নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এর পরিচালক জালাল সাইফুর রহমানের মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সেহ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তিনি ফেনীর সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।


তার মৃত্যুর খবরে ফেনী জেলা প্রশাসন, সহকর্মী ও প্রশাসন ক্যাডারে শোকের ছায়া নেমে আসে।


জালাল সাইফুর রহমান গত আট দিন ধরে রাজধানীর কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সোমবার (৬ এপ্রিল) সকালে সেখানে তার মৃত্যু হয় বলে হাসপাতালের সমন্বয়ক ডা. শিহাব উদ্দিন জানান।


গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘রাত সোয়া ২টার দিকে তার প্রেসার নেমে আসে। আমাদের দিক থেকে সব ধরনের চেষ্টা করা হয়েছে। আনফরচুনেটলি তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। সাড়ে ৭টায় মারা যান তিনি।’


২২তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ওই কর্মকর্তা ২০১৬ সাল থেকে দুদকে প্রেষণে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।


এক শোকবার্তায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, “তিনি ছিলেন একজন সৎ, দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তা। তিনি ছিলেন দেশ ও জনগণের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। তার মৃত্যুতে দেশ একজন মেধাবী কর্মকর্তাকে হারাল।”


জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুনও ওই দুদক কর্মকর্তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের ফেইসবুক পেইজেও শোক প্রকাশ করে বার্তা দেওয়া হয়েছে।


শোকবার্তায় লিখা হয়েছে, জালাল সাইফুর রহমান সরকারের একজন দক্ষ, সৎ এবং খুবই পরিশ্রমী কর্মকর্তা ছিলেন। মহান আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসীব করুন।

ফেনীর কৃতি সন্তান ও মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে দায়িত্বরত উপসচিব মোহাম্মদ সাজ্জাদ উল হাসান বলেন, আমরা একই ব্যাচে চাকুরীতে যোগ দিয়েছি। তার মত এত আন্তরিক মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। এমন কোনো গুণ নেই যা তার মধ্যে ছিল না। তার সততা, কর্মনিষ্ঠা, পরিশ্রম চেনা জানা সবাইকে মুগ্ধ করত।


তিনি বলেন, আমরা একসাথে খুলনায় প্রথম যোগদান করি। এরপর ও যশোর, আমি ছিলাম নড়াইল। ২০০৪ সালে দুজন একসাথে পিএটিসিতে ট্রেনিং করি। আমি যখন লক্ষীপুরে এডিসি, সে তখন ফেনীর এডিসি। ফেনীতে এসেও সে ফেনীর মানুষের মন জয় করে গেছে। ওর চলে যাওয়া আমাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দিয়েছে, আমি অনেক কিছু হারিয়েছি।


ফেনীর সাবেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শ্যামল চন্দ্র বসাক তার ফেইসবুকে লেখেন, প্রশাসন ক্যাডারে সদ্য যোগদানকৃত একজন নবীন কর্মকর্তার নিকট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তার পিতৃ সমতুল্য। স্যারের হাত ধরেই শুরু হয়েছিলো এই পথচলা। শিখিয়েছিলেন, ব্যাক্তিত্ব আর দায়িত্বের মিশ্রন ঘটিয়ে কিভাবে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। শিখিয়েছিলেন, সততা আর নিষ্ঠা কিভাবে ত্বরান্বিত করে সাহস আর আত্মবিশ্বাসকে এবং সাধারণ থেকেও কিভাবে অসাধারণ হওয়া যায়। একজন অনুজ সহকর্মী হিসেবে আমি শুধু জানি আপনি এমন একজন মানুষ ছিলেন যিনি মনের অজান্তেই হৃদয়ে স্থান পেয়ে যান।


আরেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা লিখেন, তিনি ফেনীতে এডিসি হিসেবে কাজ করেছেন এবং আমি ওনার সাথে ডিসি অফিসে কাজ করেছি। এটি বেশ শোকের খবর। দুঃখজনক ও ভয়ের খবর।


কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, করোনাভাইরাস পজেটিভ আসায় গত ৩০ মার্চ ওই দুদক কর্মকর্তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে নেওয়া হয়েছিল নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে।


ওই দুদক কর্মকর্তা স্ত্রী, এক ছেলে রেখে গেছেন। তার পরিবারের সদস্যরা বাসাতেই আছেন বলে ওই হাসপাতাল কর্মকর্তারা জানান।


দুদকের একজন কর্মকর্তা জানান, সর্বশেষ গত ২৪ মার্চ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অফিস করেন করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া ওই পরিচালক।
“ওই কর্মকর্তার কাছাকাছি থেকে কাজ করেছেন এমন ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন।”


দুদকের এই কর্মকর্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেওয়ার আগে তিনি ১৭তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে কাজ করেন।