দুইদিনের আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে ফুলগাজী উপজেলার কৃষিখাতের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এর আগেও গত ২১ অক্টোবর অতিবৃষ্টি এবং জুলাই মাসে মহুরী নদীর বাঁধ ভাঙ্গনের ফলে এ নিয়ে তিন দফায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষকরা। এছাড়াও এলাকার রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

রবিবার (১ নভেম্বর) দুপুরের পর হতে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নামতে শুরু করে। আজ সোমবার (২ নভেম্বর) এলাকাগুলোতে বন্যার পানি নেমে গেলেও রেখে যাচ্ছে ক্ষত চিহ্ন।

ফুলগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম বলেন, বন্যাকবলিত সদর ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে ৪শ ২০ হেক্টর রোপা আমন আবাদ হয়েছে। তন্মধ্যে ১শ ৫ হেক্টর আমন এবং ৬ হেক্টর শীতকালীন আবাদি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বন্যাকবলিত ৫ গ্রামের সাড়ে ৪শ থেকে ৬শ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।

বন্যার্ত এলাকার মাছ চাষীদের ২৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম। দুইদিনের বন্যায় উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, ঘনিয়ামোড়া, শাহাপাড়া, শ্রীপুর এলাকার ৬০টি পুকুর পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলেন তিনি। এতে পোনা ও চাষকৃত মাছ ভেসে গেছে।

উপজেলায় বন্যাকবলিত এলাকার ত্রাণ সহায়তার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, বর্তমানে ত্রাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সাড়ে ১৩ টন চাল মজুদ রয়েছে। এছাড়া বন্যার্তদের জন্য ২ লক্ষ টাকা সরকারি বরাদ্দ রয়েছে।

মোস্তাফিজ নামে ক্ষতিগ্রস্ত এক তরুণ কৃষক বলেন, মাত্র ৪ মাসের মধ্যে তিনবারই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ঋণ আর ধার-দেনা করে নিজে পরিশ্রম করে চাষ করি। মুহুরী-কহুয়া নদী আমাদের দুঃখ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর বন্যার কবলে আমরা কৃষকরা সর্বস্ব হারাচ্ছি।

রেহেনা আক্তার নামে বিধবা এক মহিলা বলেন, প্রতিবারই বাঁধ ভাঙ্গনের পর কয়েকদিন কিছু চাল, ডাল বিতরণ করে। কিন্তু আমরা এ ধরনের কোন ত্রাণ চাই না। আমাদের সকলের একটাই চাওয়া- টেকসই বাঁধ।

কৃষকদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার আওতায় এনে সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী দৈনিক ফেনীকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বোরো মৌসুমে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার আওতায় বীজ এবং সার প্রদান করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসকের পরামর্শ মতে আগামীকাল ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করে কোন ধরনের সহযোগিতা করা যায় কিনা সে বিষয়েও আলোচনা চলছে।

গত ২১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া দুই দিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে উপজেলার ৩০ হেক্টর আমন এবং ২৫ হেক্টর জমিতে আবাদকৃত শীতকালীন সবজির ক্ষতি হয়। এর আগে গত ১২ জুলাই বন্যার কবলে পড়ে একই ইউনিয়নের ৭টি গ্রামের ১০ হেক্টর জমি সবজির আবাদ ও ২৯ হেক্টর জমির আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া ১২০টি পুকুরের মাছ ভেসে যায়।