চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার এখন পর্যন্ত একমাত্র পরীক্ষাগার ফৌজদারহাটের ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) করোনা শনাক্তে কিট এসেছে মোট ৪ ক্যাটাগরির। এর মধ্যে ৫৫০টি র‌্যাপিড টেস্টিং কিটও রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন পর্যায়ে আমদানি করা এসব র‌্যাপিড টেস্ট কিটের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এর মধ্যেই।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, র‌্যাপিড টেস্টের এসব কিটে পরীক্ষা করালে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ভুল ফলাফল আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এসব কিট ব্যবহার করা হবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। র‌্যাপিড টেস্টিং কিটগুলো পাওয়ার পর এগুলো দিয়ে টেস্ট করে পজেটিভ আসলে আবার অন্য কিট দিয়ে টেস্ট করার কথা জানালেও এখন পর্যন্ত এই কিটগুলো ব্যবহার করা হয়নি বলেই জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী।


বিআইটিআইডি কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, এসব কিট ব্যবহার না করারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।


বিআইটিআইডির ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ সোমবার (১৩ এপ্রিল) বলেন, আমি এখন পর্যন্ত ১ হাজার কিট পেয়েছি। এর মধ্যে প্রথম ১০০ কিট আমরা ফ্রান্সের একটি দাতব্য সংস্থা থেকে সংগ্রহ করেছি, ওগুলো অত্যন্ত ভাল মানের। এরপর ঢাকার আইইডিসিআর আমাদের আরও ১০০ কিট দেয়। সেগুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাপ্লাই করা। সেগুলোও ভাল মানের।


তিনি বলেন, বাকি ৮০০ কিট হচ্ছে চাইনিজ কিট। সেসব নিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে কমপ্লেইন উঠছে। তবে আমার যেহেতু অনেকগুলো এক্সপেরিয়েন্স আছে কাজ করার, আমার জন্য এই কিটগুলো ব্যবহার করে ইভ্যালুয়েশন করা খুব কঠিন হচ্ছে না। এর বাইরে আরও ৫০টি র‌্যাপিড টেস্টিং কিট আছে। যেগুলো ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। কিটগুলো ব্যবহারে সরকার থেকে কোন গাইডলাইন নেই।


ডা. শাকিল বলেন, আমরা শুধুমাত্র পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) পদ্ধতিতে টেস্ট করছি। র‌্যাপিড টেস্ট করছিই না আমরা। কাজে এটা নিয়ে খুব বেশি কিছু বলার নেই।


বর্তমানে বিআইটিআইডিতে কী পরিমাণ কিট অবশিষ্ট আছে এই প্রশ্নের জবাবে ডা. শাকিল বলেন, ‘আমার হাতে আর ৪০০ এর মত কিট আছে। এগুলো দিয়ে আরও ৩৫০ এর মত টেস্ট করা যাবে।’


বিআইটিআইডিতে গত কয়েকদিন ধরেই গড়ে শতাধিক নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। কাজেই এই কিট দিয়ে আর বড়জোর ৪ দিন পরীক্ষা চালিয়ে নেওয়া যাবে। এই সময়ের মধ্যে আরও কিট আসবে কিনা এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইটিআইডির পরিচালক ডা. এম এম হাসান বলেন, ‘আমরা আজকেও আইইডিসিআরের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করেছি, জানিয়েছি কিটের বিষয়ে। উনারা ২-১ দিনের মধ্যেই পাঠিয়ে দিবেন বলেছেন। কিট নিয়ে কোন সমস্যা হবে না।’


সুনির্দিষ্টভাবে কিছু না বললেও একই আশাবাদের কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবিরও। কিট নিয়ে কোন রকম সংকট হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন তিনিও।


প্রসঙ্গত করোনা ভাইরাস শনাক্ত করতে পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ পর্যন্ত ৯২ হাজার পিসিআর কিট সংগ্রহ করে ২১ হাজার কিট বিভিন্ন হাসপাতাল ও পরীক্ষাগারে বিতরণ করেছে। তবে এর বাইরেও চীন থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে র‌্যাপিড টেস্ট কিট এনে হাসপাতালে বিতরণ করেছেন অনেকে, যেসব কিট দেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদিত নয়।


সম্প্রতি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমও চীন থেকে ৫০ হাজার র‌্যাপিড টেস্ট আমদানি করিয়েছেন। সেখান থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৫০টি কিট সংগ্রহ করে বিআইটিআইডিতে দিয়েছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী বিপ্লব বড়ুয়াও ৫০০ র‌্যাপিড টেস্টিং কিট পাঠিয়েছিলেন চট্টগ্রামের বিআইটিআইডিতে। তবে অনুমোদনহীন এসব কিট ব্যবহার না করারই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বিআইটিআইডি কর্তৃপক্ষ।


সূত্রঃ চট্টগ্রাম প্রতিদিনি