‘একদিন আজিজ আহম্মদ চৌধুরী আর আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাত করতে গিয়েছিলাম। সেখানে নেত্রী স্থানীয় কিছু উন্নয়নমূলক কাজ এবং দলীয় কাজের জন্য আমাদের হাতে কিছু টাকা প্রদান করেছিলেন। তখন আজিজ আহম্মদ চৌধুরী নেত্রীকে হিসাব কবে দিব বলে প্রশ্ন করেছিলেন। তার এ কথা শুনে তখন সেখানে উপস্থিত সকলে আশ্চার্যান্বিত হন। এমনই একজন আদর্শিক মানুষ ছিলেন তিনি।’

আজ রবিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ফেনী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজ আহম্মদ চৌধুরীর প্রয়াণে শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপনী বিতান দোকান মালিক সমিতি ঘোষিত ৭দিনের শোক পালন কর্মসূচির শেষ দিনে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। সভায় তার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এসব কথা বলেন মরহুমের রাজনৈতিক জীবনের সহকর্মী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বি.কম।

মরহুম আজিজ আহম্মদ চৌধুরীর সঙ্গে নিজের স্মৃতির কথা উল্লেখ করে প্রবীণ এ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, দীর্ঘ ৫৪ বছর রাজনৈতিক জীবনে বহু নেতার সাথে কাজ করেছি। তবে ১৯৭৪ সালে আজিজ আহম্মদ চৌধুরীর সাথে প্রথম পরিচয়ের পর থেকে দেখেছি তিনি যেকোন বিষয়ে সততা ও একাগ্রতার সাথে কাজ করতেন। তিনি ছিলেন সততার মূর্ত প্রতীক।

এসময় উপস্থিত ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তার জীবনের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের মধ্যে অন্যতম একটি ছিল শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপনী বিতানের উন্নয়ন। আপনারা সবাই তার সুনাম ধরে রাখতে সবসময় সচেষ্ট করবেন।

শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপণী বিতান দোকান মালিক সমিতির সভাপতি তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মরহুম আজিজ আহম্মদ চৌধুরীর ছোট ভাই ময়মনসিংহ অঞ্চলের দুই বারের নির্বাচিত সাবেক সাংসদ আমির আহম্মদ চৌধুরী রতন, ছোট ছেলে ফেনী জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) চৌধুরী আহমেদ রিয়াদ আজীজ রাজীব, দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম ফিরোজ আহম্মদ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি নুরুল আলম, দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, দৈনিক অজেয় বাংলার সম্পাদক শওকত মাহমুদ। শোক প্রস্তাব রাখেন সমিতির অর্থ সম্পাদক প্রফেসর জহির উদ্দিন।

বক্তব্য রাখছেন আজিজ আহম্মদ চৌধুরীর ছোট ভাই আমির আহম্মদ চৌধুরী রতন

সভায় পরিবারের সদস্যদের প্রতি আজিজ আহম্মদ চৌধুরীর স্নেহ ও ভালোবাসার কথা উল্লেখ করে আমির আহম্মদ চৌধুরী রতন বলেন, উনি ছিলেন একজন অসম্প্রাদায়িক মানবিক মানুষ। মানুষের কল্যাণে আমার ভাই নিবেদিত ছিলেন। তিনি আমাদের সবসময় খোঁজখবর রাখতেন। একজন মানুষ হিসেবে উনি একটি স্বার্থক জীবন আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন।

ক্তব্য রাখছেন আজিজ আহম্মদ চৌধুরীর ছোট ছেলে রাজীব চৌধুরী

সভায় বাবার স্মৃতিচারণ করে তার ছোট ছেলে চৌধুরী আহমেদ রিয়াদ আজিজ রাজীব বলেন, আমার বাবা সততাকে পুঁজি করে রাজনীতি করে গেছেন। পুরো জেলার জন্য তিনি নিবেদিত ভাবে কাজ করে গেছেন। জেলার প্রতিটা উপজেলায়, ইউনিয়নে, ওয়ার্ডে তার উন্নয়নের ছোঁয়া রয়েছে। উনি মৃত্যুকালে ফেনী জেলা পরিষদের ফান্ডে যে পরিমাণ অর্থ রেখে গেছেন তা মনে হয় দেশের অন্য কোথাও নেই।

মোনাজাত করছেন অতিথিরা

সভা শেষে মরহুম আজিজ আহম্মদ চৌধুরীর রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন ফেনী রেলওয়ে স্টেশন মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মনছুরুল হক।

শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপণী বিতান দোকান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী রেজাউল করিম রেজার পরিচালনায় মরহুমের বড় ছেলে নওশাদ আজীজ রাজনসহ বিপনী বিতানের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা দোয়ায় অংশগ্রহণ করেন।

এর আগে রবিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ২.২০ মিনিটের দিকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান ফেনীর এই কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তার মৃত্যুতে ফেনী জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।