বিল্ডিং কোড না মেনে ফেনীতে নির্মিত হচ্ছে বহুতল বিশিষ্ট আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। দুই ভবনের মাঝখানে নিয়ম মোতাবেক দূরত্ব না থাকা এবং যথাযথ অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুবিধাদি না থাকার ফলে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এমনটাই আশংকা করছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। আজ সোমবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে ফেনী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় এমন আশংকার কথা প্রকাশ করেন তারা।

জেলা প্রশাসক ফেনীতে বহুতল ভবন নির্মাণের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ৭ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিতে পারে পৌরসভা। এর চেয়ে উঁচু ভবন নির্মাণ করতে হলে অনুমোদনের জন্য জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সুপারিশ ঢাকায় পাঠাতে হয়। কমিটিতে গনপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ একাধিক নির্বাহী প্রকৌশলী রয়েছেন। ঢাকায় তা যাচাই বাছাই করে অনুমোদন দেয়। সেই প্রক্রিয়ায় ফেনীতে গত দুই বছরে মাত্র ৪টি ভবন অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, ফেনীতে দেখা যাচ্ছে, অনেকে বহুতল ভবনের ফাউন্ডেশন অনুমোদন নিয়ে ৭তলা পর্যন্ত কাজ করে চুপ করে বসে আছে। ধীরে ধীরে তা উপরের দিকে বাড়ছে। ফেনীর দাউদপুরে খাজা আহম্মদ লেক ভরাট করে পৌরসভার দোকানঘর নির্মাণের কথা উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, বর্তমানে খাজা আহম্মদ লেক একটি ঘিঞ্জি জায়গায় পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, ভবন নির্মাণে যথাযথ নিয়ম না মানার ফলে আগুনসহ যেকোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে প্রচুর হতাহতের সম্ভাবনা রয়েছে। এমন কোন ঘটনার অবতারণা হলে এখানে মানবিক বিপর্যয় ঘটবে।

উল্লেখ্য, ফেনী শহরের দাউদপুরে একটি বহুতল ভবনের অনুমোদন নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে।

সভায় ফেনী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ সহকারি পরিচালক পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দী ফেনীতে ভবনের অগ্নি নির্বাপন অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন অনুযায়ী মহাপরিচালকের ছাড়পত্র ছাড়া কোন বহুতল বা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন বা অনুমোদিত নকশার সংশোধন করা যায় না।

তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের অনাপত্তি সনদের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে ফেনীতে ৩০জন আবেদন করেছিল। কিন্তু বিধি না মানায় এর কোনটিকেই ছাড়পত্র দেয়া সম্ভব হয় নি। কিছুদিন আগে ফেনীর শহরের ৫টি ভবন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, এর কোনটিতেই অগ্নি নির্বাপনের কোন ব্যবস্থা নেই।

এছাড়া অনুমোদিত নকশার না মেনে ফেনীতে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে বলেও জানান পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দী। তিনি অভিযোগ করেন, ফেনী সদর হাসপাতাল মোড়ে দশতলা বিশিষ্ট উত্তরা হাসপাতাল ভবনের অনুমোদিত নকশায় রয়েছে দুটি সিঁড়ি থাকার কথা থাকলেও সেখানে করা হয়েছে একটি সিঁড়ি।

পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দী বলেন, শহরের অনেক এলাকাতে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। এমন রাস্তা রয়েছে যেখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকানো সম্ভব হবে না। অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা নেই এমন বহুতল ভবন এবং উক্ত সমস্যাপূর্ণ এলাকায় বড় ধরনের অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের তাকিয়ে ছাড়া থাকা অন্য কোন উপায় থাকবে না।

তিনি জানান, পানির সংকট বিবেচনা করে ইতোমধ্যে ২০ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি গাড়ির আবেদন করা হয়েছে।

নকশার অনুমোদন প্রসঙ্গে ফেনী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আজিজুল হক বলেন, পৌরসভার ক্ষমতার বাইরে কোন ভবনের প্ল্যান অনুমোদনের নজির নেই। তবে ভবনের নকশা যাচাইয়ের জন্য আলাদা কোন বিভাগ পৌরসভায় নেই। কোন ভবন প্ল্যানের বাইরে হচ্ছে এমন অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা করে থাকি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফেনী পৌরসভার মেয়র হাজী আলাউদ্দিন বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পৌরসভায় ২০ হাজার ৭৬২ হোল্ডিং রয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ ৭ তলা পর্যন্ত অনুমোদন দিতে পারি। পৌর এলাকায় কেউ কেউ পৌরসভাকে ফাঁকি দিয়ে অনুমোদনহীন ভবন নির্মাণের চেষ্টা করতে পারে। অনুমোদনহীন ভবন, অনুমোদন ছাড়া অতিরিক্ত ফ্লোর যারা তৈরী করছে তাদের বিষয়ে তথ্য পেলে পৌর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

ছবিঃ পিকলু নীল