বহুল আলোচিত ফেনীর নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবাদের ঝড় তোলা এ মামলার রায় আগামীকাল ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের এ তারিখ ঘোষণা করেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ।

ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী গত ১১ এপ্রিল রাতে নুসরাতের কবর জিয়ারত শেষে বলেন, অপরাধী যেই হোক তাকে শাস্তি পেতেই হবে।

ফেনী জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট হাফেজ আহম্মদ জানান, ফেনীর অন্য কোন মামলা এত দ্রুততর সময়ে রায়ের ঘটনা ঘটেনি।


মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবি এডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, আমরা আশা করি প্রকৃত আসামীরা উপযুক্ত শাস্তি পাবে। এ রায়ের মাধ্যমে সমাজ থেকে অন্যায়-অবিচার দূর হবে। দেশের কোন মেয়ে স্কুলে পড়তে গিয়ে শিক্ষক দ্বারা লাঞ্ছিত হবে না। তিনি বলেন, এ রায় দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি মাইলফলক সৃষ্টি করবে।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, নুসরাত-হত্যার শাস্তি প্রদান এই মামলার শেষ নয়। নারী শিশু-কিশোর নির্যাতনের গর্হিত অধ্যায়ের অবসান হবার সূচনামাত্র।

নুসরাতের মা বলেন, আমার মেয়ে রাতে-দিনে ১০ দিন যে কষ্ট করেছে, যে রকম ক্ষতবিক্ষত শরীরে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে, সেই যন্ত্রণা যেন খুনিদেরও দেওয়া হয়।

মামলার অভিযোগপত্র ভুক্ত ১৬ আসামি হলো, সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান, মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।

এই মামলায় ১৬ জন আসামির মধ্যে ১২ জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।  ৯২ জন স্বাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জন স্বাক্ষ্য দিয়েছেন।

এ মামলা পুলিশ হতে গত ১০ এপ্রিল পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা ফেনীর পিবিআই পরিদর্শক মো. শাহ আলম ১৬ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালত ২৭ জুন হতে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মোট ৬১ কার্যদিবসে ৮৭জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণের পর ৩০ সেপ্টেম্বর রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবি এডভোকেট শাহজাহান সাজু জানান, মামলা তুলে না নেয়ায় তাকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যা মৃত্যুশয্যায় নুসরাত বলে গেছে। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হয়।

উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা কেন্দ্রে গেলে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটে। ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান আট জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে। ২৭ মার্চ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজেল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১০ ধারায় মামলা করে তার মা। ২৮ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট এএসএম এমরানের আদালতে নুসরাত তার উপর যৌন নিপীড়নের জবানবন্দি প্রদান করে। একই দিন সোনাগাজী থানা পুলিশ অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে।