হাইপোক্সিয়া মানে শরীরের কোষে অক্সিজেন স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম। চিকিৎসকদের জন্য খুব পরিচিত হলেও সাধারণ মানুষের অনেকের জন্যই

এটি অপরিচিত- নতুন শব্দ। তবে করোনা পরিস্থিতিতে সবাই কমবেশী এই শব্দটার সাথে পরিচিত হয়ে গেছেন।

আমাদের শরীরে স্বাভাবিক ভাবে অক্সিজেন এর স্যাচুরেশান ৯৫% থেকে ১০০% এ ওঠানামা করে। এর নীচে নামলে বুঝতে হবে কোষে হাইপোক্সিয়া শুরু হচ্ছে।

৯০% এর নীচে থাকলে তখন confusional, Irritable state এ থাকে ব্রেইন।

৮০% থেকে ৭৫% এর নীচে স্যাচুরেশন নামলে অজ্ঞান হওয়ার অবস্থায় পৌছে যায়।

বেশিক্ষন কোষ হাইপোক্সিয়ায় থাকলে এক সময় মরে যায়।

ব্রেন এ ৫ মিনিট, হার্ট এ দশ মিনিট, পায়ে ৬ ঘন্টা অক্সিজেন না থাকলে মরে যায়।

কম থাকলে মরতে একটু সময় বেশি নেয়।

অবাক করার বিষয় হল, কোভিড আক্রান্ত রোগী সাধারণ জ্ব্রর নিয়ে বসে আছে, গল্প করছে বা মোবাইলে চ্যাট করছে কিন্তু এদিকে স্যাচুরেশান ৮০% হয়ে বসে আছে।

উনি জানেনও না এবং তাঁর ন্যুনতম খারাপ বোধ হচ্ছেনা।এদিকে নাকের আগা, কানের লতি নীল হয়ে আছে।

দীর্ঘক্ষন অক্সিজেন না পেয়ে হার্ট টা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

হাসপাতালে স্বাভাবিক আচরনের রোগীর শরীরে পালস অক্সিমিটার বসিয়ে প্রায়ই স্যাচুরেশান 80%, 70% পাওয়া যাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলে রোগী বলে তাঁর কোন অসুবিধা লাগছেনা। কিন্তু এর কিছু সময় পরে কি হতে চলেছে উনি নিজেও আন্দাজ করতে পারছেন না।

তাই জ্বর, গলা ব্যাথার রোগী একটা পালস অক্সিমিটার সাথে থাকলে ৪ ঘন্টা অন্তর একটু দেখে নিলে নিশ্চিত থাকা যায়।

সাধারন অবস্থায় মাপার দরকার নেই।

৯৪% এর নীচে আসলে আগেই সতর্ক হয়ে ডাক্তার এর দ্বারস্থ হওয়া যায়, বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া যায়।

হ্যাপি হাইপোক্সিয়া করোনা সংক্রমণের একটা অবাক করা বিষয়। শ্বাস নিতে পারছেন, কিন্তু সেই অক্সিজেন রক্তে পৌছাচ্ছেনা । তাই কোষ পাচ্ছেনা। আর বোঝাও যাচ্ছে না কোন উপসর্গ না হওয়ার কারনে।

এর কারন এখনো অস্পষ্ট।

তাই জ্বর, গলা ব্যাথার রোগীর একটা পালস অক্সিমিটার থাকা জরুরী।

কোভিড এর রিপোর্ট আসার আগেই করোনার উপসর্গ যুক্ত রোগী আংগুলে লাগিয়ে মাঝে মাঝে দেখলে সচেতন থাকা যায়।

বাসায় অনেকেই অক্সিজেন সিলিন্ডার ( যার অক্সিজেন শেষ হলে পুনরায় রিফিল করতে হয়) / অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর(যা বাতাস থেকে সরাসরি অক্সিজেন উৎপাদন করে) রাখছেন বর্তমান পরিস্থিতিতে। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৩% এর কম হলে অক্সিজেন শুরু করা এবং হাস্পাতালে ভর্তি হওয়ার উদ্যোগ নেয়া আবশ্যক। যেহেতু বিশেষ করে ঢাকায় হাস্পাতালে সিট পাওয়া দুরুহ ব্যাপার তাই হাস্পাতালে সিট খোজার সময় অক্সিজেন সিলিন্ডার গাড়ীতে সাথে রাখা উচিৎ। হাস্পাতালে একান্তই সিট না পাওয়া গেলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মতো রোগের একটা পর্যায় পর্যন্ত বাসায় অক্সিজেন ও আনুষঙ্গিক ওষুধ সহ চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে তবে এটা অবশ্যই গুরুতর রোগীর ক্ষেত্রে হাস্পাতালে ভর্তির বিকল্প নয়।
মহান আল্লাহতালা সবাইকে হেফাজত করুন।

 

লেখকঃ

অধ্যাপক ডাঃ সাহেদুল ইসলাম কাওসার

সভাপতি, বিএমএ ফেনী

রেস্পেরেটরী মেডিসিন বিভাগ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ।