ভালো নেই ফেনীর দুগ্ধ খামারিরা। করোনাকালে ভোক্তার চাহিদা কমে প্রায় শূণ্যের কাছাকাছি। এর সাথে যোগ হয়েছে গো খাদ্যের উর্ধ্বমুখি দাম। এমন একটি পরিস্থিতিতে ক্ষতি মেনে নিয়ে টিকে থাকা বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন ফেনীর উদ্যোক্তারা।


জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, ফেনীতে ছোট-বড় ডেইরী ফার্ম রয়েছে ৬২২টি। জেলায় গরুর দুধের চাহিদা ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টন। উৎপাদন হয় ১ লক্ষ ২৩ হাজার টন।


তিনি বলেন, চাহিদা অনুপাতে যোগানের পুরোটাই জেলা থেকে উৎপাদিত হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানি পাস্তুরিত দুধ সরবরাহ করে ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ ফেনী ছিল।


নাছির উদ্দিন অপু সোনাগাজীতে একজন বড় খামারী। বৃহত্তর নোয়াখালীতে পাঁচবার শ্রেষ্ঠ হয়েছে তার প্রতিষ্ঠান ইত্তেফাক ডেইরী খামার। খামার বাড়ি দুগ্ধ উৎপাদনকারি সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।


গো খাদ্যের উচ্চমূল্য, দুধের দাম পড়তি, তীব্র ক্রেতার সংকট, প্রয়োজনমত প্রাণি চিকিৎসকের সহযোগিতা না পাওয়া এ সময়ের বড় বিপত্তি চিহ্নিত করেন তিনি। তিনি বলেন, ৫৫-৬০ টাকা লিটার এখন ৩৫ টাকায় ঠেকেছে। চাহিদা এতটাই কমেছে, এখন ফেরী করে দুধ বিক্রয় করতে হচ্ছে।


তিনি জানান, দই, মিষ্টি উৎপাদন বন্ধ হওয়াতে দুধের চাহিদা আশংকাজনক হারে কমে গেছে।


মডার্ণ এগ্রো ফার্মের মালিক কামরুল আলম বলেন, টিকে থাকার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ খাদ্যের অতি উচ্চমূল্য। আটার চেয়ে ভুষির মূল্য এখন বেশী। আমাদের অনেক খামারী সারাবছর মিষ্টির দোকানে দুধ সরবরাহ করতেন যারা এখন বিক্রয়ের সুযোগও পাচ্ছেন না।


দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান স্টারলাইন গ্রুপের পরিচালক মোঃ মাইন উদ্দিন বলেন, আমাদের ফুড সেক্টরে বছরে গরুর দুধ প্রয়োজন হয় ৫৮৪ টন। চলমান অচলাবস্থায় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন হ্রাসের হার তুলে ধরে তিনি বলেন, পূর্বে প্রতিদিন ১ হাজার ৬শ লিটার দুধের প্রয়োজন হত এখন তা ১শ লিটারে ঠেকেছে।


গো খাদ্যের অন্যতম উপাদান ভুষির দাম বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে মাইন উদ্দিন বলেন, আমরাও এ উপাদানটি উৎপাদন, আমদানি ও বাজারে সরবরাহ করে থাকি। করোনা পরিস্থিতিতে অনিয়মিত আমদানি, ঘাটে দিনমজুরের সংকট, পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির ফলে ভুষির দামও বেড়ে গেছে।


ফজলে ইমাম রকি নামে একজন পারিবারিক দুধের ভোক্তা জানান, আগে প্রতিদিন ১ লিটার করে দুধ পরিবারের জন্য কিনতাম। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাই সংকটে আছে। তাই আগের তুলনায় অর্ধেক দুধ কিনছি।


সোনাগাজী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, কমপক্ষে তিনটি গাভী নিয়ে খামার হলে তাকে স্মল স্কেল ডেইরী খামার বলা হয়। সোনাগাজীতে ছোট বড় মিলে ৮০টি দুগ্ধ খামার রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তীব্র আর্থিক ক্ষতির মুখে খামারিরা নিয়মিত ফেন দিচ্ছে। আমরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছি কি করে কম খরচে গরু বাঁচিয়ে রাখতে হবে।