প্রবেশ পথ দিয়েই বেরিয়ে না গিয়ে নাসারন্ধ্রের দুপাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। আর মধ্যিখান দিয়ে শ^াসবায়ু নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করতে থাকে। ফলতঃ ঘ্রাণ গ্রহণ অবিরাম চলতেই থাকে। এটা ছাড়াও কুকুরের নাক আরও একভাবে তাকে ঘ্রাণ ক্ষমতার ক্ষেত্রে অভিসংবাদি করে তুলেছে। কুকুরের নাকের ডগা সর্বদা ভেজা থাকে। ক্রমাগত মিউকাস নিঃসরণের ফলে নাকের ডগা ভিজে থাকে, আর এই ভিজে থাকার একটা দারুন সুবিধাও আছে। ভেজা নাকে ঘ্রাণ অনুগুলোও আটকে থাকে যা গন্ধ শুকে চিনতে কুকুরকে সাহায্য করে।


খাদ্যাভ্যাসের দিক দিয়ে প্রকৃতিগত ভাবে কুকুর আমিষাশী হলেও খাদ্য তালিকায় তার আমিষ যেমন আছে তেমনি আছে নিরামিষও। মানুষের উচ্ছিষ্ট এমন কি মানুষের মলও আছে কুকুরের খাদ্য তালিকায়। সভ্যতার ক্রমবিকাশে এখন আর খোলা পায়খানা দেখা না গেলেও ত্রিশ পঁয়ত্রিশ বছর আগেও (১৯৯০ খ্রীঃ পর্যন্ত) খোলা পায়খানা দেখা যেত। তখন বা তারও আগে মানুষ নদীর ধারে, জমির আলে, বন-জঙ্গলে-ঝোপ আড়ালে মল ত্যাগ করত। দেখা যেত মানুষ মল ত্যাগ করে উঠে আসার পর পরই ক্ষুধার্থ কুকুর সদ্যত্যাগী মল চেটে খেয়ে নিচ্ছে গপাগপ করে। প্রাকৃতিক ভাবেই জীবন ধারণের নিমিত্তে খাদ্য গ্রহণ বিপাক ক্রিয়া শেষে উৎপাদিত মল ত্যাগ রূপ জৈবিক ক্রিয়া প্রাকৃতিক ভাবেই প্রাণী জগতের স্বাভাবিক ধর্ম। মানুষের প্রাকৃতিক ভাবে নিয়মিত মল ত্যাগ করা এবং কুকুর মানুষের মল খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করার কারণে কুকুরের খাদ্য তালিকায় এই সহজ উৎসটির কাছাকাছি থাকতেই কুকুরের মানুষের কাছাকাছি আসা। মানুষ যখন যেদিকে যায় - মানুষকে অনুসরণ করে তার সাথে ঘুরে ফেরা; কারণ কে কখন কোথায় মল ত্যাগ করে - তা গ্রহণের নিমিত্তেই; ফলে মানুষের সাথে ভাব হয়ে যায় কুকুরের। মানুষ যখন গুহাবাসী ছিল তখন গুহামুখে অবস্থান করত কুকুর। আর যখন গৃহবাসী হল তখন দরজার পাশে অবস্থান নিল কুকুর। মানুষ যখন রাতে ঘুমের কোলে নিদ্রামগ্ন থাকে কুকুর তখন গৃহ পাশে অবস্থান নেয়। গুহামুখে বা গৃহদ্বারে কুকুর অবস্থান নেয়ার কারণ – কখন কার প্রকৃতির ডাক আসে কে কখন প্রকৃতিরে ডাকে সাড়া দিতে যাবে, তার তো কোনো দিন ক্ষণ ঠিক নেই। তাই সদা উৎকর্ণ কুকুর গৃহদ্বারে অবস্থান নেয়। যা তার (কুকুরের) স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যে রূপ নিয়েছে। কুকুর যদি ঘুমিয়েও পড়ে, তখনও কিন্তু তার শ্রবণ শক্তি ক্রিয়াশীল থাকে - সদা উৎকর্ণ থাকে কুকুর। কুকুরের নিদ্রা অবস্থায় তার ঘ্রাণশক্তি থাকে নিষ্ক্রিয়; আগে আলোচনা করা হয়েছে যে - কুকুরের শ্রবণ সীমা ১৫০০০ হার্জ থেকে ২৫০০০ হার্জ পর্যন্ত। তাই কুকুর ২০ হার্জের কম কিন্তু ১৫ হার্জের বেশি শব্দ কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পায়। এ কারণেই ঘুমে থাকলেও কুকুর তার সদা উৎকর্ণ কানে নিঃশব্দে পা ফেলে পা টিপে চলতে গেলেও তার পরও সেই নিঃশব্দ পদচারণায় যে ইনফ্রাসনিক শব্দ সৃষ্টি হয় তার পরিমান যদিও ২০ হার্জের কম, তার পরও কুকুরের সদা উৎকর্ণ কানে নিঃশব্দে পা টিপে চলার সেই ইনফ্রাসনিক শব্দ শুনে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। যেই কুকুরের ঘুম ভেঙ্গে যায়- তাতেই তার ঘ্রাণ ক্ষমতা ক্রিয়াশীল হয়ে উঠে। অতি সংবেদনশীল ঘ্রাণ ক্ষমতার কল্যাণে মুহূর্তেই কুকুর বুঝে নেয় বাড়িতে বহিরাগতের অনুপ্রবেশ ঘটেছে কি না, সে মানুষ বা অন্য যে কোন প্রাণীই হোক না কেন। আর তখনই সে ঘেউ ঘেউ করে ডেকে উঠে। তাড়িয়ে ছুটে বহিরাগতকে। কুকুরের হঠাৎ ডাকে ও দৌড় ঝাঁপে গৃহস্বামীর ঘুম ভেঙ্গে গেলে- কুকুরের ডাকের কারণ অনুসন্ধান যতক্ষণে করতে যায় ততক্ষণে মতলববাজ বহিরাগত গা ঢাকা দিয়ে নিজেকে আড়াল করে ফেলে। ফলে কুকুরের হাঁক-ডাক, দৌড়-ঝাঁপের কারণ বা আলামত দেখতে না পেয়ে গৃহস্বামী পুনরায় ঘুমিয়ে পড়েন। সুযোগ বুঝে সুবিধামত মতলববাজ বহিরাগত পুনরায় অভিসন্ধি পুরণে আবারও ক্রিয়াশীল হয়ে উঠে। যাথারীতি কুকুর আবারও হাঁক-ডাক, দৌড়-ঝাঁপ শুরু করে। প্রথমবার কুকুরের ডাক শুনে - অনুসন্ধানে বহিরাগমনের কোন আলামত না পাওয়ার কারণে গৃহস্বামী কুকুরের উপর বিরক্ত বোধ করে অলসনিদ্রায় নিমগ্ন থাকে। এই সুযোগে হানাদার অনুপ্রবেশকারী তার উদ্দেশ্য হাসিল করে কেটে পড়ে। রাত শেষে পরের দিন গৃহস্থ দেখেন তার কিছু না কিছু খোয়া গেছে - হয় গৃহপালিত পশু-পাখি, বাড়ির বাগানের ফল-ফলাদির বা গৃহের কোন মূল্যবান সম্পদ। যে রাতেই কুকুর ডাকাডাকি করে - পরের দিন দেখা যা গৃহস্থের কিছু না কিছু খোয়া গেছে। বৈদ্যুতিক বাতি, টর্চ লাইট, সার্চ লাইটের মত তীব্র জোরালো আলোর প্রযুক্তি ও তার ব্যবহার কিংবা নাইটভিশন সিসি ক্যামেরার ব্যবহার শুরুর আগে; রাত আঁধারে আলোর উৎস বলতে- চাঁদ, তারা, জোনাকির মিটিমিটি আলো; আগুন ও আলোর ব্যবহার শিখার পর - মশাল, মাটির প্রদীপ, কেরোসিনের দীপশিখা, হারিকেন এসবই ছিল ভরসা। মশাল, মাটির প্রদীপ, হারিকেন বা কেরোসিনের দীপশিখা থেকে উৎপন্ন আলো - রাত আঁধারে আলোর উৎসমূল থেকে মাত্র কয়েক ফুট ব্যাসের একটি আলোকবৃত্ত রচনা করে। রাত আঁধারে আলোর উৎস ব্যবহারকারীর দৃষ্টিসীমা তখন কেবল ঐ আলোক বৃত্তে বন্দি হয়ে পড়ে। রাত আঁধারে ব্যবহৃত আলোর উৎসের সৃষ্ট আলোকবৃত্তের বাইরের আঁধার জগত আরো ঘুটঘুটে ঘন অন্ধকার হয়ে পড়ে। রাতে আলোর উৎস ব্যবহারকারীর দৃষ্টিসীমা সেই আঁধার ভেদ করতে পারে না। কুকুরের হাঁকডাকে সজাগ হয়ে গৃহস্বামী- আলো জে¦লে কুকুরের ডাকাডাকির কারণ অনুসন্ধান শুরু করতে যে সময় লাগে - ততক্ষণে মতলববাজ হানাদার নিরাপদে গা ঢাকা দেয়। গৃহস্বামী বাড়ির চারপাশ দেখে নিরাপদ ভেবে, কুকুরের উপর বিরক্ত হয়ে আবার শয্যা গ্রহণ করেন, একসময় ঘুমের কোলে ঢলেও পড়েন। সময় ও সুযোগ বুঝে মতলববাজ হানাদার পুনরায় তার উদ্দেশ্য হাসিল করতে সক্রিয় হয়ে উঠে। যথারীতি কুকুরও আবার ডাকাডাকি শুরু করে। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে সরজমিন পরিদর্শণের অভিজ্ঞতার আলোকে গৃহস্বামী কুকুরের উপর বিরক্ত বোধ করে এবং আলস্যে গা ঢেলে দিয়ে একসময় হয়তো ঘুমিয়েও পড়ে। পরের দিন গৃহস্বামী দেখেন, রাতে তার বাড়িতে মতলববাজ হানাদার এসেছিল এবং খোয়া গেছে তার সম্পদ। এই যে রাতে কুকুরের ডাকাডাকি এবং পরের দিন গৃহস্বামীর ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার নজির- মানুষের মনে এক বদ্ধমূল ধারণার জন্ম দেয়; মানুষ মনে করতে শুরু করে - কুকুর যে রাতে ডাকাডাকি করে, অনুসন্ধানে তখন কিছু বুঝা না গেলেও পরের দিন ক্ষয়-ক্ষতির একটা আলামত ঠিকই দৃশ্যমান হয়ে উঠে। সেই থেকে কুকুরের ডাকাডাকিকে - ‘কু’ অর্থে, অমঙ্গল জনক ধ্বনি ভাবার শুরু হল। ভাষায় ভাব বিনিময়ের স্বার্থে এই প্রাণীটিকে একটি নামে চিহ্নিত করতে গিয়ে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে কুকুরের ডাকাডাকির ধ্বনিকে অমঙ্গল জনক ভেবেই, তারই আলোকে এই প্রাণীটিকে- ‘কুর্কুর’ নামে বিদিত করেন শব্দস্রষ্টা। ‘কুর্কুর’ এই শব্দটির ব্যবহার অথর্ববেদে পাওয়া যায়। ‘কুর্কুর’ শব্দটিকে ভাংলে যে বর্ণগুলো পাওয়া যায় তা - কু + র্ ( রেফ্/র ) + কু + র। এক্ষেত্রে, কু-খারাপ বা অমঙ্গল জনক অর্থে এবং র - ধ্বনী বা শব্দ তথা আওয়াজ বুঝাতে শব্দস্রষ্টা ব্যবহার করেছিলেন এবং কুকুরের ডাকাডাকি যে অমঙ্গলের তা জোরের সাথে তথা দৃঢ়তার সাথে বুঝানোর জন্য কু + র-এর দ্বিত্ব ব্যবহার করেছিলেন শব্দস্রষ্টা। ভাষায় শব্দটির ব্যবহার হতে গিয়ে উচ্চারণের সহজীকরণের নিমিত্তে ‘কুর্কুর’ শব্দের রেফ্ (র্ /র) বর্ণটি একসময় হারিয়ে যায়। এখনো এমন নজির অনেক পাওয়া যাবে, যেমন লক্ষ, মানে একশত হাজার-এর একটি সংখ্যা এবং লক্ষ্য, মানে - উদ্দেশ্য। লক্ষ্য শব্দের সাথে উপযোগ করে উপলক্ষ্য শব্দটি ভাষায় যে অর্থে ব্যবহৃত হত - বর্তমানে য-ফলা (্য) বাদ দিয়ে, একই অর্থে উপলক্ষ বা উপলক্ষে শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে। ঠিক এমনটি করে ব্যবহার হতে হতে ‘কুর্কুর’ শব্দটি এখন ‘কুকুর’ শব্দে একই অর্থে ভাষায় ব্যবহার হয়ে চলেছে।

 

পরবর্তী পর্ব :: ৯
চোখ রাখুন ধারাবাহিকে