কিট সংকটে নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ পিসিআর ল্যাবে করোনা সংক্রমণ নিরূপণে নমুনা পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। আজ সোমবার ( ২২ জুন) ল্যাব ইনচার্জ অধ্যাপক ডাঃ ফজলে এলাহী জানান, কিটের অভাবে রবিবার থেকে ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। এর ফলে গত দুইদিন ধরে বন্ধ রয়েছে ফেনীর নমুনা পরীক্ষাও।

এতে করে সংক্রমণের ঝুঁকির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে বলে আশংকা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। একইসাথে নমুনা প্রদানকারী ব্যক্তিদের পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় বাড়ছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন তারা।

ডাঃ ফজলে এলাহী জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে প্রয়োজনীয় কিট সরবরাহ না করাতে এই বিপর্যয় ঘটেছে, এতে করে ব্যাহত হচ্ছে নমুনা পরীক্ষা। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বুধবার নাগাদ কিট নোয়াখালী পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি আরও জানান।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আবুল খায়ের মিয়াজী জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী যত বেশি টেস্ট করা যাবে, তত বেশি সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত করা যাবে। তাদের আইসোলেট করতে পারলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো যাবে।

ডাঃ ফজলে এলাহী জানান, ১১ মে হতে নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা শুরু হয়। এ পর্যন্ত সাড়ে ৭ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রতিমাসে বর্তমান সক্ষমতা অনুযায়ী প্রয়োজন ৮ হাজার কিট।

বিরাজমান এ অনিশ্চয়তা রোধে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগে কিট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আমরা আনঅফিসিয়ালি যোগাযোগ করেছি। অনুরোধ করেছি, দেশের অন্য কোনো ল্যাবে অতিরিক্ত কিট থাকলে সংগ্রহ করে আমাদের যেন দেয়। তিনি জানান, আজ কিট আসতে পারে, যদি আসে তাহলে আগামীকাল থেকে আবার পরীক্ষা সম্ভব হবে।

ফেনী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, ফেনীতে করোনা সংক্রমণ নিরূপণে এ পর্যন্ত সংগৃহীত মোট ৪ হাজার ৩৩৩টি নমুনার মধ্যে মধ্যে ৩ হাজার ২৭১টি নমুনার ফল পাওয়া গেছে। এখনো ১ হাজার ৬২টি নুমনার ফল পাওয়া যায় নি। কবে নাগাদ পাওয়া যাবে সেটিও অনিশ্চিত। করোনা পরীক্ষা বন্ধ, তাই ফেনীতেও নতুন করে কোন নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে না বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে নমুনা দিয়ে ফলাফলের অপেক্ষারত ব্যক্তিদের মাঝে বিরাজ করছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। ফেনী শহরের রামপুরের সওদাগর বাড়ির এক ব্যক্তি গত ১২জুন নমুনা দিয়েছিলেন। আজ পর্যন্ত তিনি ফলাফল পান নি। তিনি বলেন, ফলাফল না পাওয়ায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। নেগেটিভ বা পজিটিভ ফলাফল যাই আসুক সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারতাম। কবে ফলাফল পাবো সে ব্যাপারে কিছু জানি না। প্রতিদিনই উৎকণ্ঠার মধ্যে কাটছে।

এর আগে ফেনী হতে সংগৃহীত নমুনাগুলো চট্টগ্রাম বিআইটিআইডি ও ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা করা হত। কিন্তু এখানে আরও ছয় জেলার সংগৃহিত নমুনা পরীক্ষার কারনে ফলাফল জানতে সাত থেকে দশদিন সময় লেগে যেত। এতে সংক্রমণের আশংকা বেড়ে যাওয়ায় এবং নমুনা জটের কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ পিসিআর ল্যাবে ফেনীর নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। শুরুতে ফলাফল প্রাপ্তির বিড়ম্বনা ঘুচলেও ৪১দিনের মাথায় সেটি আবার থমকে গেছে।

তবে আজ ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী কিট পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, বর্তমানে বিশ্বের সব দেশেই কিটের চাহিদা রয়েছে। তবে যা মজুদ আছে তাতে ঘাটতি হওয়ার কথা না। কোনো কারণে সংকট তৈরি হলেও তা খুব দ্রুতই মেটানোর ব্যবস্থা সরকারের হাতে নেওয়া রয়েছে। কাজেই কিট নিয়ে এই মুহূর্তে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।’

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ প্রদত্ত তথ্যমতে, ফেনীতে এ পর্যন্ত ৬৫৩জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। আর করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় ১৪জনের মৃত্যু হয়েছে। আর উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর কোন সরকারি হিসেব নেই। ফেনীতে গত ১৬ এপ্রিল ১ম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়। শনাক্তের প্রথম মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩০জন। দ্বিতীয় মাসে এসে সংক্রমণের হার বেড়ে যায় প্রায় বিশগুণ।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আবুল খায়ের মিয়াজী জানান, গত ৬ এপ্রিল হতে ২১জুন পর্যন্ত ফেনী হাসপাতালে করোনা সন্দেহভাজন ১০৭০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৫০টির ফলাফল পেয়েছি আমরা, যার মধ্যে ১৮২টি পজিটিভ ছিল। বাকী ২২০টি নমুনার ফল এখনো আমরা পাইনি। তিনি বলেন, সোমবার পর্যন্ত আইসোশেলন ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত ১০৭জন রোগীর মধ্যে করোনা পজিটিভ রোগী রয়েছেন ৩৮ জন।