২৩ নভেম্বর,২০১৯

।। অনলাইন ডেস্ক ।।

শীতের আমেজ টের পাচ্ছি, পৌষ আসতে আর একমাসও বাকি নেই। প্রকৃতি অনেকটা ঠাণ্ডা হতে শুরু করেছে। এর মানে নিতে হবে শীতের প্রস্তুতি। কিন্তু আপনি হয়ত ভাবছেন, জাঁকিয়ে শীত আসতে আরও তো বাকি আছে, প্রস্তুতি তখনই নেওয়া যাবে। কিন্তু না, পরে নেওয়ার থেকে আপনার সার্বিক সুস্থতার জন্য প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু হোক।

নামিয়ে ফেলুন পোশাক

তুলে রাখা সোয়েটার, শাল আর জ্যাকেট বের করে অল্প সাবান গুলে ঠাণ্ডাপানিতে ধুয়ে ফেলুন। আধ বালতি পানিতে ৫-৬ ফোঁটা স্যাভলন মিশিয়ে তাতে শীতের পোশাক আগে ভিজিয়ে জীবাণুমুক্ত করে তারপর ধুয়ে নিন। এরপর পানি ঝরিয়ে রোদে শুকিয়ে নিন। তবে কড়া রোদে শীত পোশাকের রং আর বুনন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। শুকিয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘক্ষণ কড়া রোদে রাখবেন না।

কম্বল বা শৌখিন শীত পোশাক ড্রাই ওয়াশ করিয়ে হালকা রোদে দিয়ে তারপর ব্যবহার করুন। অনেক দিন তুলে রাখা শীত পোশাকে হলদেটে দাগ পড়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ঘরে না ধুয়ে ড্রাইওয়াশে দিন। যেকোনো শীত পোশাক ভাঁজ করে না রেখে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখুন। ওয়ারড্রোব বা আলমারিতে নিমপাতা, শুকনা মরিচ কিংবা ন্যাপথালিন রাখুন। এতে জামাকাপড়ে পোকা ধরবে না।

ঘর গরম রাখতে

শীতে ঘর গরম রাখার জন্য ব্যবহার করুন ভারী বা কয়েক পরতের উজ্জ্বল রঙের পর্দা। দিনের বেলায় যতক্ষণ সূর্যের আলো পাওয়া যাবে দরজা ও জানালার পর্দা সরিয়ে দিন। এতে প্রাকৃতিক আলো ও তাপে ঘর গরম হবে। আর সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে দরজা-জানালা বন্ধ করে ভারী পর্দা দিয়ে দিন। রাতেও ঘরে থাকবে উষ্ণতার আমেজ। শীতের গ্যাজেট যেমন ওয়াটার হিটার, রুম হিটার, গিজার, ইলেকট্রিক শাওয়ারগুলো পরীক্ষা করে দেখুন।

গাছের যত্নে

এ সময়ের শুষ্ক আবহাওয়ায় বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয় গাছের। বারান্দা, ছাদের বাগান কিংবা ইনডোর প্ল্যান্টের বাড়তি যত্ন নিন। নিয়মিত গাছে পানি স্প্রে করুন। শীতের আগে গাছের গোড়ায় প্রয়োজনীয় সার দিন। ডালপালা ছেঁটে দেওয়ার প্রয়োজন থাকলে তাও সেরে ফেলুন। সপ্তাহে দুই দিন ঘরের গাছগুলো বাইরে রেখে সারাদিনের রোদ লাগান। নয়তো ফাঙ্গাস দেখা দিতে পারে।

আপনার ঘরবাড়ি

সপ্তাহে এক দিন পুরো ঘর পরিষ্কার করুন। সিলিং ফ্যান, জানালার নেট, খাটের কোণ, আলমারিসহ বাকি ফার্নিচার ঝাড়-মোছ করুন। সম্ভব হলে পরিষ্কারের কাজে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন। অথবা হাতল দেওয়া ঝাড়ু দিয়েও পরিষ্কার করতে পারেন। সব শেষে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল লিকুইড দিয়ে মেঝে মুছে নিন।

প্রতিদিন অন্তত একবার ভালো করে বিছানা ঝেড়ে নিন। সপ্তাহে একদিন বিছানার চাদর পাল্টান। অন্তত মাসে একবার বিছানার গদি রোদে দিন। রোদ ন্যাচারাল ডিসইনফেকটেন্ট হিসেবে কাজ করে। ফলে জীবাণু বা পোকা বাসা বাঁধতে পারে না। তোশক ও গদির তলায় নিমপাতা রাখুন। পোকামাকড় হবে না। কার্পেট বিছানোর আগে ড্রাইওয়াশ করে নেওয়া ভালো। না হলে বেশ কয়েকদিন কড়া রোদে দিয়ে ভালো করে ঝেড়ে তারপর মেঝেতে ব্যবহার করুন।

কার্পেটের বদলে শতরঞ্জিও ব্যবহার করতে পারেন। পরিবারে সাইনাস বা অ্যাজমার রোগী থাকলে কার্পেট বা শতরঞ্জির ওপর মাদুর ব্যবহার করা যায়।

খাবারদাবার

এসময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য খাদ্য তালিকায় ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘এ’ এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার, যেমন—লেবু, কমলা, বাঁধাকপি, ব্রকলি, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু, পালংশাক ইত্যাদি রাখা ভালো। গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন অন্তত ১০০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করলে সর্দি, জ্বর ও ঠাণ্ডার প্রভাব অনেকটাই কমে যায়। গরম দুধে কাঁচা হলুদ ও মধু মিশিয়ে পান করলে সর্দির প্রভাব কমে।

মৌসুম পরিবর্তন ও শীতকালে বিভিন্ন ধরনের ঠাণ্ডাজনিত ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রতিকারের জন্য জিংক জাতীয় খাবার বিশেষত ডিম, দুধ, মাছ, মাংস ইত্যাদি দৈনিক খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।

শীতে সতেজ থাকার জন্য শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সীর গরম গরম সবজি স্যুপ, গ্রিন টি, আদা, তুলসী বা পুদিনা চা পান করতে পারেন। ঘন লিকারের দুধ চা এড়িয়ে চলা ভালো। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় তেষ্টা কম পায় বলে অনেকেই পানি পান কমিয়ে দেন। অথচ এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায় বলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। তাই প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা উচিত। পানির পাশাপাশি কুসুম গরম পানিতে কমলা, মালটা, পেঁপে বা যেকোনো ফ্রেশ ফলের জুস খেতে পারেন।

শরীর গরম রাখতে সহায়তা করে মধু, ম্যাপেল সিরাপ, আদা, রসুন, কালিজিরা, লং, দারুচিনি, গোলমরিচ ইত্যাদি। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এ খাবারগুলো রাখলে শীতে উপকার পাবেন।

শীতে হাঁপানি ও অ্যালার্জি সমস্যা থাকলে ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ওমেগা-৩, ভিটামিন-বি৬ জাতীয় খাদ্য যেমন—পেঁয়াজ, কলা, মাছ, পুদিনা, তুলসী, রোজমেরি ইত্যাদি রাখুন দৈনিক খাদ্য তালিকায়। অতিরিক্ত লবণ ও ওমেগা-৬ ফ্যাট গ্রহণে অনেক সময় হাঁপানি ও অ্যালার্জির প্রকোপ বেড়ে যায়। তাই এসব পরিহার করুন। শীতে সুস্থ থাকতে বাসি বা ঠাণ্ডা খাবার না খেয়ে গরম ও টাটকা খাবার খেতে চেষ্টা করুন।