ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজীতে মুহুরী বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার।

আজ বুধবার (১৫ জুলাই) সকালে বাঁধ ভাঙ্গা প্লাবনে ফুলগাজীর উত্তর দৌলরতপুরে ও পরশুরামের চিথলিয়া ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।

এরপর দুপুর আড়াইটায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গণমাধ্যমকর্মী এবং জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করেন।

এতে ফেনী জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামান ছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিলা অঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী জহির উদ্দিন মাহমুদ, ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোছাঃ সুমনী আক্তার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুজন চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বিকম, পরশুরাম উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ।

সভায় উপস্থিতির উদ্দেশ্যে সিনিয়র সচিব বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কোনো ব্যক্তি না খেয়ে থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন।

বাঁধ সংস্কার প্রসঙ্গে সচিব বলেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বলা হয়েছে যেন আগামীকাল থেকেই বা চর্চার কাজ শুরু হয়। মুহুরী বাঁধ প্রসঙ্গে তিনি বন্যা কবলিত এলাকায় গণমাধ্যমকে বলেন, এই বাঁধটি নিচু এবং চওড়া এবং প্রতিবছর ভারতের উজানের পানি এদিক দিয়ে নামে এবং নিষ্কাশনে খুব বেশী পানি যখন একসাথে নামে তখন বাধ গুলো ভেঙ্গে যায়।

বাঁধ ভাঙ্গার আরেকটি কারন হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, এখানে তিনটি নদী মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি একসাথে একজায়গায় মিলিত হয় এবং যেখানে মিলিত হয় সেখকানেই এলজিডি র কিছু ব্রীজ রয়েছে এবং এই ব্রীজ গুলো খুব নীচু। ব্রীজের কারনে নদীর পানিকে চাপিয়ে আনা হয়েছে, সেজন্য এই ব্রীজ গুলো ভেঙ্গে ফেলার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ৮২৫ কোটি টাকা খরচে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি যা আগামী দুই মাসের মধ্য একনেকে উঠবে। তিনি জানান বাংলাদেশের অংশে যে ৯২ কিমি রয়েছে নদীর দুইপাড়েই এর কাজ হবে। নদী খনন করে নদীকে চওড়া করা হবে যাতে পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ে এবং সহজে যেতে পারে, সেই সাথে যেসব দুর্বল জায়গা রয়েছে সেখানে লুপকাটিং করে সোজা করার চেষ্টা করা হবে যাতে পানি সহজে যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এই বছরের শেষ নাগাদ প্রস্তাবিত প্রকল্পের কাজ শুরু হবে এবং আগামী ২ বছরের মধ্যে কাজ শেষ হবে।

স্থানীয়দের খাল খননের দাবী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের পরিকল্পনার ৫০ শতাংশ কাজ হচ্ছে নদী গুলো খনন করা। বাকি ৫০ শতাংশ হচ্ছে বাঁধ একটু চওড়া করা, উঁচু করা। তিনি জানান, মুহুরী নদীর সাথে সিলোনিয়া ও কহুয়া নদীও খনন করা হবে। খাল খননের বিষয়ে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডেলটা প্ল্যান ঘোষণা করেছেন। ডেলটা প্ল্যানে সারা বাংলাদেশে খালগুলো পুণঃখননের পরিকল্পনা আছে। সে অনুযায়ী ফেনীতেও প্রথম ধাপে প্রতি উপজেলায় একটি করে খাল খননের প্রকল্প নেয়া আছে। সেইসাথে সারা বাংলাদেশে মোট ৫১১ টি খাল ও ছোটনদী খনন করা হবে৷

ফেনী শহরে খাল দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফেনী শহরের মধ্যে যেসব খাল রয়েছে তা দখল হয়ে আছে। আমরা ইতোমধ্যে তা উদ্ধারে ডেল্টা প্ল্যানের দ্বিতীয় ধাপে রেখেছি। এতে করে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সচল হবে, নৌ চলাচল ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে এবং মাছ চাষের আওতা বাড়বে। এছাড়াও যে জায়গায় নদী বা খাল খনন করা হবে সে জায়গা গুলোর দুইপাড়ে বৃক্ষরোপণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলে জানান তিনি। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মানুষ পরিবর্তন দেখবে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, বন্যায় ১ হাজার ২০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৯৮টি পুকুর ডুবে মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ইতোমধ্যে ৬০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ফুলগাজীতে ২০ টন চাল ও ৬০ হাজার টাকা এবং পরশুরামে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ১০ টন চাল ও ৪০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। আরও ১২০ টন চাল ও দেড় লাখ টাকা মজুদ রয়েছে যা যথাশীঘ্র বিতরণ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত রবিবার সন্ধ্যার দিকে টানা বর্ষণে ও ভারতীয় পাহাড়ী ঢলে মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৯টি স্থানে ভেঙ্গে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ১৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়।