ভারত থেকে নেমে আসা হঠাৎ পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে ফুলগাজীতে মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফাটল দেখা দেয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আরও বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাঁধের ভাঙ্গা স্থান দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে। গত তিন মাসের আগের প্লাবনের ক্ষত শুকোতে না শুকোতেই আকস্মিক এ বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়ছেন এলাকার মানুষ। বিস্তীর্ণ এলাকার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, পুকুর ভেসে যাচ্ছে। 

বন্যা পুর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শনিবার (৩১ অক্টোবর) বিকাল ৩টার দিকে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

শনিবার রাত ১১টার দিকে প্রবল বেগে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে

ফুলগাজী সদর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জানান, রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভারত হতে নেমে আসা পানির প্রবল চাপে ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর দৌলতপুর এলাকার মোহাম্মদ উল্যাহর বাড়ির পাশে ভাঙ্গন দেখা দেয়। চেয়ারম্যান জানান, ইউনিয়নের মুহুরী নদী সংলগ্ন ঘনিয়ামোড়া ও দৌলতপুর গ্রামের আরও তিন স্থানে ভাঙ্গনের আশংকা রয়েছে। তিনি জানান, ফুলগাজী বাজারের পশ্চিম অংশে শ্রীপুর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে ফুলগাজী উপজেলা সদরের মূল সড়কও তলিয়ে গেছে।

পরশুরামে চিথলিয়া ইউনিয়নের দুর্গাপুরে ভাঙ্গন ঠেকাতে নেমেছেন এলাকাবাসীরা

অন্যদিকে পরশুরামের চিথলিয়া ইউনিয়নের দুর্গাপুরেও মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ১টি স্থানে আবারো ভাঙ্গনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য কালাম আজাদ জানান, শনিবার দুপুরে ভাঙ্গনের সম্ভাবনা দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা ভাঙ্গন ঠেকাতে বালির বস্তা তৈরি করে রেখেছিল। রাত ১০টার দিকে ভাঙ্গন দেখা দিলে পূর্বে থেকে প্রস্তুতকৃত ৫০/৬০টি বস্তা ফেলে আপাতত সেই ভাঙ্গন ঠেকিয়েছেন এলাকাবাসীরা। ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যান।

এর আগে গত ১২ জুলাই মুহুরী নদীর ৬ স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়। স্থানীয়রা জানান, পানি নেমে গেলে দায়সারাভাবে বাঁধ মেরামত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে মুহুরী নদীতে পানির চাপ একটু বাড়তেই সেই বাঁধ হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়ে। আবারো সেই একই স্থানগুলোতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।

ভাঙ্গন ঠেকাতে বালির বস্তা তৈরি করছেন স্থানীয়রা

এ ব্যাপারে শনিবার রাত ৮টার দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিনকে ফোন করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে সংযোগ কেটে দেন।

বয়োবৃদ্ধ আবুল কাশেম মোল্লা জানান, টেকসই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অভাবে প্রতিবছরই সীমাহীন দুর্ভোগের কবলে পড়ি আমরা। বৃষ্টি হলেই ভেসে যায় কোটি টাকায় নির্মিত মুহুরী-কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বাঁধ। বন্যায় পানিবন্দি হলে অনেকে চিড়া-মুড়ি নিয়ে আসে। কেউ টেকসই বাঁধ নির্মাণ করে স্থায়ী সমাধানের কথা বলে না।