গতকাল রাতেও স্ত্রীর সাথে কথা হয়েছিল মামুন উদ্দিনের। নিয়েছিলেন সবার খোঁজখবর। ঘরে প্যারালাইজড মার জন্য চিন্তিত ছিলেন তিনি। প্রিয় মেয়েকে বুকে জড়িয়ে আদর করার ইচ্ছে হয়েছিল খুব। কিন্তু আজ সেই দৃশ্যপট বেদনা বিধুর। অধীর আগ্রহে তার ঘরে ফেরার প্রতীক্ষা করছিলেন সকলে। মামুন আজ ঘরে ফিরলেন, জীবিত নয়, মৃত। মা নুরুন নাহার, বোন ও তার স্ত্রী শামসুন নাহার লুবন দেখলেন প্রিয় মানুষটির মুখ, সে মুখ নিষ্প্রাণ, কোন ভাষা নেই। সে মুখ আর কখনো দেখা হবে না কারো। তাদের বুকফাটা আর্তনাদে মামুন নিলেন চিরপ্রস্থান।


কথাগুলো বলছিলেন করোনা ভাইরাস উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) বিভাগে দায়িত্বরত মোঃ মামুন উদ্দিনের দাফন কার্যে অংশ নেয়া দলের প্রধান পরশুরাম উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ইয়াছিন শরীফ মজুমদার।


তিনি বলেন, আজ সোমবার বিকালে দ্বিতীয় নামাযে জানাযা শেষে পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।


এসময় পরশুরাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শওকত হোসেন, থানার এসআই জালাল উদ্দিন মরহুমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ মাহাবুবর রহমান বিপিএম, পিপিএম তার মৃত্যুতে গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেছেন করেছেন বলেন জানান সিএমপির সদস্য ইব্রাহিম খলিল। দাফন শেষে পুলিশ কমিশনার মোঃ মাহাবুবর রহমানের পক্ষ হতে মামুনের পরিবারের হাতে ১ লাখ টাকা তুলে দেন তিনি। এছাড়া দাফনের জন্য আরও ২৫ হাজার দিয়েছেন বলেন জানান ইব্রাহিম খলিল।


দাফনকার্যে আরও অংশ নেন মুহাম্মাদ আলাউদ্দিন, মনসুর আহাম্মদ, মোঃ জহিরুল ইসলাম হৃদয়, এনামুল করিম আজাদ, আবুল কালাম।


আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে করোনা উপসর্গ নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সিএমপির এ পুলিশ সদস্য। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ২৮ বছর। গত ২৯ মে হতে তিনি জ্বরসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।


আজ বাদ যোহর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় পুলিশ কমিশনারসহ সিএমপি'র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ অংশ নেন। এসময় তার মরদেহের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে গার্ড অব অনার প্রদর্শন করা হয়। পরে সিএমপির ব্যবস্থাপনায় তার লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়।


মামুন ২০১২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। মুক্তিযোদ্ধা মৃত আবু তাহেরের চার সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। তার সানজিদা তাবাসসুম মিম নামে দুবছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে। মাত্র তিন বছর আগে একই গ্রামের শামসুন নাহার লুবনাকে বিয়ে করেন তিনি। তার বড় ভাইও মারা গেছেন।


অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য মুক্তিযোদ্ধা বাবার পথ ধরে দেশ ও দশের সেবা করার বাসনা নিয়ে পুলিশ বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে চাকরী করার পর আজ তার সব স্বপ্ন, আকাঙ্খা মৃত্যুর কাছে হেরে গেল।