ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায় কৃষিতে আশাবাদ জাগাচ্ছে সমালয় পদ্ধতিতে ধান আবাদ। এ পদ্ধতিতে চাষের ফলে কমছে উৎপাদন খরচ ও শ্রম, উৎপাদন বাড়ছে বলছেন কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা। সমালয় পদ্ধতিতে দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের সমাসপুরে ৫০ একর জমিতে ধান আবাদ করা হয়েছিল।

আজ বুধবার (৩ মে) সকালে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের সাহায্যে ধান কাটার উদ্বোধন করেন ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান। একইদিন ২০২২-২৩ অর্থবছরে রবি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বোরো ধানের সমালয় চাষাবাদের প্রদর্শনীর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক বলেন, দেশে দিন দিন জমির পরিমাণ কমছে, মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সনাতন নিয়মে চাষাবাদ করলে খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে না। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হলে চাষাবাদে যান্ত্রিকীকরণ প্রয়োজন। আর সে কারণেই বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের মাধ্যমে নানামুখী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট কৃষির কোনো বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, এখনকার কৃষকরা অনেক স্মার্ট। কৃষিতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার সহজলভ্য করায় কৃষাণ-কৃষাণীদের দুর্ভাবনার যেমন অবসান হয়েছে, তেমনি তাদের সাফল্যও এনে দিয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. একরাম উদ্দিন এর সভাপতিত্বে ও উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা লুৎফুল হায়দার ভূঁইয়া এর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা আক্তার তানিয়া, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ মহিউদ্দিন মজুমদার, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সুজন কান্তি শর্মা, রাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন মামুন, দাগনভূঞা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ভারপ্রাপ্ত আবদুল্লাহ আল মামুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আহমেদ, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম, আবদুল্লাহ আল মারুফ। এসময় সকল উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, ইউপি সদস্য, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও স্থানীয় কৃষক-কৃষাণীরা উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, সমালয় পদ্ধতিতে বিস্তীর্ণ জমি একত্রিত করে একই সময়ে একই সাথে আধুনিক যন্ত্র রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চাষাবাদের আওতায় আনা হয়। ট্রে ও পলিথিনে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় বীজতলা। উক্ত বীজ তলা থেকে স্বল্পবয়সের চারা মূল জমিতে রোপন করা হয়। চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের সমাসপুর গ্রামে ১০০ জন কৃষকের ৫০ একর জমিতে এমন সমালয় পদ্ধতিতে ধানের চাষাবাদ করা হয়েছিল।

স্থানীয় কৃষক আবুল কাশেম জানান, তিনি ২০০ শতক জমিতে প্রায় ১৮০ মণ ধান পাবেন। এ পদ্ধতিতে কৃষকের কষ্ট ও খরচও কমে গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, চলতি মৌসুমের জানুয়ারী মাসের শেষের দিকে রাইস প্ল্যান্টার মেশিনের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছিল। এর আগে বিশেষ ট্রেতে চারা উৎপাদন করা হয়। আজ কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের সাহায্যে ধান কেটে কৃষক ফসল ঘরে তুলছেন। এই পদ্ধতিতে শ্রমিক সংকট ও নানা প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে। কমেছে উৎপাদন খরচও।

তিনি আরো জানান, এ প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের জন্য বীজ ধান, চারা রোপণ, সার ও ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস। কৃষকরা শুধুমাত্র সেচের পানি ও চাষে পয়সা খরচ করেছে। এ কর্মসূচির আওতায় জমিতে যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের চারা রোপন থেকে কর্তন পর্যন্ত সব প্রক্রিয়া শেষ হবে। এতে উৎপাদন খরচ কমার পাশাপাশি ধান চাষে লাভবান হবেন কৃষক, এমনটিই জানালেন সংশ্লিষ্টরা।