প্রয়োজনীয় জনবল সংকটে করোনা রোগীর স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ফেনী জেনারেল হাসপাতালে। ক্রমাগত বেড়ে চলা শ্বাসকষ্টের রোগী এবং তীব্র জনবল সংকটে ভেঙ্গে পড়তে পারে আইসোলেশন ওয়ার্ডের চিকিৎসা ব্যবস্থা।

করোনা রোগীর চিকিৎসায় ৩০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ডে অতিমাত্রায় রোগীর চাপ, রোগী ও দর্শনার্থীদের অসহযোগিতায় নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আবুল খায়ের মিয়াজী। তিনি জানান, আজ সোমবার (২২ জুন) আইসোলেশনে ভর্তি রয়েছে ১০৭ জন রোগী। এদের মধ্যে ৩৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে অথচ সেবা প্রদানে নেই জনবল।

অন্যদিকে রোগী ও দর্শনার্থীর রয়েছে চিকিৎসা না পাওয়ার তীব্র অভিযোগ। অক্সিজেন সংকট, চিকিৎসা সেবায় নেই ডাক্তার নার্স। একজন রোগীর অভিভাবক দিদারুল আলম বলেন, শ্বাসকষ্ট থাকার পরও তাৎক্ষণিক মিলছে না অক্সিজেন। রোগীর চিকিৎসায় আসছে না কেউ।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া জানান, হাসপাতালে নেই প্রয়োজনীয় ডাক্তার। তীব্র সংকট নার্স ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর। রোগীদের অক্সিজেন অপচয়ের ফলে সৃষ্টি হচ্ছে সংকট।

তত্ত্বাবধায়ক বলেন, মোট পদের বিপরীতে নার্সের পরিমান প্রায় অর্ধেক। এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে।

ডাঃ ইকবাল হোসেন জানান, হাসপাতালে ৫৫ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও ৫০ জন রয়েছেন। ১৪৬টি মঞ্জুরীকৃত পদ থাকলেও সবমিলে নার্স রয়েছে ৮২জন। সারাদেশে নতুন ৫ হাজার নিয়োগকৃত নার্সের মধ্যে ফেনীতে ৬৫জন পদায়নের কথা থাকলেও নতুন নার্স এসেছে ৫জন। এছাড়াও আরও ৩১জন নার্স ফেনী হাসপাতালে বদলী করা হলেও যোগ দিয়েছে ১৫জন। এদের সবাই ৮২জনের অন্তর্ভূক্ত। পাশাপাশি সরকারি নির্দেশনা মতে শারীরিক জটিলতার কারণে করোনা রোগী চিকিৎসা হতে বিরত রয়েছেন ৮জন চিকিৎসক।

ডাঃ ইকবাল জানান, ৩জন করে তিন শিফটে জরুরী বিভাগে রোগী দেখেন ডাক্তাররা। প্রতি টিমে নার্স রয়েছে ৬জন, ওয়ার্ড বয় ও আয়া ৬জন এবং ইন্টার্ণ ৬জন। কোনো টিমে কেউ যদি করোনা পজিটিভ হয় তবে পুরো টিম আইসোলেশনে চলে যেতে হবে। ফ্লু কর্ণারে ৪জন ডাক্তার পর্যায়ক্রমে ৭দিন করে নিয়মিত বহির্বিভাগে রোগী দেখছেন। আইসোলেশন ওয়ার্ডে প্রতি শিফটে ১জন ডাক্তার, ২জন নার্স ও ৩জন ওয়ার্ডবয় ও আয়া কাজ করছে।

ডাঃ আবুল খায়ের মিয়াজী বলেন, ৩০জন রোগীর সেবায় যতটুকু জনবল রয়েছে তাতে চলানো গেলেও তিনগুণের বেশী রোগীকে এ জনবলে সেবা নিশ্চিত সম্ভব নয়। এ মুহূর্তে ১০জন ডাক্তার ও নার্স করোনা পজিটিভ এবং আরও ৯জন করোনা উপসর্গে ভুগছে। ফলে জনবল সংকট আরও তীব্রতর হচ্ছে।

ডাঃ ইকবাল হোসেন বলেন, ভর্তিকৃত প্রায় প্রত্যেকটি রোগী শ্বাসকষ্টে ভূগছেন এবং এদের প্রত্যেককে অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় ইনজেকশনসহ ঔষধ যথাসময়ে প্রদান বিকল্পহীন। বিশেষ করে নার্সের সংকট দূর করা না গেলে রোগীর যথাযথ সেবা নিশ্চিত করা অসম্ভব।

তিনি জানান, করোনা রোগীর চিকিৎসায় এক্সরে রিপোর্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একমাত্র টেকনিশিয়ান ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে অনুপস্থিত রয়েছেন। ফলে একজন রোগীর ফুসফুসের সংক্রমণের ধারণা পেতে সমস্যা প্রকট হচ্ছে। একইসাথে হাই ফ্লো অক্সিজেন সেবা প্রদানের জন্য প্রশিক্ষিত একটি আলাদা জনবল প্রয়োজন হয়। ফলে জনবল সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে।

তিনি বলেন, নিরবিচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহে প্রয়োজন কমপক্ষে ১শ টি মেনিফোল্ড সিলিন্ডার কিন্তু রয়েছে ৩৮টি। পূর্বের ৮টির সাথে গতমাসে ব্যক্তিগত সহায়তা হিসেবে ১০টি সিলিন্ডার দেন আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। স্বাস্থ্যবিভাগ চলতি সাপ্তাহে দেয় আরও ২০টি সিলিন্ডার। কিন্তু আরও সিলিন্ডারের অভাবে ক্রমাগত বেড়ে চলা রোগীর কারণে অক্সিজেন মজুদ করা যাচ্ছে না।

প্রয়োজনীয় জনবলের চাহিদা প্রেরণ প্রসঙ্গে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুনির্দিষ্ট বিভাগে জনবল চেয়ে নিয়মিত চিঠি প্রেরণ করা হচ্ছে। জনবল পেলে রোগীর যথাযথ সেবা প্রদানে কোনো বাধা থাকবে না।