করোনা সব বদলে দিয়েছে। চিরায়ত সমাজব্যবস্থা, ধ্যান-ধারণা, আন্তরিকতা, দর্শন সবকিছু। মানুষ করোনাকালে নতুন করে পরিচিত হচ্ছে চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে। তার প্রভাব এসে পড়েছে আবহমান ঈদ উদযাপনের রীতিনীতিতেও। এবার ঈদ উল ফিতরের পর ঈদ উল আজহাও উদযাপিত হচ্ছে তেমনি আড়ম্বরহীন ও সাদামাটাভাবে। প্রতিবছর খোলা ময়দানে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হলেও এ বছরের দুটি ঈদ উদযাপিত হচ্ছে নানা বিধিনিষেধ এর মধ্য দিয়ে।

প্রতিনিয়ত মানুষ স্বগতোক্তি করছে জীবন এমন ছিল না, জীবন এমন হওয়ার নয়। বাঙালি একবেলা না খেয়ে থাকতে পারে কিন্তু আড্ডা ছাড়া একটা দিন- স্রেফ ভাবা যায় না। কর্মব্যস্ত জীবনে যখন বছর ঘুরে ঈদের কয়েকদিনের ছুটি সঞ্চয় হয় তখন আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব মিলে কী জম্পেশ আড্ডাই না হয়! কিন্তু করোনাকালে সেই দৃশ্য যেন সুদূর কোন কল্পনা।

ঈদের দিনে নামাজ শেষে কোলাকুলি করা, হাত মেলানো ইসলামী সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু আজ জামাতে হুজুর বয়ানে সকলকে সাবধান করছেন কোলাকুলি, হাত মেলানো হতে বিরত থাকতে। সামাজিক দুরুত্ব বজায় রেখে চলতে। করোনাভাইরাস সৃষ্ট পরিস্থিতিতে প্রায় ৫ মাসের বেশি সময় জুড়ে এক প্রকার বন্দীদশায় রয়েছেন দেশের মানুষজন। ভয়, উৎকণ্ঠা আর মৃত্যুর চিত্রে এ মহামারী বদলে দিয়েছে মানুষের জীবনাচরণ, বদলে দিয়েছে সামাজিক বন্ধন, বদলে দিয়েছে চিরাচরিত রীতি।

মহিবুল ইসলাম নামে এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা বলেন, এবার দুটি ঈদ-ই ভিন্নভাবে পালন করছি। চিরাচরিত নিয়মগুলো যেন পুরো পাল্টে গেছে। ঈদে কারো সাথে কোলাকুলি করতে পারিনি, হাত মেলাতে পারিনি, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সকলের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুটি ঈদ পালন করছি। কারো সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারছি না। সবকিছু যেন আমূল বদলে গেছে।

রায়হান শরীফ নামে এক সমাজকর্মী বলেন, এতে করে সামাজিক মূল্যবোধে ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। সেই সাথে সামাজিক রীতিনীতিও ও আমাদের মানসিকতারও চিত্রও পাল্টে যাচ্ছে। করোনা দূর হলেও এর প্রভাব আমাদের সঙ্গে রয়ে যাবে।

করোনা শুধু সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনে নি, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এর প্রভাব নেতিবাচক। করোনায় দীর্ঘমেয়াদি লকডাউনে মানুষ শুধু কর্মহীনই হয়নি, হয়েছে উপার্জনহীন, সর্বোপরি স্বপ্নহীন। দেশের বেশিরভাগ মানুষই এবার কুরবানী দিতে পারেন নি।

এমন দুঃসময়ে ঈদ দিতে পারছে না মানুষের মাঝে আনন্দের বার্তা। সব মানুষের জন্য এমন নিরানন্দের ঈদ আগে আসেনি। কুরবানীর মাংস নিতে বেড়েছে অসহায় মানুষের সংখ্যা।

ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা মুসলমানদের সার্বজনীন রীতি। সেই রীতিও এবার পরিবর্তিত হয়ে নতুন রূপ নিতে বাধ্য হল। এসব নিয়মকানুন আর বিধি নিষেধের বেড়াজালে বন্দী হয়ে থাকা ছাড়া কারো কোন উপায় নেই। তবু সবার মনেই তীব্র আকাঙ্খা, করোনা থেকে মুক্তি পাক দেশ, মুক্ত বাতাসে প্রাণভরে আবার হাসিমুখে সব সজীব হয়ে উঠুক।