২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ।। ফেনী ডেস্ক ।।


ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রাম সিটিগেট থেকে মিরসরাই উপজেলার ধুমঘাট সেতু পর্যন্ত ৬৬ কিলোমিটার যেন ‘ডেথ’ রোড। পরিসংখ্যান মতে, গত এক বছরে সড়কটির এলাকায় ২৫৮টি দুর্ঘটনায় অকালে প্রাণ হারিয়েছে ৪৬জন। যাতে আহত হয়েছে আরও ৩১৭ জন। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে।


মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের হিসাবমতে, গত এক বছরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড উপজেলার ৩৮ কিলোমিটার এলাকায় ১৮৭টি ও মিরসরাইয়ের ২৮ কিলোমিটারে ৭১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনায় সীতাকুণ্ড এলাকায় নিহত হয়েছে ২৬ জন। আহতের সংখ্যা ২৭১। এই সময়ে মিরসরাই উপজেলায় নিহত হয় ২০ জন, আহত হয়েছে ১০০ জন।


গতকালও সড়কে মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হয়েছে এক ব্যাংক কর্মকর্তা ও তাঁর দুই কন্যাসহ তিনজনের নাম। এসব দুর্ঘটনার বড় কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে সড়কের ওপর থামানো গাড়িতে চলন্ত গাড়ির ধাক্কা, সহকারীকে দিয়ে গাড়ি চালানো, নিয়ম মেনে ইউটার্ন ব্যবহার না করা, পাল্লা দেওয়া ও চোখে ঘুম নিয়ে চালানো।


হাইওয়ে পুলিশ বলছে, মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে এর মধ্যে মাদকাসক্ত চালক শনাক্ত, সিসি ক্যামেরা লাগানোসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন তাঁরা।


কোথায় বেশি দুর্ঘটনা
হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামের সিটিগেট থেকে মিরসরাইয়ের ধুমঘাট সেতু পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৬৬ কিলোমিটার এলাকায় বারবার দুর্ঘটনা ঘটে, এমন স্থান আছে ৮টি। এগুলো হচ্ছে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট বন্দর সংযোগ সড়ক, পিএইচপি গেট, জিপিএইচ কারখানা এলাকা, গুল আহমদ জুট মিল আর মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া বাইপাস সড়ক, সোনাপাহাড় এলাকা, বিএসআরএম কারখানা এলাকা ও বারিয়ারহাট বাজার।


সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের টিম লিডার মো. সাদেক হাসান বলেন, গত দেড় মাসে সীতাকুণ্ডের গুল আহমেদ জুট মিল এলাকায় চারটি দুর্ঘটনা ঘটে, যাতে মারা যায় তিন ব্যক্তি।


মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা মো. তানবীর আহমেদ বলেন, গত এক বছরে মিরসরাইয়ের বিএসআরএম কারখানা এলাকায় এক বছরে ৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

কেন এত দুর্ঘটনা
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (উপপরিদর্শক) মো. সোহেল সরকার বলেন, ‘মিরসরাইয়ে এখন মহাসড়কে দুর্ঘটনার বড় একটি কারণ হচ্ছে রাতে রাস্তার ওপর গাড়ি থামিয়ে রাখা। এতে পেছন থেকে আসা চলন্ত গাড়ির ধাক্কায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। এটি রোধে এরই মধ্যে আমরা মহাসড়কের পাশে থাকা রেস্তোরাঁগুলো রাত ১২টার পর বন্ধ রাখতে বলছি।’


মহাসড়কে এসব দুর্ঘটনা ও এ নিয়ে হাইওয়ে পুলিশের ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বার আউলিয়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ওসি মো. আবদুল আউয়াল বলেন, ‘সড়কে অবৈধ পার্কিং, পথচারীদের যত্রতত্র রাস্তা পারাপার, অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো এসব মহাসড়কে দুর্ঘটনার মূল কারণ। এসব বিষয়ে চালকদের সচেতন করতে আমরা প্রতিনিয়ত সড়কে মাইকিং করি, সভার আয়োজন করি। সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ না হলেও আগের তুলনায় কিছুটা কমে আসছে।’

সূত্রঃ প্রথম আলো