পরশুরামে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে গত ১৪ মাসে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়েছে চলতি বছরের জুলাই মাসে। এ সময়ে ১৩১৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৪১৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এ সময়ের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে উপজেলায় আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এ সময়ের ব্যবধানে নতুন করে আরও ৩২ জন রোগী সুস্থ্য হয়েছেন।

সংক্রমণের উর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.আবদুল খালেক বলেন, অসচেতনতার কারণে সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাসায় করোনা আক্রান্ত রোগী রেখেও অনেকে রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এভাবে হলে সংক্রমণ হার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।

শনাক্তের হার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, মানুষকে ঘরে রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরণের চেষ্টা অবহ্যত আছে। নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া সুবিধাবঞ্চিতদের খাদ্যসহায়তা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী দেয়া হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় পরশুরামের কোনো নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি। যার ফলে নতুন করে কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। এরআগে গতকাল শুক্রবার (৩০ জুলাই) উপজেলার ৫২টি নমুনা পরীক্ষায় ২০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ নিয়ে উপজেলায় মোট শনাক্তকৃত ব্যক্তির সংখ্যা হলো ৬৭১ জন। এ পর্যন্ত মোট ২৩৭ জন করোনা আক্রান্ত রোগী সুস্থ্য হয়েছেন বলে জানান স্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়া করোনা আক্রান্ত হয়ে উপজেলায় মোট ৭ জন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রদত্ত তথ্যমতে, এ পর্যন্ত পরশুরামে শনাক্তকৃত রোগীর মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়েছে পৌর এলাকায়। শনাক্তের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বক্সমাহমুদ ইউনিয়ন। এরপরে রয়েছে মির্জানগর ও চিথলিয়া ইউনিয়ন।

একই সূত্র জানায়, আজ শনিবার (৩১ জুলাই) পর্যন্ত পরশুরামে মোট সংগৃহীত ২৮৩৪টি নমুনার মধ্যে ২৭৭০টির ফলাফল পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ২১৫৩টি পিসিআর এবং ৬৮১টি র‍্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষা ছিল। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ২২ শতাংশ। এছাড়া ৪১৭ জন স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে হোম অাইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এদিকে শনাক্তের হার বাড়ার সাথে সাথে হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ। এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা: ইয়াছিন আলাউদ্দিন ডালিম বলেন, বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১০ শয্যার করোনা ইউনিটে ৭ জনকে সেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও ৬ জন চিকিৎসাধীন আছে। এদের মধ্যে ৩ জন রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানান তিনি।

সংক্রমণ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে আরএমও আরও বলেন, পরশুরাম সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় ভারতীয় ডেল্টা ভেরিয়েন্টের কারণে সংক্রমণ হার এমন আশংকাজনক হতে পারে। তবে সংক্রমণের হার এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৬ মে উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৪ জন সেবিকার দেহে প্রথম করোনা শনাক্তের কথা জানান উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।