মরুভূমির পঙ্গপাল (Desert locust)-


পঙ্গপাল মূলত এক ধরনের পতঙ্গ।
জীবন চক্র - তিনটি স্টেজ- ডিম, নিম্ফ এবং বয়স্ক।
স্পেসিসঃ১১ টির মত পৃথিবীতে দৃশ্যমান। সকল প্রজাতিই ক্ষতি করে তবে মরুভূমি পঙ্গপাল ঝাঁকে ঝাঁকে দ্রুত উড়ে যাওয়ার দক্ষতার কারণে পঙ্গপালের প্রজাতি গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক। এটির প্রতি বছরে দুই থেকে পাঁচ প্রজন্ম রয়েছে।
তিনটি ফেজ- Solitary, gregarious and transient.


Solitary phase এ সর্ট উইং থাকে ও তখন এদের রং থাকে সবুজ। এসময় এরা উড়তে পারে না, লাফ দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়। আশে পাশের গাছের পাতা খায়। Solitary phase থেকে gregarious phase যেতে যেতে Morphological পরিবর্তন হয়ে উইং long হয়। সেই সাথে কালারও পরিবর্তন হয়ে হলুদ বা লালচে রং হয়। এ অবস্থায় এরা দল/ ঝাঁক (swarm) বেধে দূর দূরান্তে খাবারের জন্য যায়। দ্রুত গতিতে উড়তে পারে। এসময় মারাত্মক ভাবে ফসল সহ অন্যান্য গাছের পাতা খেয়ে ক্ষতি করে এবং গাছ পত্র শূন্য করে ফেলে। দেখতে অনেকটা ঘাসফড়িংয়ের মতো। এরা সাধারণত একাই থাকে, কিন্তু জীবনচক্রের বিশেষ একটা সময় এসব পতঙ্গ ঝাঁক বাধে এবং ছড়িয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। লাখ লাখ পতঙ্গ মিলে তৈরি হওয়া এই ঝাঁক ক্ষতি করে ফসলের।

একটি পূর্ণ বয়স্ক পঙ্গপাল ওজনের সমপরিমাণ খায়। একটি ঝাঁকে ১৫০ মিলিয়ন Desert locust থাকে ও এক দিনে ১৫০ বর্গ কিলোমিটার উড়তে পারে। একটি বড় পঙ্গপাল ১২০ মাইল জমির ফসল খেতে পারে।

আমাদের দেশে যে ঘাস ফড়িং/Grasshopper দেখা যায় এরা Solitary phase (সবুজ রং) থাকে। gregarious phase এ যেতে পারেনা ও কালারও পরিবর্তন হয়না। এরা ঝাঁক তৈরী করতে পারেনা।

Desert locust এর বংশবৃদ্ধির সময় এপ্রিল মাস, এ কারণে এসময় তারা একত্রিত হয়। কৃষিবিজ্ঞানীদের মতে, ১০ লাখ পঙ্গপালের একটি ঝাঁক একদিনে ৩৫ হাজার মানুষের খাবার খেয়ে ফেলতে পারে।পঙ্গপালের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বাতাসের উষ্ণতার গতি অনুযায়ী এরা চলাফেরা করে এবং এক জায়গার খাবার ফুরালেই নতুন জায়গার খোঁজ করে তারা। সে কারণে কৃষি অধিদপ্তরের আশংকা বাংলাদেশেও আক্রমণ হতে পারে পঙ্গপালের।

কৃষক পর্যায়ে সণাক্তকরণ-


১) ঘাসফড়িং জাতিয় পোকা আলাদাভাবে থাকলে তেমন ক্ষতি করেনা। কিন্তু ৫০-১০০ টি পঙ্গপালের মত পোকা দলবদ্ধভাবে দেখা গেলেই ক্লোরপাইরিফস ৪৮ইসি ও সাইপারমেথ্রিন ১০ইসি ২মিলি+২মিলি একসাথে প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করবেন, ২-৫ মিনিটেই মারা যাবে।

২) হাত জাল দিয়ে পোকা ধরে গরম পানিতে ডুবিয়ে মেরে হাঁস/ মুরগীর খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

৩) অনেক দেশ পাতি হাঁস ব্যবহার করেছে পঙ্গপাল দমনে। একটি হাঁস ২০০টির মত পোকা খেতে পারে।

বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীগন প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত করেন টেকনাফ সদর ইউনিয়নের উত্তর লম্বরী গ্রামে যে পোকা দেখা গিয়েছে এটি ভয়ঙ্কর মরুভূমির পঙ্গপাল (Desert locust) এর কোন প্রজাতি নয় এবং এটির দ্বারা ব্যাপক ফসলহানির কোন সম্ভাবনা নেই। এটি বাংলাদেশে বহু আগে থেকেই বসবাস করা একটি ঘাস ফড়িং (Grasshopper) এর একটি প্রজাতি যার বৈজ্ঞানিক নাম Aularches miliaris। যেটি Orthoptera গোত্রের Pyrgomorphidae পরিবারভুক্ত ঘাসফড়িং এর একটি প্রজাতি যা এখনও Nymph পর্যায়ে রয়েছে। স্হানীয় কৃষকগন এটিকে "বার্মাচান্ডালি" নামে ডেকে থাকেন।

বিশেষজ্ঞগণ আতঙ্কিত না হওয়ার এবং আতঙ্ক না ছড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন। উপজেলার যেকোন প্রান্তে পোকার দেখা মিললেই উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কৃষকের সেবায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সবসময় কৃষকের পাশে ছিলো, আছে এবং থাকবে।

কৃষিই সমৃদ্ধি

 

লেখিকাঃ কৃষি কর্মকর্তা

ফেনী সদর উপজেলা।